আইনি বাধা, মিলেও মিলছে না তিন নিগম

২০১৬ সালে দ্বিতীয় বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে পরেই কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি), ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) এবং পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিএসটিসি)-কে মিলিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০৬:২০
Share:

সংযুক্তির পরে নামকরণ হয়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে অভিন্ন পরিচালন সমিতিও। কিন্তু সরকারি খাতায় এখনও আলাদা কলকাতার তিন পরিবহণ নিগম। এ বার সরকারি ভাবে তিন নিগমকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার কাজ শুরু করল রাজ্য পরিবহণ দফতর। তবে কোন পথে তা হবে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় রাজ্য সরকার।

Advertisement

২০১৬ সালে দ্বিতীয় বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে পরেই কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি), ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) এবং পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিএসটিসি)-কে মিলিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো তিন নিগমের অভিন্ন পরিচালন সমিতি তৈরি হয়। তিনটির সংযুক্ত নিগমের নামকরণ হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম’ (ডব্লিউবিটিসি)। কিন্তু সরকারি ঘোষণা হলেও এবং তিনটি নিগমের বাস একসঙ্গে চলা শুরু করলেও কার্যক্ষেত্রে তিনটি এখনও আলাদা। পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, খাতায়-কলমে তিন নিগমকে মেলানোর পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিএসটিসি।

নবান্ন সূত্রের খবর, তিন নিগমের মধ্যে সিটিসি তৈরি হয়েছে ব্রিটিশ আমলে। স্বাধীনতার পরে তা চলে আসে রাজ্যের অধীনে। অন্য দিকে ডব্লিউবিএসটিসি তৈরিই হয়েছে রাজ্যের অধীনে। ফলে, এই দুইয়ের সংযুক্তি নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু সিএসটিসি তৈরি হয়েছে স্বাধীনতার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন অ্যাক্ট, ১৯৫০’-এর আওতায়। এখানেই আইনের গেরো। সরকারের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় আইনে সিএসটিসি তৈরি হওয়ায় কোম্পানি আইনে তিন নিগমের সংযুক্তি ঘটানো যাবে না।

Advertisement

তা হলে কী ভাবে হবে?

পরিবহণ দফতরে তিনটি মত রয়েছে। একাংশের বক্তব্য, প্রথমে সংসদে ‘রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন অ্যাক্ট’-এর সংশোধন করতে হবে। তার পরেই সিএসটিসি-র সঙ্গে অন্য দুই নিগমের সংযুক্তি ঘটানো সম্ভব। অন্য একটি মত হল, বিধানসভায় সিএসটিসি-র পরিচালনে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা সংক্রান্ত বিষয়টি সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিলেই নিগমের সংযুক্তিতে কোনও বাধা থাকবে না। পরিবহণ দফতরের একটি অংশের মতে আবার এত কিছু না করে শুধু মাত্র রাজ্যের পরিবহণ বিধির পরিবর্তন ঘটিয়েই তিন নিগমের সংযুক্তি সম্ভব। শেষমেশ কোন পথে হাঁটা উচিত, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এ বার একটি আইনি সংস্থার মতামত নিচ্ছে পরিবহণ দফতর। অর্থ দফতরের শীর্ষ কর্তারাও বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন।

সংযুক্তিকরণের পথে সমস্যা রয়েছে আরও একটি বিষয় নিয়ে। সেটি হল, তিন নিগমের বেতন কাঠামো তিন ধরনের। সে ক্ষেত্রে খাতায়-কলমে সংযুক্তিকরণ হওয়ার পরে বেতন কাঠামো কোনটি হবে? এ ক্ষেত্রে অর্থ দফতরের উপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছেড়ে দিয়েছে পরিবহণ দফতর। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘সিদ্ধান্ত হয়েছে, বেতন কাঠামো যা-ই হোক না কেন, কর্মীদের বেতন যাতে না কমে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হবে। এই নিয়ে বিশেষ সমস্যা হবে না।’’

নবান্নের শীর্ষ কর্তারাও মানছেন, আসল সমস্যা আইনের গেরো। সেটি কী ভাবে মেটে, সে দিকেই তাকিয়ে তিন নিগমের সংযুক্তিকরণের ভাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন