হাসপাতাল চত্বরে বাজল ব্যান্ড

এই অভিযোগ যদিও অস্বীকার করেছেন অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা, এনআরএসের অ্যানাটমি বিভাগের চিকিৎসক অভিজিৎ ভক্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘হাসপাতালের ভিতরে কোনও শব্দদূষণ হয়নি। যে সব চিকিৎসকদের ডিউটি ছিল তাঁরা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণও করেননি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ০১:২৪
Share:

চিকিৎসক দিবসের মিছিলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেই মিছিলে ব্যান্ড বাজছিল দেখে তিনি উদ্যোগী হয়ে তা বন্ধ করেন বলে দাবি মন্ত্রীর। শনিবার, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসক দিবস, তাই রোগী পরিষেবা কার্যত বন্ধ। আউটডোরে উপচে পড়ছে ভিড়, কিন্তু বেশির ভাগ সিনিয়র চিকিৎসকের দেখা নেই। হাসপাতাল চত্বরেই জোরে ব্যান্ড বাজিয়ে চলছে ‘উদ্‌যাপন’। আশঙ্কাজনক রোগীদেরও ফেলে বর্ণাঢ্য সেই শোভাযাত্রায় হাজির হয়েছেন অনেক চিকিৎসক। সঙ্গী মন্ত্রীরাও।

Advertisement

শনিবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিনভর ‘চিকিৎসক দিবস’ পালনকে ঘিরে উঠেছে এমনই সব অভিযোগ। রাজ্য জুড়ে সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই এই উপলক্ষে একাধিক অনুষ্ঠান ছিল। কোথাও বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার পরিকল্পনা হল তো কোথাও জরুরি পরিস্থিতিতে দল বানিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে পরিষেবা দেওয়া নিয়ে হল আলোচনা।

কিন্তু এনআরএস হাসপাতালের ‘চিকিৎসক দিবস’ পালন তৈরি করল নতুন বিতর্ক। এ দিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বরেই চিকিৎসক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন চিকিৎসকেরা। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও তৃণমূলের চিকিৎসক- বিধায়ক নির্মল মাজি। ততক্ষণে হাসপাতালের আউটডোরে জমে গিয়েছে রোগীর ভিড়। তীব্র আওয়াজে এই উদ্‌যাপনে আপত্তি তোলেন ডিজিটাল এক্স রে এবং ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীর আত্মীয়দের একাংশ। অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফেরেনি তাতেও।

Advertisement

এই অভিযোগ যদিও অস্বীকার করেছেন অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা, এনআরএসের অ্যানাটমি বিভাগের চিকিৎসক অভিজিৎ ভক্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘হাসপাতালের ভিতরে কোনও শব্দদূষণ হয়নি। যে সব চিকিৎসকদের ডিউটি ছিল তাঁরা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণও করেননি।’’ তাঁর দাবি, রণপা, বেলুন, ফুল নিয়ে অন্যান্য চিকিৎসকেরা শোভাযাত্রা করেন। কোনও বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই গাওয়া হয় ‘আগুনের পরশমণি’। ব্যান্ড হাজির ছিল হাসপাতাল চত্বরের বাইরে। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য বলেছেন, ‘‘শোভাযাত্রায় ব্যান্ডের আয়োজন ছিল। মাইকে গান বাজছিল। আমরা দেখে আপত্তি জানাই। উদ্যোগী হয়ে সে সব বন্ধ করি।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যও এ বিষয়ে একমত। তিনি বলেন, ‘‘মাইক, ব্যান্ডের আয়োজন ছিল। কিন্তু খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’

কেন হাসপাতাল চত্বরের অনুষ্ঠানে এই সবের অনুমতি দেওয়া হল? এ বিষয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি এনআরএসের সুপার হাসি দাসগুপ্ত।

‘চিকিৎসক দিবস’ উপলক্ষে এ দিন প্রেস ক্লাবে তৈরি হয় ‘ইউনিক ডক্টর্স ক্লাব’। ফি মাসে বিনামূল্যে প্রান্তিক রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া, সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করার মতো কিছু কাজই এই সংগঠনের মূল ভাবনা। চিকিৎসকদের এই সংগঠনের অন্যতম সদস্য শল্য চিকিৎসক তরুণকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘রোগীকে পরিষেবা দেওয়া চিকিৎসকের জীবনের ব্রত। এই অস্থির সময়ে সেই কাজ আরও ভাল ভাবে করে মানুষের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করবে এই সংগঠন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন