—প্রতীকী চিত্র।
সাধারণ মানুষ ভেবেছিলেন, এ বার হয়তো দুর্ভোগের নিষ্পত্তি হবে। গার্ডেনরিচ, নাদিয়াল ও আশপাশের একটা বড় অংশের রোগীকে আর দীর্ঘ পথ উজিয়ে এসএসকেএম বা এম আর বাঙুরে ছুটতে হবে না। কর্পোরেট হাসপাতালের মতো বিশাল, ঝকঝকে ৩০০ শয্যার ভবন যখন তৈরি হয়েছে তখন পরিষেবাও অনুরূপ হবে। ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরও।
কিন্তু মিথ্যা আশা!
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে গার্ডেনরিচ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ভবনের উদ্বোধন হয়। নভেম্বরে শুধুমাত্র মেডিসিনের ইন্ডোর চালু হয়েছিল। ব্যাস, ওখানেই পরিষেবা থমকে রয়েছে। চিকিৎসকের অভাবে এখনও পেডিয়াট্রিক্স, আই এবং সার্জারি-র ইন্ডোর পরিষেবা চালু হয়নি। আবার যে বিভাগে সবচেয়ে বেশি (৯ জন) চিকিৎসক রয়েছেন, সেই গাইনি বিভাগের ইন্ডোর চালু হয়নি সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনে এখনও পাইপলাইনে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু করা যায়নি বলে!
দিন কয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে উপযুক্ত চিকিৎসা-পরিকাঠামো না পেয়ে খোদ ব্লক স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে মারধর করে তাঁর গায়ে শৌচাগারের বিষ্ঠা লাগিয়ে দিয়েছিলেন মারমুখি রোগীর আত্মীয়েরা। অবিলম্বে বিভিন্ন বিভাগের ইন্ডোর পরিষেবা শুরু না হলে যে কোনও দিন তাঁদেরও একই হাল হতে পারে বলে আশঙ্কিত গার্ডেনরিচ সুপার স্পেশ্যালিটির চিকিৎসকেরা।
এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এমনিতেই এলাকাটি স্পর্শকাতর। ইতিমধ্যে একাধিক বার প্রতিশ্রুতি মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় জনবিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। কোনওমতে আমরা সামলেছি। এর পরে ভর্তি হতে না পেরে কোনও রোগীর মৃত্যু হলেই মানুষের ধৈর্যের বাধ ভাঙবে। তখন আর পরিস্থিতি সামলানো যাবে না।’’
গার্ডেনরিচে জনবিক্ষোভ এমন জায়গায় গিয়েছে যে, রোষ সামলাতে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ একটা খাতা তৈরি করেছেন। তাতে কাদের কাদের অস্ত্রোপচার দরকার, সেই নামগুলি ক্রমানুযায়ী নথিভুক্ত করা হচ্ছে। রোগীদের বোঝানো হচ্ছে— অস্ত্রোপচার চালু হলেই হাসপাতাল এই তালিকা ধরে তাঁদের ডেকে পাঠাবে। ইতিমধ্যে তালিকায় নামের সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়েছে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘নতুন, বড় হাসপাতাল হয়েছে শুনে মানুষ অনেক আশা নিয়ে আসছেন। এসে দেখছেন, পরিষেবা বেবাক শূন্য। তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। সেটা তো আর স্বাস্থ্য ভবনকে সামলাতে হচ্ছে না, সামলাতে হচ্ছে আমাদের।’’
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ঠিক হয়েছিল গার্ডেনরিচে সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে চোখের চিকিৎসা। চোখের দু’জন চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু কোটি টাকার ভবন তৈরি হলেও দেড়-দু’ বছর ধরে ১০ লক্ষ টাকার একটা সামান্য ‘অপথ্যালমিক মাইক্রোস্কোপ’ দফতর কিনে দিচ্ছে না। তাই ছানি থেকে শুরু করে চোখের কোনও অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না।’’
পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর বক্তব্য, ‘‘মাইক্রোস্কোপ কেনার প্রক্রিয়া চলছে। সব বিভাগে ডাক্তারও নিয়োগ হবে। অক্টোবরের মধ্যে সব হয়ে যাবে।’’ কিন্তু বছরখানেক আগেও তাঁর মুখে এই প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল বলে জানালে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।