বঞ্চিত মা, অবশেষে থানা ধরল ছেলেকে

আদালতের পরোয়ানা সত্ত্বেও এক বছর ধরে তাঁকে না কি খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। ছেলে তারক গিরি তাঁর দেখভাল করেন না জানিয়ে থানায়-আদালতে মাথা খুঁড়ছিলেন অশক্ত বৃদ্ধা মা শৈব্যা গিরি।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০১:১৯
Share:

আলিপুর কোর্টে শৈব্যা গিরি।

আদালতের পরোয়ানা সত্ত্বেও এক বছর ধরে তাঁকে না কি খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। ছেলে তারক গিরি তাঁর দেখভাল করেন না জানিয়ে থানায়-আদালতে মাথা খুঁড়ছিলেন অশক্ত বৃদ্ধা মা শৈব্যা গিরি। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম খোঁজখবর শুরু করতেই ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেই নিখোঁজ যুবককে ধরে ফেলল ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ।

Advertisement

অথচ, সকালেই আলিপুরে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের ছ’নম্বর কোর্টে তারা জানিয়েছিল, তারকের ফোন বন্ধ। আনন্দনগর রোডে ভাড়া বাড়িতেও তিনি নেই। বিকেলে ফোন পেয়ে ওসি প্রদীপ ঘোষাল বললেন, ‘‘আপনারাই ওঁকে খুঁজে দিন!’’ কয়েক ঘণ্টাতেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ফের ফোনে তিনি বলেন, ‘‘কাকতালীয় ভাবে ঠাকুরপুকুর বাজারে ওঁকে পেয়ে গেলাম। ওঁর জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যা বকুনি শুনতে হয়েছে।’’ এর আগে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী থেকে নবান্ন-লালবাজার— সর্বত্রই ভোগান্তির খবর দিয়েছেন ৭০ ছুঁইছুঁই শৈব্যাদেবী। থানা ছেলেকে আড়াল করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

মাকে কয়েক বছর আগে ঠাকুরপুকুরের বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিলেন ছেলে তারক। আলিপুর কোর্টে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে তিনি সেখানে ফিরতে পেরেছেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মাসে আড়াই হাজার টাকা ছেলের থেকে জোগাড় করতেই নাস্তানাবুদ মা। ঠিক সাত বছর আগে স্টিফেন কোর্টের আগুনে নাতনি পম্পা চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন শৈব্যাদেবী। পম্পার মা পিকুকে সঙ্গে নিয়েই এ দিন কোর্টের শুনানিতে গিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

কোর্টে তারকবাবুর দেখা না-মিললেও তাঁর শ্বশুরমশাই উপস্থিত ছিলেন। তাঁর আইনজীবী তাপস আচার্য মুখ খোলেননি। যদিও আদালতে তারকবাবু গত বছর জানিয়েছিলেন, একটি ছাপাখানার চাকরির সামান্য রোজগারে তাঁর পক্ষে মায়ের খরচ দেওয়া অসম্ভব।

শৈব্যাদেবীর আইনজীবী রাজলক্ষ্মী ঘোষের প্রশ্ন, ছেলে নিজের স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে পারলে মাকে কেন পারবেন না? একটা সময়ে শৈব্যাদেবী লোকের বাড়ি রান্না করতেও বাধ্য হয়েছিলেন। এখন আর পেরে ওঠেন না।

তা হলে এখন কী ভাবে চলছে বৃদ্ধার? বড় মেয়ে পিকুদেবীর কথায়, ‘‘বাড়ির একটা টালির ঘর ভাড়া দিয়ে মাসে হাজার টাকা আসে। তা ছাড়া, আমরা কিছু কিছু দিই।’’ পিকুদেবীর স্বামী অনুষ্ঠানে গিটার বাজান। স্থায়ী রোজগার নেই।
মেয়েকে হারিয়ে তাঁরাও বেসামাল। শৈব্যাদেবীর ছোট মেয়েরও রোজগার নেই। বৃদ্ধার অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে ছেলের দহরম-মহরম থাকায় ওরা নড়ে বসছে না। হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশে প্রবীণ নাগরিকদের সুরক্ষায় আইন থাকলেও পুলিশের গাফিলতি বহু ক্ষেত্রেই বড় সমস্যা। হাইকোর্টকেও বারবার এমন মামলায় মধ্যস্থতা করতে হয়েছে।’’

শৈব্যাদেবীর আশা, পুলিশ ধরার পরে এ বার ছেলের সুবুদ্ধি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন