বাঁ হাতে চ্যানেল, তবু ডান হাতে পেন মুনমুনের

মুনমুন জানায়, গত এক বছর ধরে নানারকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছে সে। একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে বসে পড়ে। বেশি ক্ষণ দাঁড়াতে পারে না। শরীরের নানা জায়গায় ফুলে যায়। নাক দিয়ে রক্ত পড়ে মাঝেমধ্যে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪০
Share:

অদম্য: হাসপাতালে মুনমুন বর্মণ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষা শুরু হতে মাত্র আধ ঘণ্টা বাকি। তখনও তার বাঁ হাতে ফোটানো চ্যানেল দিয়ে ওষুধ দিচ্ছেন ডাক্তার। মাথায় হাত বুলিয়ে মা জানতে চাইছেন, ‘‘পারবি তো পরীক্ষা দিতে?’’ শারীরিক সমস্যাকে কার্যত দূরে সরিয়ে দিয়েই ছাত্রীটি মাকে বলে, ‘‘যত কষ্টই হোক না কেন পরীক্ষা দেবই।’’

Advertisement

বুধবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে এ ভাবে রোগ যন্ত্রণা উপেক্ষা করে পরীক্ষা দিতে দেখা গেল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মুনমুন বর্মণকে। এ দিন ছিল মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের বোয়ালিক্ষেত্র গ্রামের দাড়ালহাট হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মুনমুন হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘মেয়েটির নানারকম শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। সম্ভবত কোনও অটো ইমিউন অসুখে ভুগছে মেয়েটি।’’

আপাতত মেডিসিন ওয়ার্ডের ২১০ নম্বর শয্যাই ওই ছাত্রীর ঠিকানা। সেখানে শুয়েই লেখাপড়া করছে বলে জানালেন মুনমুনে মা মুক্তিদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ের জেদের কাছে আমরা হার মেনেছি। ভেবেছিলাম এই বছরটা নষ্ট হবে। কিন্তু মেয়ের জেদ সে পরীক্ষা দেবেই।’’ মুনমুনের লেখাপড়ায় উৎসাহ দেখে তার পাশে ভর্তি রোগীরাও তাকে সাহস যোগাচ্ছেন।

Advertisement

মুনমুন জানায়, গত এক বছর ধরে নানারকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছে সে। একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে বসে পড়ে। বেশি ক্ষণ দাঁড়াতে পারে না। শরীরের নানা জায়গায় ফুলে যায়। নাক দিয়ে রক্ত পড়ে মাঝেমধ্যে। সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা। মুনমুনের মা মুক্তিদেবী জানান, দক্ষিণ দিনাজপুরে মুনমুনের অনেক দিন ধরে চিকিৎসা করিয়েও কাজ না হওয়ায় শেষে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওকে দেখানো হয়। সেখানে ওকে নানা রকম পরীক্ষা করে ওই হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। মুক্তিদেবী বলেন,‘‘ আমার স্বামী চাষবাস করেন। বেসরকারি হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই ওকে আমরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি।’’ সুপার ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটিকে এখনই ছুটি দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সে পরীক্ষা দিতে চায়। তাই হাসপাতাল থেকেই ওর পরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা করেছে মধ্য শিক্ষা পর্ষদ। নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে মেয়েটিকে আলাদা ঘরে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন