বাড়ি ভেঙে মৃত বৃদ্ধ

ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা প়়ড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ। পা দু’টো শুধু বেরিয়ে, ভেসে আসছে গোঙানির শব্দ! শুক্রবার বিকেলে এমন ঘটনাই দেখল নারকেল়ডাঙা নর্থ রোড।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০০:২৪
Share:

বিপজ্জনক: এই ঘরের ছাদ ভেঙেই ঘটে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র

ভরবিকেলে বিকট শব্দ শুনে ছুটে এসেছিলেন পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশীরা। তাঁরা দেখলেন, ঘরের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা প়়ড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ। পা দু’টো শুধু বেরিয়ে, ভেসে আসছে গোঙানির শব্দ! শুক্রবার বিকেলে এমন ঘটনাই দেখল নারকেল়ডাঙা নর্থ রোড।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ছাদ ভেঙে পড়ার ঘটনা শুনে আসেন নারকেলডাঙা থানার পুলিশ এবং দমকলকর্মীরা। ওই বৃদ্ধ বিনয় রায়কর্মকার ওরফে প্রেমানন্দকে এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। বিনয়বাবুর বাড়ি শ্যামনগরে। নারকেল়ডাঙার ওই বাড়িতে থাকতেন তাঁর ভাই সাগরবাবু। দিন পনেরো আগে তিনি মারা গিয়েছেন। তাঁর নিয়মভঙ্গে যোগ দিতেই এ দিন সস্ত্রীক এসেছিলেন বিনয়বাবু।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দোতলা বাড়িটির এমনিই ভগ্নদশা। প্রায় দশ ঘর ভাড়াটে আছেন সেখানে। রেন্ট কন্ট্রোলে বা়ড়ি ভাড়া দেন তাঁরা। বাড়ি সারানো নিয়ে বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে বিবাদও রয়েছে তাঁদের। পুরসভার খবর, বাড়িটি বিপজ্জনক বলে নোটিস দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

৯ মাস আগে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে কলকাতা পুর আইনে সংযোজনের কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশের পরে নতুন আইন হয়। কিন্তু মাস দুই হতে চললেও তা প্রয়োগের রূপরেখা এখনও তৈরি করতে পারেনি পুরসভা। বিল্ডিং দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভার আইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, অর্থ-সহ একাধিক দফতরের পরামর্শের জন্য ওই ফাইল ঘুরছে।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গোটা ঘর জুড়ে ধ্বংসস্তূপ। ভাঙা অংশ দিয়ে উপরের ঘরের আসবাব দেখা যাচ্ছে। বাড়ির বাসিন্দারা জানান, উপরের ঘরটিতে সপরিবার থাকতেন পিন্টু দে নামে এক ব্যক্তি। বিপদের আশঙ্কা করে কিছু দিন আগে তিনি শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছেন।

সাগরবাবুর মেয়ে স্বাতী জানান, দুপুরে খাওয়ার পরে বিনয়বাবু ওই ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। ঘরে ছিলেন আরও কয়েক জন। বাড়ির এক বাসিন্দা পায়েল বসাক জানান, তিনি দোতলায় থাকেন। আচমকাই বিকট শব্দ শুনে নীচে নেমে ওই ঘটনা দেখতে পান। ঘটনার পরেই বাসিন্দাদের বার করে আনা হয়।

বাড়ির সামনেই চেয়ারে বসেছিলেন ৯২ বছরের দুলাল দত্ত। বাসস্থান হারানোর আশঙ্কায় পথে বসে বিড়বিড় করছিলেন তিনি। পুলিশ জানায়, আজ, শনিবার সকালের আগে কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই ঘটনায় বাড়ির মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, বাড়ি সারানোর কথা বললেও বাড়িওয়ালারা কান দেননি। যদিও মালিকপক্ষের বক্তব্য, ওই বাড়ি থেকে তাঁদের আয় না হওয়ায় ভাড়াটেদের বলা হয়েছিল, প্রোমোটারের সঙ্গে চুক্তি করে সেটিকে ফ্ল্যাটবা়ড়ি হিসেবে তৈরি করতে। কিন্তু ভাড়াটেরা তা করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন