Stunt Biking

নিউটাউন থানায় আটক সঙ্গীদের ছাড়াতে সিভিক পুলিশকে অপহরণ করল বাইকবাজরা!

পুলিশ জানিয়েছে, রাত একটা নাগাদ থানাতে ডিউটিতে ছিলেন অ্যাসিস্টান্ট সাব ইনস্পেক্টর জীবেশ দাস। হঠাৎ তাঁর কাছে খবর আসে, প্রায় ২০-২৫ জন তরুণ-তরুণী হলদিরাম থেকে নিউটাউন যাওয়ার মূল রাস্তায় পেঁচার মোড়ের কাছে প্রায় ১৫টা মোটর সাইকেল নিয়ে স্টান্ট বাইকিং করছে।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ১৯:৩৮
Share:

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

রাস্তায় স্টান্ট বাইকিং চলছে। সেই খবর পেয়ে পুলিশ ধরতে গিয়েছিল বাইকারদের। তারা আটকও করে তিন জনকে। পুলিশ দেখে তখনকার মতো বাকিরা পালিয়ে গেলেও, ফের ফিরে আসে সেই স্টান্ট বাইকাররা। নিজেদের আটক সঙ্গীদের ছাড়াতে ফিল্মের কায়দায় বেপরোয়া বাইকাররা অপহরণ করল এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে। তার পর একটি অ্যাপ ক্যাবে চাপিয়ে, গাড়ির মধ্যেই বেধড়ক মারতে মারতে নিজেদের ডেরায় নিয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে রীতিমতো জখম অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। শনিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নিউটাউন থানা এলাকায়।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, রাত একটা নাগাদ থানাতে ডিউটিতে ছিলেন অ্যাসিস্টান্ট সাব ইনস্পেক্টর জীবেশ দাস। হঠাৎ তাঁর কাছে খবর আসে, প্রায় ২০-২৫ জন তরুণ-তরুণী হলদিরাম থেকে নিউটাউন যাওয়ার মূল রাস্তায় পেঁচার মোড়ের কাছে প্রায় ১৫টা মোটর সাইকেল নিয়ে স্টান্ট বাইকিং করছে।

সেই সময় রাস্তায় প্যাট্রোলিং ডিউটিতে ছিল সন্তু মোল্লা, মানোজ্বল মণ্ডল-সহ পাঁচ জন সিভিক পুলিশ কর্মী। তাঁরা থানা থেকে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন। ঘটনাস্থল থেকে দু’টি বাইক এবং তিন জন যুবককে আটক করা হয়। বাকিরা পুলিশ দেখে চম্পট দেয়।

Advertisement

বাকিদের খোঁজে আরও প্রায় দেড় ঘণ্টা ওই সিভিক ভলান্টিয়াররা বিভিন্ন রাস্তায় টহল দেন। নিউটাউন পুলিশ সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, টহল দেওয়ার সময় বাকি সহকর্মীদের থেকে একটু আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন মানোজ্বল। নিউটাউন থানার এক অফিসার বলেন, “আটক করা একটি বাইক নিয়ে মানোজ্জ্বল থানার দিকে আসছিলেন। তখন হঠাৎ করেই বাইক নিয়ে ফিরে আসে আটক যুবকদের সঙ্গীরা। এ বার তাদের সঙ্গে ছিল বাইকে ছাড়াও একটি অ্যাপ ক্যাব। ওরা এ বার দলে ভারী ছিল। মানোজ্বলকে একা পেয়ে ওই অ্যাপ ক্যাবে জোর করে তুলে নেয় ওরা। ভেতরে ছিল আরও চার যুবক।” ঘটনাটি ঘটে বিশ্ব বাংলা সরণিতে একটি হোটেলের সামনে। বাকি সিভিক ভলান্টিয়াররা কিছু বোঝার আগেই মানোজ্বলকে নিয়ে অ্যাপ ক্যাবটি ঝড়ের গতিতে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন- চাকরির টোপে এনে সোজা ডান্স বারে, হাওড়ায় উদ্ধার ৫৫ তরুণী​

আরও পড়ুন- ফ্রিজে লাশ, স্যুটকেসে লাশ, লাশ আলমারিতেও চাঞ্চল্য এলাহাবাদে​

বিধাননগর পুলিশ সূত্রে খবর, অপহৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গীরা দ্রুত থানায় ফিরে আসে। গোটা বিষয়টি তাঁরা জানান থানার আধিকারিকদের।

পুলিশ আটক যুবকদের জেরা করে জানতে পারে তাঁদের নাম দীপঙ্কর মণ্ডল, আকাশদীপ সাহা এবং বিপ্লব বিশ্বাস। জানা যায় ওঁরা প্রত্যেকেই কলকাতার চৌবাগা, নোনাডাঙা এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের কাছ থেকেই জানা যায় দলের বাকিরাও ওই এলাকার। সেই সূত্র ধরেই নিউটাউন থানার পুলিশ যোগাযোগ করে আনন্দপুর থানার সঙ্গে।

অন্য দিকে, নিউটাউন থানার পুলিশও বাহিনী নিয়ে বাইপাস ধরে এগোতে থাকে আনন্দপুরের দিকে। শেষ পর্যন্ত মাঝ রাস্তাতেই নিউটাউন থানার পুলিশ জানতে পারে, নোনাডাঙা বাজারের কাছে মানোজ্জ্বল এবং অ্যাপ ক্যাবটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।

কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গাড়ির মধ্যে ব্যাপক মারধর করা হয় মানোজ্বলকে। গাড়িতে থাকা সাগর মেটে এবং ঝোড়ো মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না ওই সিভিক পুলিশ কর্মী। জানা গিয়েছে অ্যাপ ক্যাব থেকে নামিয়ে ওকে একটি সাইকেলে তুলে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তার আগে লোহার রড দিয়েও মারে।’’

পুলিশের দাবি, মানোজ্বলকে আটকে রেখে আটক সঙ্গীদের পুলিশের হাত থেকে ছাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল এই স্টান্ট বাইকার যুবকরা। পরে কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায় অ্যাপ ক্যাবের চালককেও গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু দলের বাকিরা এখনও ফেরার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, পুলি‌শ কর্মীকে মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি এই যুবকদের কোনও পুরনো অপরাধের ইতিহাস নেই। কিন্তু পাকা অপরাধীদের মতো এই যুবকদের বেপরোয়া মনোভাব অবাক করে দিয়েছে পুলিশ কর্তাদেরও।

কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন