খন্দ বাইপাসে তাপ্পির প্রসাধন

খন্দে ভরা রাস্তা টানা বৃষ্টিতে আরও ভাঙাচোরা। সঙ্গে মেট্রোর কাজের জন্য কেটে রাখা মাটি কাদা হয়ে আরও পিছল। বৃষ্টিতে এমনিতেই শ্লথ হয়ে যাওয়া যানবাহন তাই রোজই থমকে থাকছে দীর্ঘ যানজটে। বর্ষা পড়তে না পড়েই এমনই হালে ইএম বাইপাস। এবং প্রাণ হাতে যাতায়াতের পাশাপাশি ঘণ্টার পর ঘণ্টা শম্বুক গতির যান চলাচলে নাকাল যাত্রীরা। পরিস্থিতি সামলাতে বৃহস্পতিবার সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেখানেই ঠিক হয়েছে, আপাতত তাপ্পি দিয়ে মেরামত হবে বাইপাস। তা ক’দিন টিকবে, তা নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে এলাকায়।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌভিক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০০:২৮
Share:

এসআরএফটিআই মোড়।

খন্দে ভরা রাস্তা টানা বৃষ্টিতে আরও ভাঙাচোরা। সঙ্গে মেট্রোর কাজের জন্য কেটে রাখা মাটি কাদা হয়ে আরও পিছল। বৃষ্টিতে এমনিতেই শ্লথ হয়ে যাওয়া যানবাহন তাই রোজই থমকে থাকছে দীর্ঘ যানজটে। বর্ষা পড়তে না পড়েই এমনই হালে ইএম বাইপাস। এবং প্রাণ হাতে যাতায়াতের পাশাপাশি ঘণ্টার পর ঘণ্টা শম্বুক গতির যান চলাচলে নাকাল যাত্রীরা। পরিস্থিতি সামলাতে বৃহস্পতিবার সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেখানেই ঠিক হয়েছে, আপাতত তাপ্পি দিয়ে মেরামত হবে বাইপাস। তা ক’দিন টিকবে, তা নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে এলাকায়।

Advertisement

অভিষিক্তা মোড়, দুপুর আড়াইটে। যত দূর চোখ যায় ঢেউখেলানো রাস্তা আর বড় বড় গর্ত। জমা জলের উপর দিয়ে ঝাঁকুনি খেতে খেতে ধীর গতিতে চলছে যানবাহন। সিগন্যালের তোয়াক্কা না করে প্রাণ হাতে পারাপার করছেন পথচারীরা। গর্তে পড়ে একটি বাস থমকে যেতেই সজোরে ব্রেক কষল পিছনের গাড়ি। একটুর জন্য এড়ানো গেল দুর্ঘটনা।

এসআরএফটিআই-এর সামনে, বিকেল ৪টে। মেট্রোর কাজের জন্য এমনিতেই গাড়ি চলাচলের রাস্তা কয়েক হাত। তার মধ্যেই মাটি কেটে ডাঁই করে রাখা রাস্তার পাশে। বৃষ্টির জলে মাটি ধুয়ে চলে এসেছে রাস্তায়। কাদায় ভয়ানক পিছল, ভাঙাচোরা রাস্তা ধরে এগোতে গিয়ে পড়তে পড়তেও সামলে নিলেন এক মোটরবাইক আরোহী।

Advertisement

রুবি হাসপাতাল থেকে পাটুলি পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তার ছবিটা এ রকমই। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, ১৫ মিনিটের পথ পেরোতে রোজই লেগে যাচ্ছে ১ ঘণ্টার কাছাকাছি। কখনও বা তারও বেশি। সকাল থেকে রাত সর্বক্ষণই নাজেহাল হচ্ছেন যাত্রীরা। এলআইসি-র কর্মী রানা সাহা জানান, অসুস্থ আত্মীয়কে নিয়ে গড়িয়া থেকে রুবি অবধি পৌঁছতে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায় তাঁর। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, গত মঙ্গল এবং বুধবার সকাল ৮টা থেকে প্রায় দুপুর ২টো পর্যন্ত যানজটে অবরুদ্ধ ছিল গোটা বাইপাস।

