এটিএমে রক্ষী নিয়োগেও এ বার সিন্ডিকেটের ছায়া

এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী পদে চাকরি নিয়েও মাথাচাড়া দিচ্ছে সিন্ডিকেট-রাজ। অভিযোগ, সম্প্রতি এর ‘শিকার’ হয়েছেন দমদমের একটি এটিএমের এক নিরাপত্তারক্ষী। আরও অভিযোগ, বিরোধী গোষ্ঠীর হাতে প্রহৃত হয়ে ওই যুবক আপাতত কাজে আসছেন না।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০২:২৮
Share:

বাড়িতে আশানুর।— নিজস্ব চিত্র

এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী পদে চাকরি নিয়েও মাথাচাড়া দিচ্ছে সিন্ডিকেট-রাজ। অভিযোগ, সম্প্রতি এর ‘শিকার’ হয়েছেন দমদমের একটি এটিএমের এক নিরাপত্তারক্ষী। আরও অভিযোগ, বিরোধী গোষ্ঠীর হাতে প্রহৃত হয়ে ওই যুবক আপাতত কাজে আসছেন না।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল? পুলিশ জানিয়েছে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষী, আশানুর জামান গাজি নামে ওই যুবককে মঙ্গলবার রাতে দমদম ক্যান্টনমেন্টে একদল লোক মারধর করে। বৃহস্পতিবার আশানুর দমদম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই
রাতে আবারও তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

আশানুর জানান, তিনি অল বেঙ্গল কন্ট্র্যাক্টচুয়াল সিকিওরিটি গার্ড ওয়ার্কার্স ডেভেলপমেন্ট ইউনিয়নের সদস্য। চলতি মাসেই নিরাপত্তারক্ষীর চাকরিটি পেয়েছিলেন। আশানুরের দাবি, তাঁকে মারধর করেছে বিরুদ্ধ সংগঠন অল বেঙ্গল সিকিওরিটি অ্যান্ড অ্যালায়েড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের লোকজন। এটির নেতৃত্বে রয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন। দু’টি সংগঠনই তৃণমূল পরিচালিত।

Advertisement

আশানুরের থেকে পুলিশ জেনেছে, মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ তিনি যখন এটিএমে ডিউটি করছিলেন, সে সময়ে একটি গাড়িতে জনা দশেক যুবক সেখানে আসে। আশানুরের কথায়, ‘‘ওই যুবকেরা দোলা সেনের লোক বলে পরিচয় দিয়েছিল। প্রথমেই ওরা আমার পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়। এর পরে মারধর করে এটিএম থেকে আমাকে বার করে দেয়। ওখানে আমি আর যাতে কাজ না করি, সে জন্য শাসানিও দেয়।’’ দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ধনঞ্জয় মজুমদারকে বুধবার পুরো ঘটনা জানান আশানুর। বৃহস্পতিবার দমদম থানায় অভিযোগও দায়ের করেন। ওই রাতে ফের ডিউটি করতে যান। আশানুরের অভিযোগ, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে আবারও ওই যুবকেরা এসে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। হুমকি দেয়, আমাকে ওই চত্বরে দেখা গেলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আমার জায়গায় ওদের লোকই কাজ করবে।’’ ঘটনার পরে রাতে বাদুড়িয়ার বাড়িতে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন আশানুর।

যে নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী হিসেবে আশানুর চাকরি পেয়েছিলেন, সেটির অফিস নিউ টাউনের মহিষগোঠে। সংস্থা সূত্রে খবর, ব্যাঙ্ক সেক্টরে বর্তমানে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের ক্ষেত্রে আইএনটিটিইউসি-র থেকে লোক নেওয়া অলিখিত নিয়ম। সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘‘আশানুরকে নিয়োগ করার পর থেকেই তাঁকে সরানোর জন্য চাপ আসছিল। কে কাজ করবে, তা ঠিক করতে আমরা দু’টি সংগঠনকেই অনুরোধ করেছিলাম নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিতে। ইতিমধ্যেই ওই ঘটনাটি ঘটে।’’

আশানুর পুরো ঘটনাটি তাঁর সংগঠনকে এবং উত্তর ২৪ পরগনার কংগ্রেস সভাপতি তাপস মজুমদারকে জানিয়েছেন। তাপসবাবু বলেন, ‘‘আশানুরকে মার খেতে দেখে পাড়ার লোকজন ভেবেছিলেন এটিএমে ডাকাতি হচ্ছে। পরে আমাকে ওই যুবক সব কথা বলেন।’’ যদিও সাংসদ তথা আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি দোলাদেবী সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। এমন কিছুই ঘটেনি। ঘটলে আমরাই ব্যবস্থা নিতাম। বাম আমল থেকে ব্যাঙ্ক সেক্টরে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ নিয়ে প্রচুর টাকার লেনদেন হতো। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আমাদের বদনাম করতেই এই সব গল্প ফাঁদা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement