উড়ল ফানুস, বিমানবন্দর এলাকা ফাঁকাই

কালীপুজোর তিন-চার দিন পরে বিমানবন্দরের ভিতর থেকে পুড়ে যাওয়া ফানুসের অংশ বস্তায় ভরে ফেলতে হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিক্রি হয়েছে দেদার ফানুস। উত্তর থেকে মধ্য, দক্ষিণ থেকে পশ্চিম— শহরের আকাশে সর্বত্র উড়তেও দেখা গিয়েছে সেই ফানুস।

Advertisement

তবে স্বস্তির খবর এই যে কলকাতা বিমানবন্দরের আকাশে সে ভাবে ফানুস দেখা যায়নি। শুধু গত মঙ্গলবার কলকাতায় নামার সময়ে এক পাইলট লেজার বিম নিয়ে অভিযোগ জানান। তিনি বলেন, লেজার বিমে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। ফানুস নিয়ে আশঙ্কা ছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষেরও। কালীপুজো এবং দীপাবলি অর্থাৎ মঙ্গলবার ও বুধবারের সন্ধ্যা-রাত কেটেছে নিশ্চিন্তে। তবে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে এখনও। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং শনিবারও ফানুস উড়তে পারে। রাতের আকাশে হাওয়ায় দুলতে দুলতে ফানুসরূপী বিপদ বিমানের কাছে চলে আসার আশঙ্কা তাই রয়েই গিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০-৩০ টাকার ফানুস নিয়ে সমস্যা নেই। সেগুলি একটু উপরে গিয়েই পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেশি দামের ফানুসও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

Advertisement

সেগুলি অনেকটা উঁচুতে এবং দূর পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এই রকম কিছু ফানুস শ্রীরামপুর থেকে গঙ্গা পেরিয়ে ব্যারাকপুরে উড়ে এসেছে। ব্যারাকপুরে একটি হেলিকপ্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে সমস্যা হতে পারে, এই আশঙ্কায় শ্রীরামপুর এলাকায় যাতে ফানুস না ওড়ানো হয় সেই বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে হুগলির পুলিশকে।

গত বছর কালীপুজোর দিন দু’য়েক পরে কলকাতা-ব্যাঙ্কক রুটের একটি বিমানের কাছে চলে এসেছিল ফানুস। ১২ জন পাইলট এ নিয়ে অভিযোগ করেন গত বছর। একটি ফানুস উড়ে এসে পড়ে রানওয়ের কাছে ট্যাক্সিওয়ের উপরে। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, কালীপুজোর তিন-চার দিন পরে বিমানবন্দরের ভিতর থেকে পুড়ে যাওয়া ফানুসের অংশ বস্তায় ভরে ফেলতে হয়েছিল।

সেই চিত্রটা এ বার অনেকটাই বদলেছে বলে কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রে খবর। কেন্দ্রীয় বিমান মন্ত্রক সম্প্রতি নির্দেশ দেয়, প্রতিটি বড় বিমানবন্দরের পাঁচ নটিক্যাল মাইলের (প্রায় ৯ কিলোমিটার) মধ্যে ফানুস ওড়ানো যাবে না। কলকাতা বিমানবন্দরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পাঁচ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে নামতে আসা বিমানের উচ্চতা থাকে ১৫০০ ফুটের উপরে। ফানুস অত উপরে উঠতে পারে না।’’

ফানুস নিয়ে বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় এই সচেতনতার প্রচার শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই। কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসার্স গিল্ড-এর পূর্বাঞ্চল শাখা এবং বিধাননগর পুলিশের তরফে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। গিল্ডের সম্পাদক কৈলাসপতি মণ্ডল বলেন, ‘‘একটি ফানুস থেকে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রাণ যেতে পারে বহু মানুষের। নিছক মজার জন্য ফানুস ওড়ানোর আগে এটা মনে রাখা দরকার।’’

বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর পুলিশের কমিশনার রাজেশ সিংহ বলেন, ‘‘এলাকার ক্লাবগুলিকে বলেছিলাম, ফানুস বিমানের সামনে চলে এলে দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সেই বিমানে আপনাদের আত্মীয়-বন্ধুও থাকতে পারেন। ওই সব ক্লাবের পক্ষ থেকেও এলাকায় প্রচার করা হয়েছে।’’ বিভিন্ন আবাসনেও এই অনুরোধ করা হয়েছিল। বিমানবন্দর লাগোয়া দমদম এবং নিমতা থানাকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছিল বলে রাজেশ জানিয়েছেন। সেখান থেকে কিছু ফানুস বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে।

সতর্ক করা হয়েছিল বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার এয়ারপোর্ট, বাগুইআটি, নারায়ণপুর থানাকেও। বিধাননগরের ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘আমরাও কিছু ফানুস বাজেয়াপ্ত করেছি। পোস্টার ও মাইকে প্রচার করে ওই সব এলাকার মানুষদের সতর্ক করা হয়েছে। আমাদের ধারণা, এতে ৭০ শতাংশ মানুষের উপরে প্রভাব পড়েছে।’’ জাভালগি জানান, লেজার বিম নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে ক্লাব এবং রেস্তরাঁগুলিকে। বলা হয়েছে, আকাশের দিকে মুখ করে যেন লেজার বিম না ছাড়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন