জোর যার: হাওড়ার এই খেলার মাঠ (ইনসেটে) দখল করে তৈরি হয়েছে খাটাল। নিজস্ব চিত্র
ছিল খেলার মাঠ। হয়ে গেল ত্রিপল ঘেরা খাটাল। তা-ও আবার খাস শহরের বুকে!
যার দাপটে এই ‘অসাধ্য সাধন’ হয়েছে, তার নাম শামিম আহমেদ ওরফে বড়ে। মধ্য হাওড়ার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি। এবং ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর শামিমা বানুর স্বামী।
শুধু ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডেই নয়, বড়ের প্রতিপত্তি ছড়িয়েছিল আশপাশের ওয়ার্ডেও। যেমন, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষবাগানে দশ কাঠার একটি খেলার মাঠ দখলের অভিযোগ রয়েছে বড়ের বিরুদ্ধে। শুধু দখলই নয়, রীতিমতো প্যান্ডেল বেঁধে ত্রিপল দিয়ে ঘিরে খেলার মাঠ বর্তমানে হয়ে গিয়েছে গরুর খাটাল। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে এখন গরু রাখা হয়েছে। পরের ধাপে খাটাল উঠে বেআইনি বহুতল হবে। কারণ, ঘোষবাগানে ইতিমধ্যেই যে ক’টি বহুতল হয়েছে, সবের পিছনেই রয়েছে ওই তৃণমূল নেতার নাম। সমীর বসু নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এখানে জমির দাম কাঠা প্রতি ২০ লক্ষ টাকা। এতটা জমি দখল হয়ে গেল, অথচ প্রশাসন নির্বিকার! আমরা আতঙ্কিত।’’
খেলার মাঠ দখল হয়ে গিয়েছে। একের পর এক বেআইনি বহুতল গজিয়েছে। তবু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?
৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর অরুণ রায়চৌধুরীর সাফাই, ‘‘আমাদের কাছে মাঠ দখলের কোনও অভিযোগ আসেনি। বেআইনি বহুতল নিয়েও অভিযোগ জমা পড়েনি। কেউ অভিযোগ না করলে আমরা কী
করতে পারি?’’
অভিযোগ, শুধু মাঠ দখল আর বেআইনি বহুতল তৈরি করেই অবশ্য ক্ষান্ত হয়নি বড়ে। গত বছর সে গঙ্গার ধারে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের একটি বড়সড় জমি দখল করে গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেয়। সেখানে নৈশ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা চালু করে। বড়ের বড় সাধ হয়, প্রতিযোগিতায় সে গাড়ি উপহার দেবে। তাই এক প্রোমোটারের থেকে বড়ে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনাতেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি বলে দাবি ওই প্রোমোটারের।
বড়ের যেখানে ওঠাবসা, সেই হাওড়া ট্রাম ডিপো সংলগ্ন জিসিআরসি ঘাটের বাসিন্দা রশিদ খান বলেন, ‘‘নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাহিনী তৈরি করেছিল বড়ে। তা দিয়েই গোটা এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল। সেই কারণেই ভয়ে কেউ ওর বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন না।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা চার ভাই মিলে নিজেদের জমিতে তিনতলা বাড়ি তৈরি করছিলাম। নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করতে চেয়ে বড়ে গোলমাল শুরু করে। এক দিন প্রায় ২০০টি ছেলেকে নিয়ে এসে তিন দিন ধরে আমাদের তিনতলা বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। পুলিশ থেকে নেতা, সকলকেই ফোন করেছি। কেউ এগিয়ে আসেননি।’’ অভিযোগ, স্ত্রীর ক্ষমতাবলেই একের পর এক বেআইনি বহুতল তৈরি করেছে বড়ে। অবৈধ নির্মাণকে ‘বৈধ’ করে দেওয়া ছিল তার কাছে জলভাত। এলাকার এক জমির মালিক জানান, তাঁর সঙ্গে বড়ের চুক্তি হয়েছিল, তাঁর জমিতে তিনতলা বাড়ি তৈরি হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, বাড়ি উঠল চারতলা। একতলা ও নীচের ৩০০ বর্গফুটের দোকানটা জোর করে দখল করে নিল বড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘জি টি রোডে দোকানের দাম যাচ্ছে প্রতি বর্গফুট ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, ৩০ লক্ষ টাকার জায়গা বেহাত হয়ে গেল। প্রাণের ভয়ে পুলিশে যাইনি।’’
এই ভয়কেই অস্ত্র করে এত দিন ৩৬ নম্বর ও তার আশপাশের ওয়ার্ডে সাম্রাজ্য বাড়িয়েছিল বড়ে। তবে এ বার তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যে আরও একটা শক্তির উত্থান হয়েছে, শুক্রবার কংগ্রেস নেতা জাভেদ কুরেশির বাড়িতে আক্রমণের পরে পাল্টা আক্রমণই তা প্রমাণ করে দিয়েছে।