মহম্মদ ইমরান
থানায় ঢুকে সবে চেয়ারে বসেছেন এক দারোগা। হঠাৎই হাজির মুর্শিদাবাদের তিন যুবক। অভিযোগ, বিদেশে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করা হয়েছে তাঁদের। সব শুনে অভিযোগ লিখিত ভাবে জমা দিতে বললেন ওই দারোগা। তার পরে চেয়ার ছেড়ে উঠে থানার অন্য দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছিলেন তিনি। হঠাৎই তাঁকে ঘিরে ধরল আরও চার যুবক।
ব্যাপারটা কী? যুবকদের কথা শুনে ওয়াটগঞ্জ থানার ওই অফিসার বুঝলেন, ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছেন তাঁরা। বন্দর এলাকার এক ব্যক্তি বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে তাঁদের থেকে অন্তত এক লক্ষ টাকা হাতিয়েছেন। ওই অফিসার বলছেন, গত দু’দিন ধরে এমন অভিযোগ আসছে ভুরিভুরি। সোমবার দুপুর পর্যন্ত অভিযোগের সংখ্যা একশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। অভিযোগ নিতে নিতে জেরবার হচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। অবস্থা দেখে নড়ে বসেছেন কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তারাও। চাকরি প্রতারণার শিকড় খুঁজতে নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গড়েছেন তাঁরা।
লালবাজারের খবর, ঘটনার সূত্রপাত গত বুধবার। আরবে চাকরি েদওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে মহম্মদ ইমরান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সোমবার পর্যন্ত তার কাছ থেকে ৫০০টির বেশি পাসপোর্ট এবং নগদ ১০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ইমরানের বিরুদ্ধে প্রতারণার পাশাপাশি ভিসা জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। বছর দুয়েক আগেও পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ধরা পড়েছিল ইমরান।
তদন্তকারীরা জানান, ইমরানের গ্রেফতারের খবর বেরোনোর পর থেকেই নানা জায়গা থেকে লোকজন প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে আসতে শুরু করেন। তদন্তে উঠে এসেছে, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য মাথাপিছু ৩০ হাজার টাকা নিত ইমরান। সেই হিসেবে তদন্তকারীদের অনুমান, এই প্রতারণা চক্রে এখনও পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি হাতানো হয়েছে।
এ সব তথ্য সামনে আসার পরে তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই চক্রে ইমরান ছাড়াও আরও অনেক রাঘব বোয়াল রয়েছে। প্রতারণা চক্র এ রাজ্যের আনাচে-কানাচে এবং ঝাড়খণ্ডে তো ছড়িয়েছেই, বিহার বা উত্তর-পূর্বেও জাল বিছিয়ে থাকতে পারে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইমরান হিমশৈলের চূড়ামাত্র। আরও তদন্ত করলে অনেকের নাম জড়িয়ে যেতে পারে।’’ ওই কর্তার ব্যাখ্যা, সে কারণেই কিছুটা নজিরবিহীন ভাবে থানায় সিট গঠন করা হয়েছে।
ইমরানদের হাতে প্রতারিত মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের বেলডাঙার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে তাঁরা স্থানীয় নেতা শেখ আবু তাহেরকে বলেন ওই চাকরি-চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। সেই মতো এলাকার বেকার যুবকেরা প্রথমে ৫০০ টাকা এবং পরে ৩০ হাজার টাকা দেন আবু তাহেরকে। কিন্তু চাকরি মেলেনি। সোমবার ওয়াটগঞ্জ থানার বাইরে দাঁড়িয়ে তাহের জানান, তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। তাই তাঁকে বিশ্বাস করে তাঁর সূত্রে অন্তত ৬০ জন ইমরানকে টাকা দিয়েছিল। প্রতারণা চক্রের হাতে পড়েছেন, তা বুঝতে পেরেই ওয়াটগঞ্জ থানায় অভিযোগ জানান তিনি। তার ভিত্তিতেই ইমরানকে ধরা হয়। তাহের বলেন, ‘‘ইমরান এমন ভাবে কথা বলত যে আমি বোধবুদ্ধি হারিয়েছিলাম।’’
পুলিশও বলছে, ইমরানের কথার চাতুরিতে অনেকেই বোকা বনে যেতে পারে। বিশ্বাস অর্জনের জন্য চাকরিপ্রার্থীদের জাল ভিসা, বিমানের টিকিটও দিত সে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘জেরার সময়েও তদন্তকারীদের কথার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিল সে।’’