চলছে গর্ত সারাইয়ের কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উড়ালপুলে ওঠার মুখে তৈরি হয়েছিল এক মিটার ব্যাসের গোলাকৃতি একটি ফাটল। সেই ফাটলের উপরে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট উঠে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল লোহার কাঠামো। এই ঘটনার প্রায় দু’বছর পরে হাত পড়ল ওই ফাটল সারাইয়ের কাজে। ওই প্রকল্পে নিযুক্ত ইঞ্জিনিয়ারদের ভাবাচ্ছে অন্য কিছু প্রশ্ন। শুধু ওই অংশের ফাটল সারালেই কি হবে? নাকি গোটা উড়ালপুলেরই সার্বিক পরীক্ষার প্রয়োজন? উড়ালপুলের অন্যান্য জায়গাতেও ফাটল দেখা গিয়েছে কি? ‘ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (এনএইচএআই)-র আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, শুধু ওই পুরনো ফাটল নয়, পুরো উড়ালপুলই বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে। ফাটল সারাইয়ের কাজ শুরু হতে এত দেরি হওয়ায় স্থানীয়েরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের প্রশ্ন, এ বার গোটা উড়ালপুল পরীক্ষা করে ও প্রয়োজনে সারাই করে উড়ালপুল চালু করতে কত বছর লাগবে?
২০১৩ সালের ১০ জুন বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উড়ালপুলে ফাটল দেখা যায়। ওই এক্সপ্রেসওয়ে থেকে যশোহর রোডে যাওয়ার পথে বাঁকের ঠিক মুখে আট মিটার ব্যাসের একটা গোলাকৃতি ফাটল। সঙ্গে সঙ্গে ওই উড়ালপুল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। ঘটনার পরেই জায়গাটি পরিদর্শনে আসেন ওই উড়ালপুলের দায়িত্বে থাকা এনএইচএআই-এর আধিকারিকেরা ও উড়ালপুল বিশেষজ্ঞেরা। তখন প্রাথমিক পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, গোলাকৃতি ওই ফাটলের চারপাশে বেশ কিছু চিড় ধরেছে। ফাটলের ওই অংশটি আশপাশের তুলনায় বসেও গিয়েছে। তবে ওই ফাটলের অংশ পরীক্ষা করে ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, মাস কয়েকের মধ্যেই ওই ফাটল সারিয়ে ফেলে গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করে দেওয়া যাবে।
কিন্তু সেই কয়েক মাস গড়িয়ে চলল প্রায় দু’বছরে। কেন এত দেরি? বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের এই উড়ালপুল যশোহর রোড ও বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থলে তৈরি হয়েছে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই উড়ালপুল চালু হওয়ার পরে ওই এলাকার যানজটও অনেক কমে যায়। খুব সহজেই গাড়ি যশোহর রোড থেকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আসতে পারে। স্থানীয়দের বক্তব্য, উল্টোডাঙা উড়ালপুলের একটা বিশাল বড় ভাঙা ডেক সরিয়ে নতুন ডেক লাগানো হয়ে গেল। এমনকী, ওই উড়ালপুল দিয়ে বেশ কয়েক মাস আগে গাড়ি চলাচলও শুরু হয়ে গিয়েছে। তা হলে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একটা গর্ত সারানোর কাজে হাত পড়ল না কেন?
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দু’বছর ধরে ওই উড়ালপুলে গাড়ি না চলায় সেখানে কোনও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও হয়নি। এর ফলে সেতুটি দুর্বল হয়ে পড়েছে কি না বা অন্যান্য অংশেও ফাটল দেখা দিয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন ইঞ্জিনিয়ারেরা। তবে এনএইচএআই-এর ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেতু বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পুরো উড়ালপুলটিই পরীক্ষা করানো হবে। তার পরে মূল ফাটল সারাইয়ের কাজে হাত দেওয়া হবে। এনএইচএআই-এর এক টেকনিক্যাল ম্যানেজার বলেন, “এখন উড়ালপুলের পরীক্ষার কাজ চলছে। এর পরে সারাইয়ের কাজ শুরু হবে।” তাঁরা জানিয়েছেন, ওই উড়ালপুল সারাইয়ের জন্য তিন-তিন বার দরপত্র ডাকার পরেও সেগুলি বাতিল হয়ে যায়। তাই কাজ শুরু হতে এতটা দেরি হল। তবে তাঁদের দাবি, কাজ যখন শুরু হয়ে গিয়েছে, আশা করা যায়, ছ’মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হয়ে ওই উড়ালপুল দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হয়ে যাবে।