কুচকাওয়াজে প্রথম ট্যাবলো কম্যান্ডোদের

স্নাইপার রাইফেল তাক করে আছেন এক জন। যদিও তাঁকে ভাল ভাবে দেখা যাচ্ছে না। শুধু বন্দুকের নলটা বেরোনো। আর এক জন কম্যান্ডোও লুকিয়ে দূরবীন নিয়ে, ‘স্পটার’-এর ভূমিকায়। যিনি ম্যানপ্যাক বা ওয়াকিটকিতে লক্ষ্যের অবস্থান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন নিশানাবাজকে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০২:৩৫
Share:

নিশানা: সেনাবাহিনীর অস্ত্র প্রদর্শনী। মিলল হাতে নিয়ে পরখ করে দেখার সুযোগও। রবিবার, প্রিন্সেপ ঘাটে। ছবি: সুমন বল্লভ

সবটাই একটু অন্য রকম। যাকে বলে, স্পেশ্যাল।

Advertisement

স্নাইপার রাইফেল তাক করে আছেন এক জন। যদিও তাঁকে ভাল ভাবে দেখা যাচ্ছে না। শুধু বন্দুকের নলটা বেরোনো। আর এক জন কম্যান্ডোও লুকিয়ে দূরবীন নিয়ে, ‘স্পটার’-এর ভূমিকায়। যিনি ম্যানপ্যাক বা ওয়াকিটকিতে লক্ষ্যের অবস্থান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন নিশানাবাজকে। তবে অন্য দু’জন কম্যান্ডোকে দেখা যাচ্ছে, যাঁরা কালো কুচকুচে পোশাকে একে ৪৭, গ্লক পিস্তল, অন্ধকারে দেখার সরঞ্জাম বা নাইট ভিশনে সুসজ্জিত। ইস্পাত-কঠিন চোয়াল।

কাল, মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসে রেড রোডের কুচকাওয়াজে মোট ১১ জনকে নিয়ে থাকবে এমন ট্যাবলো। যাতে কলকাতা পুলিশের লোগো। নীচে লেখা স্পেশ্যাল ফোর্স। তার পর লেখা ‘থিঙ্ক স্পেশ্যাল, বি স্পেশ্যাল, অ্যাক্ট স্পেশ্যাল। অন্য রকম ভাবো, অন্য রকম হও, অন্য রকম করো।’ যা মূলমন্ত্র কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ফোর্স-এর। স্বাধীনতা দিবসে এই প্রথম কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ফোর্সের ট্যাবলো বেরোবে। এ বছরের কুচকাওয়াজে যা লালবাজারের বড় চমক হতে চলেছে।

Advertisement

কম্যান্ডো ছাড়া স্পেশ্যাল ফোর্স-এর অন্য সব দলকেও ট্যাবলোয় দেখা যাবে। কী ভাবে?

বিপর্যয় মোকাবিলা দলের এক জন দেওয়াল ভাঙছেন, দ্বিতীয় জন সরু নলের মুখে বাঁধা পুঁচকে ক্যামেরা ঢুকিয়ে ঘরের ভিতরে দেখে নিচ্ছেন যে, বিপদ কোথায় ঘাপটি মেরে আছে। তৃতীয় জন ডুবুরি। তাঁদের পাশে র‌্যাফ-এর দু’জন বাঁ হাতে ঢাল, ডান হাতে ফাইবারের লাঠি নিয়ে আর বাঁ পা সামনে ভাঁজ করে একটু ঝুঁকে ক্ষিপ্ত জনতার দিকে ‘চার্জ’ করার ভূমিকায়। কমব্যাট ফোর্স-এর দু’জন ইনস্যাস রাইফেল নিয়ে। যেমনটি তাঁরা থাকেন ধর্মতলায় বা লিন্ডসে স্ট্রিটের মুখে, পার্ক স্ট্রিটে কিংবা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে।

আরও পড়ুন: যে জন আছে মাঝখানে

কম্যান্ডো, কমব্যাট ফোর্স, র‌্যাফ, বিপর্যয় মোকাবিলা দল— এরা সবাই কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ফোর্স-এর ছাতার তলায়। থানা বা ট্র্যাফিক পুলিশের মতো দৈনন্দিন কাজে তাঁরা সামিল হন না বলে তাঁদের কথা আমজনতা ততটা জানেন না। অথচ তাঁরাই আমরি হাসপাতাল ও স্টিফেন কোর্ট, দু’জায়গার অগ্নিকাণ্ডে মোট ৬২ জনের জীবন বাঁচিয়েছেন, মাওবাদী আন্দোলনের তপ্ত সময়ে জঙ্গলমহলে গোটা পনেরো অভিযান চালিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত ও জীবিত দুর্গতদের উদ্ধারে হাত লাগিয়েছেন।

লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের অনেকে আমাদের বিশেষ বাহিনীর কথা জানেন না। এ বার কুচকাওয়াজের পর বহু লোক জানবেন। কম্যান্ডোরা বুঝবেন, ওঁদের কথাও গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে।’’

একটি ট্রাককে সাজিয়ে তৈরি করা হয়েছে স্পেশ্যাল ফোর্স-এর ট্যাবলো। লালবাজার সূত্রের খবর, এতে খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। শহরে কম্যান্ডো বাহিনী-সহ স্পেশ্যাল ফোর্স-এর বিভিন্ন মহড়া, শারীরিক কসরত, অনুশীলন এবং স্টিফেন কোর্ট, আমরি-র অগ্নিকাণ্ডে গিয়ে কাজ করার ছবি-ফ্লেক্স দিয়ে সাজবে ওই ট্রাক। বুলেটরোধক গাড়ি নিয়ে কী ভাবে এগোন কম্যান্ডোরা, ছবিতে দেখানো হবে তা-ও। সম্প্রতি কম্যান্ডো বাহিনীর হাতে এসেছে ১২৫ সিসি-র আটটি মোটর বাইক। যাতে কম্যান্ডোরা খবর পেলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেন। ট্যাবলোয় সেই ছবিও থাকবে।

এ সব তো ট্যাবলো— চলমান প্রদর্শনীর ব্যবস্থা। তবে শুধু দেখনদারি নয়, স্বাধীনতা দিবসে কুচকাওয়াজের সুরক্ষায় কাল মোতায়েন থাকবেন ৪৮ জন কম্যান্ডো-সহ স্পেশ্যাল ফোর্স-এর প্রায় ১২০ জন। কম্যান্ডো ছাড়া বাকিরা সবাই কমব্যাট-এর। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে জেকে আইল্যান্ড, মেয়ো রোড, পার্ক স্ট্রিট, ইডেন গার্ডেন্স ঘিরে তাঁরা থাকবেন সতর্ক দৃষ্টিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন