নিকাশি আর রাস্তার কাজে তালা, বিপাকে কাউন্সিলরেরা

পরিবেশ আদালতের রায়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্লান্টে হটমিক্স (রাস্তা তৈরির উপাদান) তৈরির কাজ। যার অভাবে কলকাতার রাস্তা সারাই ও তৈরির কাজ প্রায় বন্ধ।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৯
Share:

ফাইল চিত্র।

কোনও প্রকল্পের খরচ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে যে সরকারি শিডিউল মেনে পুরসভাকে কাজ করতে হয়, তা বদলানো হচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরনো শিডিউল বাতিল করে তৈরি করা হচ্ছে নতুন শিডিউল। আর এই জটেই শহর জুড়ে দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে নিকাশি সংক্রান্ত বহু প্রকল্পের কাজ।

Advertisement

এক দিকে, পরিবেশ আদালতের রায়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্লান্টে হটমিক্স (রাস্তা তৈরির উপাদান) তৈরির কাজ। যার অভাবে কলকাতার রাস্তা সারাই ও তৈরির কাজ প্রায় বন্ধ। সঙ্গে রয়েছে নিকাশি নালার কাজ বন্ধের ঘটনা। আপাতত এই ‘দোফলা’য় বিপর্যস্ত পুর প্রশাসন। সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন সেই সব কাউন্সিলরেরা, যাঁদের ওয়ার্ডে নিকাশির কাজ কয়েক মাস ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাঁদের চিন্তা, আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে রাস্তা ও নিকাশির সমাধান না হলে দলকেই হয়তো তার খেসারত দিতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁরা বারবার ছুটছেন পুরসভার প্রশাসক ও ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে।

গত মার্চে পুর বাজেটের পর থেকেই নিকাশির কাজে ছেদ পড়েছে। ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের কথায়, ‘‘ভাগ্যিস, শাসকদলের কাউন্সিলরদের সংখ্যা বেশি। তাই এত বড় সমস্যা গিলে নিচ্ছেন তাঁরা।’’ বাম কাউন্সিলরেরা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। যদিও তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিষয়টি আরও জটিল হবে কি না, সেই আশঙ্কাও রয়েছে অনেকেরই।

Advertisement

সরাসরি পুরবোর্ডে বিষয়টি না তুললেও ১, ২, ৩, ৭, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ নম্বর বরোর জনপ্রতিনিধি ও ইঞ্জিনিয়ারেরা সমস্যাটি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ওই সমস্ত বরোর একাধিক চেয়ারম্যানের বক্তব্য, নিকাশি নালার ৬ ইঞ্চি থেকে ৯ ইঞ্চি পাইপ বসানোর কাজে ততটা সমস্যা হয়নি। তবে ১২ ইঞ্চির উপরের পাইপ, যা মূলত বস্তি ও ঘনবসতি এলাকায় রয়েছে, তার কাজ প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ।

কলকাতা পুরসভার নিকাশির দায়িত্বে রয়েছেন মেয়র পারিষদ তারক সিংহ। তিনি ওই সমস্যা প্রসঙ্গে জানান, পুরসভা পূর্ত দফতরের শিডিউল মেনে কাজ করত। সেই শিডিউল ২০০৭ সালের। তাতে নিকাশিতে ব্যবহৃত পাইপের দর নিয়ে কিছু উল্লেখ করা ছিল না। ‌সেটি নির্ধারিত হত পুরসভার নিজস্ব দর অনুযায়ী। পুরসভা সূত্রের খবর, জিএসটি চালুর পরে সেই পদ্ধতি বদলানোর নির্দেশ আসে সরকারের পক্ষ থেকে। তখনই নতুন শিডিউল তৈরির কথা ওঠে। গত এপ্রিলের পরে সেই কাজ শুরু হলেও তা তৈরি করতে অনেক দেরি হয়। তারকবাবুর কথায়, ‘‘নিকাশির কাজ সময়ে করতে না পারার পিছনে এটা একটা কারণ।’’ গোটা শহরেই নিকাশির কাজ কমবেশি বিঘ্নিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

এত দেরির কারণ কী? তারকবাবুর বক্তব্য, ‘‘নতুন যে শিডিউল তৈরি হয়েছিল, তাতে দেখা যায়, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তাই পুরসভার তরফে আপত্তি জানানো হয়।’’ তিনি জানান, রাজ্য সরকার তা নিয়ে কমিটিও গঠন করে। তার মাথায় ছিলেন কেএমডিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার। ওই শিডিউল তৈরি হওয়ার পরে কম্পিউটারে ঢোকাতে গিয়ে ত্রুটি ধরা পড়ে। তা সংশোধন করতে আরও সময় লাগে। পুরসভা সূত্রে খবর, বুধবার পর্যন্ত পুরসভার কম্পিউটার সিস্টেমে (ইআরএস) ওই শিডিউল আপলোড করা হয়নি। দু’-এক দিনেই তা হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেন তারকবাবু।

আপলোড হয়ে গেলেই কাজ শুরু হবে কি? তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। তারকবাবু বলেন, ‘‘নভেম্বরে শিডিউল হচ্ছে। এর পরে ফাইল তৈরি, বিভিন্ন দফতরে তা পাঠানো, পুর কমিশনার, মেয়র, মেয়র পারিষদের টেবিল ঘুরে আরও কিছু কাজ বাকি থাকবে। তার পরে টেন্ডার। সব মিলিয়ে কয়েক মাসের ধাক্কা।’’ তার পরে লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে কাজ। অর্থাৎ, চলতি আর্থিক বছর কাবার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। আর নতুন বছর চলে এলে পুরনো বাজেটের খরচও বন্ধ। অর্থাৎ, রাস্তা ও নিকাশি— দু’টো কাজই শিকেয় কি না, সেই দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত বহু কাউন্সিলরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন