প্রতীকী চিত্র
জাল দলিল পেশ করে সরকারি নথিতে কারচুপির তালিকা দীর্ঘ। নবান্ন সূত্রের খবর, এই ধরনের ৩৩টি ঘটনার কথা জেলা প্রশাসনের নজরে এসেছে বলে নবান্নে শীর্ষ কর্তাদের জানিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।
চকপাচুরিয়া মৌজার গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের অজান্তে জাল দলিলের সাহায্যে সরকারি নথিতে কারচুপি করা হচ্ছে এবং এই ভাবে মালিকানা বদল হয়ে তাঁদের জমি চলে যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থার দখলে। নীলকান্ত মণ্ডল নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দার এক বিঘা ১৩ কাঠা জমি এ ভাবেই বেহাত হয়ে গিয়েছিল। অরুণ মণ্ডল নামে অন্য এক গ্রামবাসী প্রায় এক বিঘা জমি কাউকে বিক্রি করেননি। কিন্তু একই ভাবে ১১টি কোম্পানি সেই জমির মালিক হয়ে যায়! ধাড়সা-মোক্তারপুর মৌজার বাসিন্দা জিন্নাত গাজির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। নবান্নের হস্তক্ষেপে নিজের জমি ফেরত পান নীলকান্তবাবু। রাজারহাটের ভূমি ও ভূমিরাজস্ব কার্যালয় সূত্রের খবর, এ দিন আনন্দবাজার পত্রিকায় এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে অরুণবাবুও তাঁর জমি ফেরত পেয়েছেন। জিন্নাত গাজিও শীঘ্রই জমি ফেরত পেতে চলেছেন বলে জানিয়েছেন ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দফতরের এক আধিকারিক।
তবে এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বলেই নবান্নকে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বস্তুত, এমনটাই অভিযোগ চকপাচুরিয়ার বাসিন্দা দীপু মণ্ডল, দেবদাস মণ্ডল, কাশীনাথ মণ্ডল, প্রমীলা মণ্ডলদের। দীপুবাবু বলেন, ‘‘২০০৭ সালে পাঁচটি দাগে ২১ কাঠা জমি বিক্রি করেছিলাম। দু’বছর পরে দেখি, ১৪টি দাগের জমিই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।’’ দেবদাসবাবু বলেন, ‘‘আমার দাদু ধীরেন্দ্র মণ্ডলের নামে ২২ শতক জমি রয়েছে। মাস দুয়েক আগে দেখা যায়, ২১১৬ দাগের পুকুরটি বিভিন্ন সংস্থার নামে নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে!’’
নবান্ন সূত্রের খবর, এই ধরনের প্রতারণা রোধে জমি যে প্রকৃত মালিকের নামে রেকর্ড হল এবং সেটি যে আসল, তা ভূমি ও ভূমিরাজস্ব কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মিউটেশনের সময় দলিল দেখে সন্দেহ হলে এডিএসআর অফিস থেকে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। থানায় অভিযোগ দায়ের করার মধ্যে সীমাবদ্ধ না-থেকে অভিযুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা-ও জানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যদিও জেলার এক কর্তার বক্তব্য, বছরে ৬-৭ লক্ষ মিউটেশন হয়। দলিল কেউ জাল করছে কি না, তা বোঝা খুব মুশকিল। খোঁজ করলে সারা রাজ্যেই এমন চক্রের হদিস মিলবে। ‘‘এই ধরনের প্রতারণা চক্রের হদিস পেতে পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতা দরকার,’’ বলেন ওই কর্তা।