সূত্র রসিদ

সিন্ডিকেটের গন্ধ ভেঙে পড়া সেতুর মশলাতেও

সেতুভঙ্গের পিছনেও এ বার সিন্ডিকেটের ছায়া। পোস্তায় বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুল বানাতে গিয়ে নির্মাতা সংস্থা আনন্দপুর-কালিকাপুরের বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মালমশলা নিয়েছিল কি না, লালবাজারের তদন্তে উস্কে উঠল সেই প্রশ্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৭
Share:

বিবেকানন্দ উড়ালপুলের ভেঙে পড়া অংশ সরানোর কাজ চলছে। — নিজস্ব চিত্র।

সেতুভঙ্গের পিছনেও এ বার সিন্ডিকেটের ছায়া। পোস্তায় বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুল বানাতে গিয়ে নির্মাতা সংস্থা আনন্দপুর-কালিকাপুরের বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মালমশলা নিয়েছিল কি না, লালবাজারের তদন্তে উস্কে উঠল সেই প্রশ্ন।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর: উড়ালপুলের নির্মাতা সংস্থা আইভিআরসিএলের রেডিমিক্স প্লান্ট রয়েছে আনন্দপুরে। বুধবার রাতে তদন্তকারীরা সেখানে হানা দিয়েছিলেন। সেখান থেকে হরেক নির্মাণ সামগ্রীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেগুলোর গুণগত মান যে আদৌ সন্তোষজনক নয়, খালি চোখেই তা বিলক্ষণ বোঝা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক তদন্তকারী।

এবং ওখানেই মিলছে সিন্ডিকেট-যোগের ইঙ্গিত। গোয়েন্দাদের একাংশের অনুমান, নিচুমানের ওই সব মশলা কেনা হয় স্থানীয় ইমারতি সিন্ডিকেট থেকে। এই ধারণার ভিত্তি?

Advertisement

লালবাজারের খবর: কসবায় আইভিআরসিএলের আঞ্চলিক সদর অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু কাঁচা রসিদ হাতে এসেছে। মূলত নির্মাণ সামগ্রী কেনা-বেচার রসিদ। তা দেখে তদন্তকারীদের সন্দেহ, লেনদেনের অপর পক্ষ কোনও সিন্ডিকেট। যারা সিমেন্ট, বালি, পাথর ছাড়াও লোহার রড ও ইস্পাত বেচেছে আইভিআরসিএল’কে। প্রসঙ্গত, নির্মীয়মাণ পথ-সেতুটিতে নিচু মানের স্টিল দেওয়া হচ্ছিল বলে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক অভিমত প্রকাশ করেছে রেলের সহযোগী নির্মাণ বিশেষজ্ঞ সংস্থা রাইটস।

এ বার মালমশলার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে পুলিশও, যার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের ভূমিকা। তদন্তকারীদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ: সেতু ঢালাইয়ের কংক্রিট আনা হয়েছিল আনন্দপুরের রেডিমিক্স প্লান্ট থেকে। সেই কংক্রিট আইভিআরসিএলের শ্রমিকেরা তৈরি করেছিলেন বটে, কিন্তু তার কাঁচামাল, মানে বালি-সিমেন্ট-পাথরকুচি ইত্যাদি কেনা হয়েছিল স্থানীয় ভাবে। এলাকার বেশ কয়েক জন যুবক মিলে তা সরবরাহ করেছিল।

অর্থাৎ, সিন্ডিকেট। জানার চেষ্টা চলছে, আনন্দপুরের ওই সিন্ডিকেটের সদস্য কারা। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সীর ভাইপো রজত বক্সীর কোম্পানি সন্ধ্যা এন্টারপ্রাইস যে ভাবে প্রকল্পে লেবার সাপ্লাই করত, সে ভাবে রেডিমিক্স প্ল্যান্টে কাঁচামাল দিত স্থানীয় কিছু ছেলে।’’ তাদের চিহ্নিত করা গেলে পিছনের মাথাদেরও হদিস মিলবে বলে পুলিশ আশাবাদী।

রেডিমিক্সে সিন্ডিকেট-যোগ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান দেবাশিস বড়াল অবশ্য শুক্রবার কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে লালবাজারের অন্দরের খবর, এ সব ব্যাপারে আইভিআরসিএলের ‘সিভিল এগজিকিউশন’ ম্যানেজার নিলয় রায়ের কাছ থেকে দামি তথ্য পাওয়ার আশা রয়েছে। ৩১ মার্চ সেতু ভাঙার পরে তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার নিজেই লালবাজারে এলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

তদন্তকারীদের দাবি, বিপর্যয় সম্পর্কে নিলয়বাবু ইতিমধ্যে অনেক তথ্য দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ তিনি ‘সাইটে’ গিয়েছিলেন। গিয়ে শোনেন, ৪০ নম্বর পিলারের উপরের দিকে বেশ কিছু নাট-বোল্ট ভেঙে বেরিয়ে এসেছে। উপস্থিত সাইট ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল মান্নার সঙ্গে আলোচনা করে তিনি ঝালাই করে কাজ চালানোর নির্দেশ দেন। শুধু তা-ই নয়, আইভিআরসিএলের তরফে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার যিনি, সেই তন্ময় শীলকে ফোনে আশ্বস্তও করেন।

শ্যামলবাবু আগেই গ্রেফতার হয়েছেন। নিলয়বাবুকে এ দিন কোর্টে তোলা হয়েছিল। আগামী সোমবার পর্যন্ত ওঁকে পুলিশি হেফাজতে রাখার আদেশ হয়েছে।

আরও পড়ুন:
বিপদ শিরোধার্য করেই কি দিন কাটবে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন