ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে কবেই বিষয়গুলি খেয়াল রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দমকলের টনক নড়়েছিল সেই আমরি-কাণ্ডের পরে।
আমরির বেসমেন্টের আগুনের ধোঁয়া এসি ডাক্টের মাধ্যমে গোটা হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ায় কিছুই করতে পারেনি দমকল। বিষাক্ত ধোঁয়ায় ৯৩ জনের মৃত্যুর পরেই ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের দরকারটা হাড়ে-হাড়ে মালুম হয়েছিল। কিন্তু গোল্ডেন পার্ক হোটেলের আগুন ফের দেখাল হুঁশ ফেরেনি কলকাতার। বিস্তর ফাঁক দমকলের নজরদারিতে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বহুতলে সুরক্ষা মেনে হাসপাতাল-অফিস-শপিং মল-হোটেল চালাতে এ শহর কতটা তৈরি, সেই প্রশ্নটা তাই অপ্রাসঙ্গিক নয়।
শহরে বাড়ির ভিতরের আগুনে ৫০-৬০% ক্ষেত্রে বিষাক্ত ধোঁয়াটাই প্রাণহানির কারণ। গত বৃহস্পতিবার গোল্ডেন পার্ক হোটেলে আগুন লেগে মৃত্যু হয় দুই আবাসিকের। গত বছর ভুবনেশ্বরের বেসরকারি হাসপাতালের আগুনেও ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা যান ২২ জন। কেন্দ্রীয় ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোনও বাড়িতে ধোঁয়া জমতে না দেওয়া বা ধোঁয়া দ্রুত বার করাটাই (স্মোক ম্যানেজমেন্ট) সুরক্ষার গোড়ার কথা। গত বছর সাউথ সিটি মলের আগুনের সময়ে ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বদ্ধ মলে ধোঁয়া জমাট বেঁধে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। মলটিতে এখন ঢালাও সংস্কারের কাজ চলছে।
আগে পুরনো বাড়ির ক্ষেত্রে ঢোকা-বেরনোর রাস্তা খোলা রাখা, জলের সংস্থান ইত্যাদিতে জোর দিতেন দমকল-কর্তারা। ‘‘এখন ফায়ার লাইসেন্স দেওয়ার সময়ে স্মোক ম্যানেজমেন্টের দিকগুলিও আমরা সুপারিশ করি।’’— বলছেন দমকলের ডিজি জগমোহন। তবে নজরদারির পরিকাঠামোয় খামতি মানছেন তিনিও। আমরি-কাণ্ডের পরে আমরি, বেলভিউ-সহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে এসি ডাক্টের সুরক্ষা নিশ্ছিদ্র করায় জোর দেন দমকলকর্তারা। তাঁদের সাহায্য করেন প্রবীণ মেকানিক্যাল ইলেকট্রিক্যাল প্লাম্বিং কনসাল্ট্যান্ট দীনেশপ্রসাদ সাহা। কাজ হয় আরও কয়েকটি হাসপাতাল, নতুন শপিংমলেও।
দীনেশবাবুর মতে, সদিচ্ছা থাকলে এটুকু করা খুব কঠিন নয়। তাঁর দাওয়াই, স্মোক ম্যানেজমেন্টের জন্য ধোঁয়া জরিপ করার স্মোক ডিটেক্টর ছাড়াও এসি ডাক্ট দ্রুত বন্ধ করার ড্যাম্পার থাকা চাই। কোনও করিডরের আয়তন অনুযায়ী এমন এগজস্ট পাখা বসবে, যা ঘণ্টায়
অন্তত ছ’বার পুরো হাওয়াটা পাল্টে ফেলতে পারে। এ ছাড়া, উপরে-নীচে বিদ্যুতের তার চলাচলের ফাঁকফোকর বা ডাক্ট সিল করা, সিঁড়িতে ধোঁয়া চলাচল রুখতে ফায়ার ডোর বসানোও জরুরি। বিদ্যুতের তারের গায়েও অগ্নিরোধক রং বা পেন্ট লেপে দিতে হবে। বেসমেন্টে ডিস্কোথেক, পানশালায় জমজমাট গোল্ডেন পার্ক হোটেলে এই দিকগুলি আদৌ মাথা রাখা হয়নি।
দমকল সূত্রের খবর, বিপদের কথা ভেবেই নবান্ন সাজিয়ে তোলার সময়ে ‘সেন্ট্রালি এসি’ না করে ‘স্প্লিট এসি’র ব্যবস্থা হয়। কোথাও ধোঁয়া যাতে না জমে তা খেয়াল রাখা হয়। কিন্তু শহরের অন্যত্র এই নজরদারির বালাই নেই।