প্রতীকী ছবি।
শিশুমনের বিকাশে মা-বাবার পরে যাঁদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি, তাঁরা শিক্ষক-শিক্ষিকা। কিন্তু তাঁরা নিজেরাই মানসিক চাপে থাকেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলল শিক্ষামহল।
জি ডি বিড়লা স্কুলে শিশু পড়ুয়ার উপরে যৌন নিগ্রহের তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছেন তার বাবা। সোমবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া স্কুলের আইনজীবীর কাছে জানতে চেয়েছেন, শিক্ষক নিয়োগের সময়ে যোগ্যতা ছাড়া আর কোন কোন বিষয় যাচাই করা হয়। পারিবারিক অশান্তির প্রভাব খুদে পড়ুয়ার উপরে পড়া নতুন কিছু নয়। তাদের মনে যাতে সেই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী ছাপ না ফেলে, তার জন্য কী করছে শহরের স্কুলগুলি? রাজ্য সরকারই বা কী ভাবছে?
শিশুদের মানসিক ও শারীরিক নিগ্রহ আইন করে বন্ধ করেছে সরকার। কিন্তু তার পরেও সর্বত্র তা বন্ধ হয়নি। মনোরোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, খুদে পড়ুয়াদের উপরে যখনই কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার পিছনে কাজ করেছে তাঁদের মানসিক সমস্যা। সে কারণেই কর্মক্ষেত্রে সুস্থ পরিবেশ ও মানসিক শান্তির প্রয়োজন বলে মত তাঁদের। সরকারি স্কুলে এই সুবিধা এখনও পাওয়া যায়নি। বেসরকারি স্কুলগুলি কি আদৌ এ সব দিকে লক্ষ রাখে?
মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের অধিকর্তা দেবী কর জানান, শিক্ষকদের কারও ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা হয় না। কিন্তু কারও কোনও সমস্যা হলে স্কুলের কাউন্সেলরদের দিয়ে কাউন্সেলিং করানো হয়। নিয়োগের সময়েও দেখা হয় শিক্ষক বা শিক্ষিকার শারীরিক ও মানসিক ‘ফিটনেস’। তাঁর দাবি, স্কুলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেন। বরাহনগরের সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুল অবশ্য এক ধাপ এগিয়ে। কখনও কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার মানসিক সমস্যা হয়েছে বুঝতে পারলে তাঁকে কয়েক মাসের ছুটি নিতে বলা হয়। অধ্যক্ষ নবারুণ দে বলেন, ‘‘এক জন শিক্ষিকার সমস্যা বুঝতে পেরে তাঁকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। পারিবারিক অশান্তির কারণে তাঁর ব্যবহারে পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছিল।’’
শ্রী শিক্ষায়তনের তরফেও ব্রততী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। নিয়োগের সময়েও যথেষ্ট খোঁজ -খবর নেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ স্কুলের কর্তৃপক্ষ মানছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা শিক্ষিকা নিজে থেকে সমস্যার কথা না জানান, তত ক্ষণ কিছু করার থাকে না।
কিছু বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা যদিও বা রয়েছে, সরকারি স্কুলে এখনও পর্যন্ত সেই সুবিধা নেই। স্কুলশিক্ষা দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে অনেকটা এগোনো গিয়েছে। খুব দ্রুত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হবে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে রূপরেখা তৈরি হচ্ছে।’’