ভোগান্তির বাইপাস

থমকে বাস লেনের কাজ, পথ চলতে নিত্য দুর্ভোগ

কথা ছিল, ১৮ মাসে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ। কিন্তু কেটেছে ৫৪ মাস। ই এম বাইপাসে ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম’-এর (বিআরটিএস) কাজ কবে শেষ হবে, তা এখনও নিশ্চিত বলতে পারছেন না কেউ। ফলে শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় চলাফেরা করতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন মানুষ।

Advertisement

অশোক সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪০
Share:

কথা ছিল, ১৮ মাসে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ। কিন্তু কেটেছে ৫৪ মাস। ই এম বাইপাসে ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম’-এর (বিআরটিএস) কাজ কবে শেষ হবে, তা এখনও নিশ্চিত বলতে পারছেন না কেউ। ফলে শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় চলাফেরা করতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন মানুষ।

Advertisement

প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, মেট্রোর কাজের পাশাপাশি বাইপাসে মানুষের ভোগান্তির অন্যতম কারণ বিআরটিএস প্রকল্প সময় মতো শেষ করতে না পারা। কয়েক মাস আগেই বাইপাসের এই প্রায় থমকে যাওয়া প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে বলা হয় তদারকি সংস্থা কেএমডিএ-কে। তবে কেএমডিএ-র কর্তাদের একাংশের মতে, তা কার্যত অসম্ভব। নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেন, ‘‘চেষ্টা হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার। দু’টি সেতুর সংলগ্ন অংশ বাড়াতে হবে। এ জন্য টেন্ডার ডাকা হবে। আশা করছি, সব মিলিয়ে এই অর্থবর্ষে পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’’

কী ছিল এই প্রকল্পে? কেএমডিএ সূত্রে খবর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মধ্যে যাতে দ্রুত বাস চলে, তাই বাইপাসের ‘ছয় লেন’-এর দু’পাশে একটি করে শুধুমাত্র বাস চলাচলের ‘লেন’-এর পরিকল্পনা হয়। রাস্তার ক্ষেত্রে এক ‘লেন’ মানে ৭.৫ মিটার। জেএনএনইউআরএম-এ এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সাহায্যের ছাড়পত্র মেলে। কেএমডিএ-র এক কর্তা জানান, এই প্রকল্পের মূল অংশের কাজ তিন ভাগে বিভক্ত। (১) বর্তমান বাইপাসের দু’পাশের নিচু জমি ভরাট। (২) সেই অংশে রাস্তা তৈরি। (৩) বাইপাসের বিভিন্ন সেতু ও কালভার্ট ‘আট লেনের’ মতো চওড়া করা। প্রথম দু’টি ভাগের কাজ দেওয়া হয় দু’টি নামী ঠিকাদারি সংস্থাকে। রাজ্য প্রশাসনের অভিযোগ, কাজ চলাকালীন কেন্দ্র এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়। রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০১২ থেকে রাজ্যের টাকাতেই চলছে প্রকল্প।’’

Advertisement

কিন্তু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অনেক জায়গায় বাইপাসের নিচু অংশ ভরাটের কাজই হয়নি। কিছু অংশে কাজ মার খাচ্ছে দখলদার থাকায়। প্রকল্প-পরিকল্পনায় (ডিপিআর) বাইপাসের পাঁচটি কালভার্ট সম্প্রসারণের কথা থাকলেও এ কাজ অনেকটাই বাকি।

কেএমডিএ-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মান্না বলেন, ‘‘নানা কারণে দেরি হয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ কাজ আটকে থাকার অন্যতম কারণ যে জবরদখল সরাতে না পারা, তা আড়ালে বললেও প্রকাশ্যে বলতে চাইছেন না কেউই। কিন্তু ভোটের আগে কী দখল সরানো সম্ভব? দেবাশিসবাবুর জবাব, ‘‘প্রকল্পের স্বার্থে সবই করতে হবে।’’

বাধা তৈরি করেছে কালিকাপুরে একটি দ্বিতল ‘বিতর্কিত’ বাড়িও। কেএমডিএ-র এক কর্তার বক্তব্য, বহু বছর ধরে সেটি নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। যদিও এই জটিলতার নিষ্পত্তিতে প্রশাসনের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেএমডিএ-র কর্তারাই। কেএমডিএ সূত্রে খবর, বাইপাসের দু’পাশে বিদ্যুতের বড় ট্রান্সমিশন টাওয়ার সরানো নিয়ে কেএমডিএ-র সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুত্‌ বন্টন সংস্থার (এসইডিসিএল) কর্তাদের দফায় দফায় বৈঠকের পরেও জট কাটেনি। নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্প, চিংড়িহাটা ও পরমা উড়ালপুলের জন্যও মার খেয়েছে বিআরটিএস প্রকল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন