পুরুষ উত্তরাধিকারী চাই। আর সেই সন্তান পেতে বিয়ে করতে চান কমবয়সি কোনও পাত্রীকে। সেই মর্মেই বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে বিশ্ব জুড়ে হইচই ফেলে দিলেন ব্রিটেনের এক বিত্তশালী।
তবে বিতর্কের কারণ আরও আছে। যিনি পুত্রসন্তান পেতে কমবয়সি পাত্রী খুঁজছেন, তাঁর নিজের বয়স ৭৯ বছর এবং তিনি হবু স্ত্রীকে বেতন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন!
কিন্তু কে এই বিত্তশালী? ব্রিটেনের ৭৯ বছর বয়সি ওই বিত্তশালীর নাম বেঞ্জামিন স্লেড। সমারসেটের মউনসেল হাউসের সপ্তম ব্যারোনেট। অভিজাত ব্রিটিশ। পোশাক-আশাক, আদবকায়দা, কথাবার্তা— সবেই সেই আভিজাত্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।
১৭৭২ সাল থেকে তাঁর পরিবার ১,৩০০ একর বিস্তৃত সম্পত্তির মালিক। এ ছাড়া আরও আয় আছে তাঁর পরিবারের। সেই বেঞ্জামিনই পুত্রসন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম এমন এক কমবয়সি তরুণীকে স্ত্রী হিসাবে খুঁজছেন।
উত্তরাধিকারের আশায় কমবয়সি তরুণীর খোঁজ অবশ্য এখন নয়, অনেক দিন ধরেই চালাচ্ছেন বেঞ্জামিন। তবে নতুন সংযোজন বিজ্ঞাপনে ‘বার্ষিক বেতন’ এবং ‘প্রজননক্ষম’ হওয়ার উল্লেখ।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউ ইয়র্ক পোস্ট’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেঞ্জামিন কয়েক দশক ধরে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন এবং অনলাইন ডেটিং প্রোফাইলের সাহায্যে বিয়ের জন্য কমবয়সি তরুণীর খোঁজ চালাচ্ছেন। এমনকি, টেলিভিশনে উপস্থিত হয়েও নিজের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত সব প্রয়াসই ব্যর্থ হয়েছে। যদিও হাল ছাড়তে রাজি নন ৭৯ বছর বয়সি বৃদ্ধ। অভিজাত বংশ সুরক্ষিত করার জন্য এবং তাঁর ১,৩০০ একর সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরের জন্য পুত্র চাইছেন তিনি।
প্রথম জীবনে বেঞ্জামিনের বিয়ে হয় পলিন মাইবার্গ নামে এক মহিলার সঙ্গে। বিয়ের পর পলিন ১৭টি বিড়াল পুষেছিলেন। কিন্তু সেই বিড়ালগুলির সঙ্গে একই ছাদের নীচে থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না দাবি করে পলিনের সঙ্গে বিয়েতে ইতি টানেন বেঞ্জামিন। ১৯৯১ সালে তাঁদের বিয়ে ভেঙে যায়। কোনও সন্তানও ছিল না দম্পতির।
এর পর দীর্ঘ সময় একাই ছিলেন বেঞ্জামিন। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তরাধিকারীর জন্য ২০০৮ সাল থেকে পাত্রীর খোঁজ চালাতে শুরু করেন বৃদ্ধ। পাত্রীর খোঁজে তাঁর সে সময়ের বিজ্ঞাপন বিশ্বব্যাপী মনোযোগও আকর্ষণ করেছিল।