সেই সঙ্গেই লেগে রয়েছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। মোটরবাইকে পিৎজা ডেলিভারি করেন সুমন মণ্ডল। ইতিমধ্যেই তিন-তিন বার দুর্ঘটনায় পড়েছেন তিনি। অভিযিক্তা মোড়ের রোলের দোকানদার রাজকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘রোজই গাড়িতে-গাড়িতে ঠোকাঠুকি লাগছে।’’

এই পরিস্থিতিতেই বৃহস্পতিবারের বৈঠক। পুরমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেখানে ঠিক হয়েছে, অভিষিক্তার কাছে কিছুটা অংশ সারাবে কেএমডিএ। বাকি দু’জায়গায় রাস্তা সারাবে আরভিএনএল। ওই রাত থেকেই শুরু হয়েছে কাজ। কিছু কিছু এলাকায় গর্তে পাথর ফেলা হয়েছে।

তবে তাপ্পি দিয়ে মেরামতি কত দিন অটুট থাকবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। তাঁদের বক্তব্য, পাথরকুচি সিমেন্টে মাখিয়ে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে গর্তে। কিন্তু এই বর্ষায় সেখানে জল জমে যাবেই। ভারী গাড়ির চাকায় উঠে যাবে পাথরকুচি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগেও এ ভাবে রাস্তা সারানো হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই বাইপাস ফেরে পুরনো চেহারায়। তবে ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, বর্ষা না কমলে কোনও ভাবেই ঠিক মতো রাস্তা মেরামত করা সম্ভব নয়।

বাইপাসের অভিষিক্তা, মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি এবং এসআরএফটিআই-এর সামনে মেট্রোর স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। মেট্রোর তরফে ওই কাজ করছে রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)। তাই রুবি থেকে পাটুলি পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার জুড়ে মূল রাস্তার কিছু অংশ আটকে পাশ দিয়ে সাময়িক ভাবে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যানবাহন। সেই পথে এত বড় বড় গর্ত যে, তার উপর দিয়ে গাড়ি চালানো প্রায় অসম্ভব। বাইপাসের বাকি অংশেরও অবস্থাও শোচনীয়। রাস্তা মেরামত কে করবে, তা নিয়ে বহু দিন ধরেই চলছিল চাপানউতোর। ট্রাফিক পুলিশের দাবি, বার বার জানানো সত্ত্বেও কোনও দফতরই বিষয়টিতে গা করেনি। শেষমেশ পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী নিজেই উদ্যোগী হন।

আরভিএনএল-এর কর্তারা জানান, স্টেশনের কাজ হবে বলে কেএমডিএ-ই নতুন ওই রাস্তা তৈরি করেছে। এখন তা খারাপ হয়ে যাওয়ায় আরভিএনএলকে দায়ী করা হচ্ছে। এতে তাঁদের কোনও দায় নেই। যদিও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, রাস্তার যে সব অংশে মেট্রোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে অথচ এখনও আটকে রাখা, সেখানে জল জমে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তা। কাজের জন্য রাস্তা ঘুরিয়ে দেওয়াতেও ক্ষতি হয়েছে। বৈঠকের পরে জমা জল সরানো এবং ব্যারিকেড খোলার কাজ দ্রুত করতে রাজি হয়েছে আরভিএনএল। বেশ কয়েকটি সার্ভিস রোড ও স্টেশনের একটি এলাকা মেরামত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা। শুক্রবার মন্ত্রী বলেন, ‘‘রাস্তা মেরামতির খাতে খরচের ক্ষেত্রে আরভিএনএল কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমরাও সাধ্যমতো সহযোগিতা করব।’’

ছবি: সুমন বল্লভ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন