লরিতে পিষ্ট বালক

ইদের সালাম করা হল না আজিজের

এক মাসের রমজান শেষ হচ্ছে আজ, মঙ্গলবারই। সকালে নমাজ পড়ে এসে বাড়ির সকলকে সালাম করতে আসার কথা ছিল তার। প্রতি বছরের মতোই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০১:০৩
Share:

আজিজ সেন্টওয়ালা

এক মাসের রমজান শেষ হচ্ছে আজ, মঙ্গলবারই। সকালে নমাজ পড়ে এসে বাড়ির সকলকে সালাম করতে আসার কথা ছিল তার। প্রতি বছরের মতোই। কিন্তু তার আগেই সোমবার সকালে বাবার চোখের সামনে পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল বছর
আটের আজিজ সেন্টওয়ালা। ইদের খুশি পলকে ম্লান হয়ে গেল গোটা পরিবারের।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, বৌবাজারের হাভেরলি লেন এবং চাঁদনি চকে বাড়ি রয়েছে পেশায় ব্যবসায়ী কাঈদ সেন্টওয়ালার। তাঁর হাভেরলি লেনের বাড়ির উল্টো দিকেই ছেলে আজিজের স্কুল। কিন্তু রবিবার রাতে চাঁদনির বাড়িতেই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে থেকে গিয়েছিলেন কাঈদ। সোমবার সকালে সেখান থেকেই বাবার সঙ্গে স্কুলে রওনা হয়েছিল বৌবাজারের ফিয়ার্স লেনের সেন্ট স্টিফেন্স স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র আজিজ।

তখন সকাল সাড়ে সাতটা। গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে সিগন্যাল খোলাই ছিল। গাড়ি কম থাকায় তাড়াহুড়ো করে ছেলেকে নিয়ে রাস্তা পেরোতে যান বাবা। তখনই আচমকা তাঁদের সামনে এসে পড়ে একটি লরি। শেষ মুহূর্তে কাটানোর চেষ্টা করেও পেরে ওঠেননি চালক। লরির ধাক্কায় ছিটকে পড়েন বাবা-ছেলে দু’জনেই। বাবার সামান্য চোট লাগলেও মাথায় গুরুতর আঘাত পায় ছেলে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা সঙ্গে সঙ্গে দু’জনকেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে আজিজকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। কাইদ-কে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লরিটিকে আটক করে। গ্রেফতার করা হয়েছে লরিচালক কার্তিক জায়সবালকে।

এ দিকে এলাকার মানুষ ও আজিজের পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে সময়মতো নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকেরা ঠিক মতো পরীক্ষা করেননি আজিজকে। দু’-এক বার নাড়ি পরীক্ষা করে আর বুকে চাপ দিয়েই তাকে মৃত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। জীবনদায়ী
কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থাই তাঁরা করেননি। উল্টে তাঁদের সঙ্গেও চিকিৎসকেরা দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। সমস্ত অভিযোগই অবশ্য অস্বীকার করেছেন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের।

বাবা কাঈদ এবং মা তসলিম সেন্টওয়ালার একমাত্র সন্তান আজিজ। এ দিন হাভেরলি লেনে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা-মা। আত্মীয়রা কোনও রকমে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁদের। আজিজের এক পিসি নিশরিন বলেন, ‘‘ভীষণ ছটফটে আর দুষ্টু ছিল ছেলেটা। তবে কখনও কারও অবাধ্য হয়নি। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন