কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ রুখতে কড়া হাতে রাশ ধরতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। যার ফলে প্রশাসনিক কাজের মধ্যে বিরতি টেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে রক্ষীর ভূমিকায় দেখা গেল খোদ রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধরচক্রবর্তীকে।
সোমবার, বেলা সাড়ে বারোটা থেকে সওয়া একটা পর্যন্ত মূল ফটকে দাঁড়িয়ে নজরদারি চালান তিনি। ভিতরে ঢুকতে যাওয়া সকলের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে দেখেন। এমনকী, যে যাঁরা পরিচয়পত্র আনতে ভুলে গিয়েছিলেন তাঁদের খাতায় সই করিয়ে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। পরে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে মূল ফটকে রক্ষীর ভূমিকায় দেখা গেল সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেনকেও। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি আদৌ কোনও সমাধানের পথ হতে পারে? ধন্দে বিশ্ববিদ্যালয়ও।
রেজিস্ট্রার পরে বলেন, ‘‘কলেজ স্ট্রিটের মতো ক্যাম্পাসে এ ভাবে নিরাপত্তা বাড়ানো মুশকিল। চেষ্টা করছি অন্য কিছু করার। তবে আমি মাঝেমধ্যেই সেখানে যাব, কারণ সকলকে একটা বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।’’
পুজোর সময়ে কখনও কখনও ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যেত রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তকে। বছর কয়েক আগে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে গোলমালের পরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৎকালীন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। গেটে পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করেন তিনি। গত বছর রক্ষীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কিন্তু এ ভাবে কত দিন গেট আগলে দাঁড়িয়ে থাকবেন রেজিস্ট্রার? তিনি বলেন, ‘‘আমি পরিস্থিতির উপরে নজর রাখব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যখন তখন যে কেউ কারণ ছাড়াই ঢুকে পড়বে, তা চলবে না।’’
আরও পড়ুন:পাঁচ শিশুকে বিক্রি করেন দাস দম্পতি
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ে একাধিকবার বিড়ম্বনায় পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। ২০১৫-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে ঢুকে উপাচার্যের ঘরের সামনে এক শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ ওঠে ওই বহিরাগতদের বিরুদ্ধেই। এ বছর জানুয়ারিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যেও মারামারি হয় ক্যাম্পাসের ভিতরেই। সম্প্রতি অন্য কলেজের পড়ুয়াদের বিক্ষোভে আটকে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। বহিরাগত প্রবেশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর তিরস্কারের মুখেও পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার কড়া পদক্ষেপ করছেন রেজিস্ট্রার।
রেজিস্ট্রার জানান, আপাতত ঠিক হয়েছে সব পড়ুয়া, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীকে গলায় পরিচয়পত্র ঝোলাতে হবে। উপযুক্ত কারণ না থাকলে বহিরাগতদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারি চালানো হবে রেজিস্ট্রারের ঘর থেকেই। পাশাপাশি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাকে ডেকে এই বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হবে বলেও জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা। তবে রেজিস্ট্রার জানান, প্রকল্পের বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপস করা হবে না।