পুলিশের সঙ্গে অভিনেত্রী মৌমিতা চক্রবর্তী। শুক্রবার, প্রগতি ময়দান থানায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
সিগন্যালে দাঁড়িয়ে রয়েছে সব গাড়ি। আচমকা একটি লাল গাড়িকে হুশ করে বেরিয়ে আসতে দেখে হাত নেড়ে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন কর্তব্যরত ট্র্যাফিক সার্জেন্ট শুভেন্দু সরকার। কিন্তু ওই লাল গাড়ি তো দাঁড়ালই না, উল্টে এঁকে-বেঁকে যেতে গিয়ে প্রণব দেবনাথ নামে আর এক সার্জেন্টের মোটরসাইকেলে ধাক্কা মেরে ফের দ্রুত গতিতে রুবি মোড়ের দিকে চলতে থাকে লাল গাড়ি।
এর পরেই ম্যানপ্যাকে সহকর্মী বিশ্বজিৎ বড়ুয়াকে সর্তক করেন শুভেন্দুবাবু। পরপর দু’টি সিগন্যাল লাল করে দিয়েও থামানো যায়নি গাড়িটি। তার পরেই লাল গাড়িকে ধাওয়া করতে থাকেন বিশ্বজিৎ। পঞ্চান্নগ্রামের কাছে এসে লাল গাড়িটি দাঁড় করানো হয়। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ পরমা আইল্যান্ড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার গাড়িটিকে ধাওয়া করে ধরেন তিলজলা ট্র্যাফিক গার্ডের সাজেন্টরা।
তিলজলা ট্র্যাফিক গার্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়িটি ধাওয়া করার পরে চালকের দরজা খুলতেই টলমল পায়ে বেরিয়ে আসেন এক মহিলা। টেলি সিরিয়ালের পরিচিত সেই মুখ চিনতে ভুল হয়নি কর্তব্যরত অফিসারদের। প্রগতি ময়দান থানা থেকে ডেকে আনা হয় মহিলা পুলিশকর্মীদের। তার পরে মৌমিতা চক্রবর্তী নামে ওই অভিনেত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। পরে তাঁকে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। চিকিৎসকদের কথায়, ওই অভিনেত্রীর রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর লাইসেন্সও পাঁচ মাসের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাঘই ঘোগ, ধৃত কর্তার অস্ত্র ফাঁস
পুলিশের অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন মৌমিতা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সে কথা নিজেও স্বীকার করেছেন বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশের আরও দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর বাড়িতে একটি পার্টি হয়েছিল। গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে মদ্যপান করেছিলেন তিনি। শুক্রবার বিকেলেও সেই নেশার ঘোর কাটেনি। এর জেরে চোখে ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছিলেন না। তাই সিগন্যাল খেয়াল করতে পারেননি।
তদন্তকারীরা জানান, ওই অভিনেত্রীর গাড়িটি আটক করা হয়েছে। গাড়ি থেকে নামানোর পরে অভিনেত্রী কার্যত হাঁটতেই পারছিলেন না বলে দাবি পুলিশের। প্রগতি ময়দান থানায় নিয়ে গিয়ে তাঁকে জল খাওয়ানো হয়। তার পরে ধীরে ধীরে কিছুটা সুস্থ হন মৌমিতা। এর পরেই নিজেকে অভিনেত্রী বলে পরিচয় দেন। কোন সিরিয়ালের অভিনয় করছেন, তা-ও জানান তদন্তকারীদের।
বস্তুত, বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের দুর্ঘটনা এবং মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুতে ছড়ানো আতঙ্কের রেশ এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই এ দিনের ঘটনায় ফের আঙুল উঠল তারকাদের দিকে। ট্র্যাফিক পুলিশদের একাংশ বলছেন, উৎসবের মরসুমে রাতে মত্ত অবস্থায় গাড়ি বা বাইক চালানোর নিদর্শন মেলে। তা আটকাতে তৎপরও হয় পুলিশ। কিন্তু উৎসব পুরোদমে শুরুর আগেই ভর বিকেলে এমন মত্ত অবস্থায় অভিনেত্রীর গাড়ি চালানোয় তাজ্জব তাঁরা। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এই তারকারাই আমাদের হয়ে পথ নিরাপত্তার প্রচার করেন। তাঁদের কেউ যদি এমন কাজ করেন, বলার কী থাকতে পারে!’’