সেন্ট পলস কলেজের সেই নিগৃহের ছবি।
সপ্তাহ ঘুরতে গেলেও সেন্ট পলস কলেজে ছাত্র নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্তেরা এখনও অধরা। হন্যে হয়ে খুঁজেও ‘চার মাথার’ খোঁজ মিলছে না। তাই এ বার ‘কান’ ধরে টান দিল পুলিশ!
অভিযুক্তেরা এলাকা ছেড়ে পালানোর পর কলেজে কী কী ঘটছে? কারা নিগৃহীত ছাত্রের পাশে দাঁড়াচ্ছেন? পুলিশি গতিবিধি ও তৎপরতা কোন পর্যায়ে? এই সমস্ত কিছুর উপরেই নজরদারি চালানোর জন্য তাদের ঘনিষ্ঠ এক ছাত্রনেতাকে কাজে লাগাচ্ছিল অভিযুক্তেরা। এই নেতাও তৃণমূল ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র সঙ্গে যুক্ত বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানোর পর হুমকি ফোন এবং ফেসবুকে ওই নিগৃহীত ছাত্রের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করা হচ্ছিল। পুলিশের দাবি, এ সবের নেপথ্যেও রয়েছেন টিএমসিপি-র ওই ছাত্রনেতা। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, ওই যুবকই অভিযুক্তদের ‘কান’ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এলাকায়। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযুক্তেরা কোথায় লুকিয়ে রয়েছে জানার চেষ্টাও চলছে। ট্যাংরার বাসিন্দা ওই যুবককে টানা জেরা করছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ।
কলকাতার সেন্ট পলস কলেজে ছাত্র নিগ্রহে অভিযুক্তরা। -নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ, অভিযুক্তদের ধরতেই হবে। এর পরেও কেন তাঁদের ধরা যাচ্ছে না, তা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন নিগৃহীত ছাত্র থেকে শুরু করে কলেজের অন্যান্য পড়ুয়া। চাপের মুখে পড়ে পুলিশ এ বার ভিন রাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনাও নিচ্ছে। ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ফোনের কললিস্ট খতিয়ে দেখে বেশ কিছু সূত্রও মিলেছে। পুলিশের সন্দেহ, অভিযুক্তেরা রাজ্যে নেই। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তদন্তকারীদের দাবি, খুব শিগগিরই ওই চার জন ধরা পড়বে।
আরও পড়ুন- সবেতেই প্রথম আইআইএস, ফল মন্দ নয় রাজ্যের
আরও পড়ুন- বিতর্কে কলেজ-বিধি, কোর্টেরও পথে কাঁটা শিক্ষকের
গত ১৭ মে ঘটনার দিন ওই ছাত্রের নগ্ন ভিডিও তোলার সময়েও নাকি সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই বহিরাগত যুবক। এরই পাশাপাশি, পুলিশ নিগৃহীত যুবকের বয়ান রেকর্ড করেছে। সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল, তা সবিস্তার জানিয়েছেন নিগৃহীত ছাত্র। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা অর্ণব ঘোষ, শিক্ষাকর্মী অনন্ত প্রামাণিক, বহিরাগত টিএমসিপি সদস্য শেখ ইনামুল হক এবং কলেজের ছাত্র অভিজিৎ দলুইয়ের বাড়িতে বেশ কয়েক বার তল্লাশি চালানো হয়েছে। এমনকি, তাঁদের আত্মীয়দের বাড়িতেও খোঁজখবর করা হয়েছে। কিন্তু সন্ধান মেলেনি। ধরা পড়ার ভয়ে ফোন বন্ধ রেখেছেন তাঁরা, যাতে পুলিশ টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করতে না পারে।
নিগৃহীত ছাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এখনও অচেনা নম্বর থেকে হুমকি ফোন আসছে। শুধু আমাকেই নয়, যাঁরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ফেসবুকে কটূক্তি করছে অভিযুক্তের অনুগামীরা। তার পরেও পুলিশ কাউকে ধরতে পারছে না। ওরা অনেক ক্ষমতাশালী। তাই যত দিন না ওরা ধরা পড়ছে, ভয়ে আছি।” সেন্ট পলস কলেজে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির কাছেও বয়ান দিয়েছেন সেই ছাত্র। সে দিনের ঘটনা তদন্ত কমিটির সামনে সবিস্তার জানিয়েছেন তিনি। সোমবার এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের তদন্ত রিপোর্ট দেবেন।