Crime

নেশার পুরিয়া লাগবে? ফোনে বললেই হাজির মাদক বিক্রেতা

কলকাতা এবং সল্টলেকের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ‘অপরিচিত ব্যক্তিদের’ আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯ ১৬:১১
Share:

একটা ফোনেই মিলছে মাদক। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

দৃশ্য এক: এলগিন রোডের একটি শপিং মলের কাছে ইতি-উতি ঘোরাফেরা করছিলেন একদল যুবক। প্রত্যেকেই নামী কলেজের ছাত্র। ওঁদের মধ্যে এক জন, কাকে যেন ফোন করেই চলেছেন। মিনিট দশেক পর অবশেষে বাইকে করে নির্দিষ্ট স্থানে হাজির এক যুবক। হাতে পুরিয়া দিয়েই চম্পট।

Advertisement

দৃশ্য দুই: সল্টলেকের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে কিছুটা দূরে বাইকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ব্যক্তি। কিছু ক্ষণ পরে তিন-চারজন যুবক সেখানে পৌঁছলেন। পুরিয়া হাতে পেতেই যে যাঁর মতো এলাকা ছাড়লেন।

কলকাতা এবং সল্টলেকের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে এমনই সব ‘অপরিচিত ব্যক্তিদের’ আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। কখনও ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাংশের পড়ুয়ারা আবার ওই ‘অপরিচিত ব্যক্তিদের’ সঙ্গে দেখা করছেন জনবহুল এলাকায়। কখনও পানশালায় অথবা শপিংমলের আশপাশে।

Advertisement

এই রকম পুরিয়াই পৌঁছে যাচ্ছে পড়ুয়াদের হাতে। —নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: মত্ত তরুণীর তাণ্ডব, জেরবার বাসিন্দারা, ঘাম ছুটল পুলিশের​

আসলে কম বয়সী যুবক-যুবতীদের কাছে পুরিয়ার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, চাহিদা মতো মাদক। আর এই মাদক মিলছে একটা ফোনেই। অথবা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অর্ডার দিয়ে। শুধু বলতে হবে, কোথায়, কখন, কী ধরনের মাদক লাগবে! কলকাতা জুড়ে মাদকের কারবারিরা এমনই নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলেছে। মাদক কারবারিদের এই নেটওয়ার্কে জড়িয়ে পড়ছেন পড়ুয়ারাও। তাঁদের মাধ্যমেই মাদকের জাল ছড়িয়ে পড়ছে কলেজে কলেজে।

মাদক বিক্রেতাদের টার্গেট, মূলত কম বয়সী গ্রাহক। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের পড়য়াদের এ ভাবেই মাদক সরবারহ করে চলেছে বিক্রেতারা। এই তালিকায় হেরোইন থেকে শুরু করে ব্রাউন সুগার, গাঁজা-সহ বিভিন্ন ধরনের মাদক রয়েছে।

মাদকের এই কারবারীদের পর্দা ফাঁস করতে আদা জল খেয়ে নেমে পড়েছে কলকাতা পুলিশ। একই ভাবে বিধাননগর পুলিশ এবং নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুর‌্যোর অফিসারেরাও নজরদারি চালাচ্ছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। যেমন এক গ্রাম ব্রাউন সুগার বিক্রি হচ্ছে, ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। হেরোইন মিলছে, হাজার থেকে দু’হাজার টাকা (প্রতি গ্রাম)। ইয়াবা ট্যাবলেটও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ৫০ গ্রাম মাদক ইয়াবা ট্যাবলেট মিলছে প্রায় এক লক্ষ টাকায়। তবে তা নির্ভর করছে গুণগত মানের উপরে। যেমন টাকা তেমন চড়া নেশার জন্যে মাদক!

আরও পড়ুন: ফোর্ট উইলিয়ামে নাবালিকাকে ধর্ষণ, ধৃত সেনা আবাসনের কর্মী​

সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতা থেকে কয়েক জন কলেজ পড়ুয়া-সহ মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের মাদক দমন শাখা। তাদের জেরা করে এই চক্রের পাণ্ডাদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে বলে জানান এক পুলিশ অফিসার।

মঙ্গলবার রাতেও অভিযান চালিয়ে পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকা থেকে আরও দুই মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে জালে পড়ে শেখ লাতিফউদ্দিন এবং হুসেন সাহা রোড থেকে গ্রেফতার হয় শেখ রাজাকে। তাদের কাছ থেকে প্রায় ২ লক্ষ টাকার ব্রাউন সুগার (২৭০ গ্রাম) পাওয়া গিয়েছে।

মাদক দমন শাখার অনুমান, এই চক্রের জাল কলকাতা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও ছড়িয়ে রয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা, সল্টলেক এলাকাতে বহু মাদক বিক্রেতা জালে পড়েছে। আরও কয়েক জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন