কোনও সাহায্যেই ‘না’ নেই। তবে প্রসঙ্গ যদি ডেঙ্গি হয়, তা হলে পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব খারিজ!
জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম) প্রতিনিধিরা সহযোগিতার আর্জি জানিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরে এ নিয়েই সরব দক্ষিণ দমদম পুরসভার অন্দর। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পুর এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে পুর এলাকায় এডিস ইজিপ্টাই মশার দাপট আটকাতে সহযোগিতা করেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন এক সংস্থা।
পুরসভা সূত্রের খবর, ১৫ এবং ১৬ মার্চ পুর এলাকা পরিদর্শন করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার আঞ্চলিক অধিকর্তা। সেই মতো ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া রোধে ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের নির্দেশিকা মেনে কাজ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে ১৫ মার্চ পুরসভায় আসেন সংস্থার দুই প্রতিনিধি, প্রশান্ত পাত্র এবং রমেশ চন্দ্র হাজরা। কিন্তু অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই প্রতিনিধিদের সাহায্য করার প্রস্তাব বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করা হয়! পুরসভা সূত্রের খবর, প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে জানানো হয়, তাঁরা কেন্দ্রীয় কর্মচারী। পুরসভা রাজ্য সরকারের প্রতিষ্ঠান। তাই প্রতিনিধিরা নিজেদের মতো করে এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন। তবে স্বাস্থ্য ভবনের অনুমতি ছাড়া পুরকর্মীরা তাঁদের এ কাজে কোনও রকম সাহায্য করবেন না। এর পরে দুই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সল্টলেকের কার্যালয়ে ফিরে যান।
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সংস্থা সম্পর্কে পুর কর্তৃপক্ষের এই মনোভাব হলেও বিপরীত ছবি অনুদানের ক্ষেত্রে। পুরসভা সূত্রের খবর, ‘পারফরম্যান্স গ্র্যান্ট’ বাবদ কেন্দ্রের থেকে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা পেতে চলেছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা। পুর নির্দেশিকা মেনে বিভিন্ন মাপকাঠিতে দক্ষতা প্রমাণে ওই অনুদান পাওয়া সম্ভব হয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে সুডা’র (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) মাধ্যমে কেন্দ্রের কাছে অনুদান চেয়ে আবেদন করেন পুর কর্তৃপক্ষ। এখনও লিখিত চিঠি না পেলেও, অনুদান যে পাওয়া যাবে তা মৌখিক ভাবে জেনেছে হিসেব বিভাগ। পুরসভার এই কৃতিত্বে বেশ গর্বিত হিসেব বিভাগের চেয়ারম্যান পারিষদ প্রদীপ মজুমদার।
কিন্তু অনুদাননে গর্বিত হলেও, তাদের নজরদারিতে সহযোগিতা করতে কেন আপত্তি! রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে বছরভরই পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা। পুরকর্মীদের সহযোগিতা করাই সংস্থার লক্ষ্য। দক্ষিণ দমদমে এ বছরেই প্রথম চিঠি দিয়ে সহযোগিতা করার কথা জানানো হয়। সেখানে ডেঙ্গি সংক্রমণ যে ভাবে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে তার প্রেক্ষিতেই দক্ষিণ দমদমে যান প্রতিনিধিরা। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষের আচরণে বেশ ক্ষুণ্ণই হয়েছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য ভবনে চিঠি দিয়েই যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, পুর কর্তৃপক্ষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছয়নি।
কেন্দ্রীয় সংস্থার আঞ্চলিক অধিকর্তা সত্যজিৎ সেন অবশ্য এই অভিযানের কথা মানতে চাননি। তবে এনভিবিডিসি’র প্রতিনিধিদের এ ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি বলেই মনে করছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ। কারণ ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে এনভিবিডিসি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনেই পুরসভাগুলিকে কাজ করার কথা বলছে স্বাস্থ্য ভবন। দক্ষিণ দমদমের পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমি বাধা দেওয়ার কেউ নই। পুরসভাগুলি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন। কেন্দ্রের কর্মসূচি রাজ্য সরকারের মাধ্যমে পুরসভায় আসে। কেন্দ্রের অনুদানও সরাসরি পাই না। কেন্দ্রীয় সংস্থা স্বাস্থ্য ভবন বা সুডার মাধ্যমে এলে স্বাগত। তা না হলে তো ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া হয়ে যাবে। রাজ্য সরকার পাল্টা কৈফিয়ৎ তলব করলে কোথায় যাব!’’