২০২১ সালে পেশায় কবি আমেরিকার নাগরিক সাহারা সানডে স্পেনের সঙ্গে আইভিএফের মাধ্যমে একটি কন্যাসন্তানের বাবা হন বেঞ্জামিন। কিন্তু সম্পর্কে জড়াননি। এর পর দু’টি পরিকল্পিত বিবাহও বাতিল হয় তাঁর।
এখন আবার নতুন করে পাত্রীর খোঁজে বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে আলোড়ন ফেলেছেন ব্রিটেনের অভিজাত মউনসেল হাউসের সপ্তম ব্যারোনেট। তাঁর স্ত্রী হতে আগ্রহীদের জন্য একটি শর্ততালিকাও তৈরি করেছেন বেঞ্জামিন।
সেই শর্ত অনুযায়ী, বৃশ্চিক রাশির জাতিকা এবং একটি নির্দিষ্ট সংবাদপত্রের পাঠিকা হলে যেন তাঁর স্ত্রী হওয়ার আবেদন না করেন। এমন কোনও দেশের নাগরিক, যে দেশের নামের আদ্যাক্ষর ইংরেজি বর্ণ ‘আই’ দিয়ে শুরু হয় এবং যাঁদের দেশের জাতীয় পতাকায় সবুজ রং রয়েছে, সেই মহিলারাও যেন আবেদন না করেন তাঁকে বিয়ের জন্য। তেমনটাই লেখা আছে বেঞ্জামিনের শর্ততালিকায়।
তা হলে আবেদন করতে পারবেন কারা? ব্যারোনেটের মতে, আদর্শ প্রার্থীর বয়স তাঁর থেকে ৩০-৪০ বছরের কম হতে হবে। কারণ তার মূল লক্ষ্য, সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নিশ্চিত করা।
আবেদনকারীর কাছে যদি হেলিকপ্টার ওড়ানোর লাইসেন্স থাকে বা আইন নিয়ে পড়াশোনা থাকে, তা হলে তিনি অগ্রাধিকার পাবেন। তিনি যাঁকে বিয়ে করবেন, তাঁর ইতিমধ্যেই কোনও কন্যা থাকলে তাঁকেও তিনি গ্রহণ করবেন বলে বিজ্ঞাপনে জানিয়েছেন বেঞ্জামিন।
পাশাপাশি বেঞ্জামিন এ-ও জানিয়েছেন, তাঁকে বিয়ে করলে তাঁর স্ত্রী বেতনবাবদ বছরে ৫০,০০০ পাউন্ড (প্রায় ৫৯.৩৭ লক্ষ টাকা) করে পাবেন। এ ছাড়াও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। তবে আবেদনকারীর নিজেরও কিছু সম্পত্তি থাকলে সুবিধা হবে বলে জানিয়েছেন মউনসেল হাউসের সপ্তম ব্যারোনেট।
বেঞ্জামিন আরও জানিয়েছেন, তাঁর কাছে ন’মাসের হিমায়িত শুক্রাণু রয়েছে। উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার আশায় তিনি সেই শুক্রাণু মজুত রেখেছেন। বিয়ে হওয়ার পর পুত্রসন্তান পেতে তিনি হিমায়িত সেই শুক্রাণু ব্যবহার করবেন বলেও বেঞ্জামিন জানিয়েছেন।
জীবনে অন্য সমস্যাও রয়েছে বেঞ্জামিনের। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জমি-জায়গার প্রাচুর্য থাকলেও, বর্তমানে নগদ টাকার অভাব তৈরি হয়েছে মউনসেল হাউসের। অনেক দিন ধরেই মউনসেল হাউস ডেস্টিনেশন বিয়ের জন্য জনপ্রিয়। অতীতে অনেক বিয়ের আসর বসেছে সেখানে।
কিন্তু করোনা অতিমারির পর সেই ব্যবসায় মড়ক ধরেছে। বিয়ের জন্য মউনসেল হাউস বুকিং করার রমরমা কমেছে। তাই এখন ১৭৭২ সাল থেকে তাঁর পরিবারের দখলে থাকা পৈতৃক সম্পত্তি একটি বিলাসবহুল হোটেলের কাছে বিক্রির জন্যও বেঞ্জামিন আলোচনা চালাচ্ছেন বলে খবর।