‘এ আমাদের সকলেরই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই’

রবিবার বিকেলে পুলিশ জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে যে ভাবে নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে, তা দেখে এ দিন সকালে ফেসবুকেই তাঁরা ঠিক করেন, রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ করবেন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:৩০
Share:

প্রতিবাদ: মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা শান্তি মিছিলে পড়ুয়ারা। সোমবার, কলেজ স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষা দিয়েই মিছিলে পা মেলাতে সোজা কলেজ স্ট্রিটে চলে এসেছিলেন আশুতোষ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী দেবদত্তা বসু। সোমবার দুপুরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় স্লোগান দেওয়ার ফাঁকে দেবদত্তা বললেন, ‘‘জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভাবে পড়ুয়াদের উপরে অত্যাচার হয়েছে, তা শুনে আর ভিডিয়ো দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না। এ তো পড়ুয়াদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার শামিল। তাই প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’’ দেবদত্তা জানালেন, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে আসেননি। এই মিছিলে যোগ দিয়েছেন বিবেকের টানে।

Advertisement

শুধু দেবদত্তাই নন, ওই মিছিলে আসা বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রী জানালেন, তাঁরা এসেছেন নিজেদের উদ্যোগে। আশুতোষ কলেজের ছাত্র শুভজিৎ দাস জানান, নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন কলেজের পড়ুয়ারা একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন দিন কয়েক আগে। এত দিন তাঁরা ফেসবুকেই এই আইনের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। কিন্তু রবিবার বিকেলে পুলিশ জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে যে ভাবে নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে, তা দেখে এ দিন সকালে ফেসবুকেই তাঁরা ঠিক করেন, রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ করবেন।

শুভজিৎ বললেন, ‘‘সকালে ফেসবুকে সবাইকে জানাতেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের সামনে প্রায় তিনশো জন ছাত্রছাত্রী জড়ো হন। তার পরেই একজোট হয়ে পথে নেমেছি আমরা। অনেকেই এই প্রথম বার কোনও ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নামলাম।’’

Advertisement

যেমন বিদ্যাসাগর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র অর্ক সরকার। জানালেন, এই প্রথম তিনি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। অর্কর কথায়, ‘‘২০ ডিসেম্বর থেকে আমার পরীক্ষা শুরু। প্রস্তুতি অনেক বাকি। তবু নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে বাধ্য হলাম। এ আমাদের সকলেরই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আমাদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’’

দেবদত্তা বললেন, ‘‘আমার এখন পরীক্ষা চলছে। আবার ২০ তারিখ পরীক্ষা আছে। কিন্তু কাল জামিয়া মিলিয়ার ঘটনাটি জানার পরে রাতে ঘুমোতে পারিনি। পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও নিতে পারিনি ঠিক মতো। ছাত্রছাত্রীদের উপরে যে ভাবে একের পর এক আঘাত আসছে, তাতে আমরা কী ভাবে নিজেদের নিরাপদ বলব?’’ যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের দুই ছাত্র জানালেন, তাঁদেরও পরীক্ষা সামনে। কিন্তু তবু মিছিলে যোগ দিতে এসেছেন। এখন আর ফেসবুকে আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভবিষ্যতে তাঁরা রাস্তায় নেমে আরও সংগঠিত ভাবে এই আন্দোলন করবেন।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের তিন পড়ুয়াও এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা শান্তি মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন। তবে কোনও দলীয় বা জাতীয় পতাকা হাতে নয়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করতে কালো পতাকা নিয়ে এসেছিলেন আরশাদ আলি, এশারিম হাসমি ও মহম্মদ তাইয়ুব। রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া এবং আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের একের পর এক ভিডিয়ো দেখার পরে তিন জনই এনআরসি এবং নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করে মিছিলে যোগ দিয়েছেন। তাইয়ুবের কথায়, ‘‘১৯৪৭ সালে আমার পরিবার পাকিস্তান ছেড়ে এ দেশে থাকতে এসেছিল। এটা আমার দেশ। এখন আমাদের তাড়িয়ে দিলে কোথায় যাব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন