Crime

ট্যাংরা কাণ্ডে অপহরণের চেষ্টা হয়েছে, মানতে চাইছে না পুলিশ!

ঘটনা হল, মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ ওই প্রৌঢ় এক আত্মীয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করে ফিরছিলেন। কিছুটা সামনে নিজের শিশুকন্যাকে নিয়ে হাঁটছিলেন তাঁর পুত্রবধূ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:২৩
Share:

মঙ্গলবার রাতে এই স্কুলেই হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র

কখনও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে অভিযোগ না নেওয়ার। কখনও আবার অভিযোগ ওঠে দায়িত্বই না নিতে চাওয়ার। মঙ্গলবার রাতে খাস কলকাতায় এক মহিলাকে জোর করে অ্যাম্বুল্যান্সে টেনে তোলার চেষ্টা এবং তাঁকে রক্ষা করতে যাওয়া শ্বশুরকে ওই অ্যাম্বুল্যান্সেরই পিষে মারার ঘটনায় আবার পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে ঘটনাটিকে লঘু করে দেখানোর।

Advertisement

যা প্রকাশ্যে আসার পরে অনেকেরই প্রশ্ন, সুবিচারের স্বার্থে প্রমাণ সংগ্রহ করে অপরাধীকে ধরার পরিবর্তে পুলিশ কেন অভিযোগ হাল্কা করার অনুঘটক হিসেবে কাজ করে? ট্যাংরার ঘটনায় মৃত প্রৌঢ়ের ছেলে বুধবার দুপুরে বলছিলেন, ‘‘পুলিশ কোনও দিনই ঠিকঠাক কাজ করে না। আমরা যে অভিযোগ করেছি, সেটা লঘু করে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে প্রথম থেকেই।’’

ঘটনা হল, মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ ওই প্রৌঢ় এক আত্মীয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করে ফিরছিলেন। কিছুটা সামনে নিজের শিশুকন্যাকে নিয়ে হাঁটছিলেন তাঁর পুত্রবধূ। অভিযোগ, গোবিন্দ খটিক রোডে তপসিয়ার দিক থেকে আসা একটি অ্যাম্বুল্যান্স বধূর পথ আটকায়। অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা দু’জন তাঁর হাত ধরে টেনে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। চিৎকার শুনে ছুটে এসে অ্যাম্বুল্যান্সটি আটকানোর চেষ্টা করেন প্রৌঢ় শ্বশুর। কিন্তু সেই অবস্থাতেই তাঁকে পিষে দিয়ে বেরিয়ে যায় অ্যাম্বুল্যান্সটি। ওই ঘটনার পরেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান পরিবারের লোকজন।

Advertisement

ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আব্দুর রহমান এবং তাজউদ্দিন নামে ছাব্বিশ ও কুড়ি বছরের দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে স্রেফ ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করেছে ট্যাংরা থানার পুলিশ। সেখানে কিন্তু বধূকে অপহরণের চেষ্টা বা সেই সংক্রান্ত কোনও ধারাই নেই। যদিও ওই তরুণীর দাবি, ‘‘আমাকে হাত ধরে টেনে গাড়িতে তোলার চেষ্টা হয়েছিল বলে আমি নিজে পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।’’

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান মুরলীধর শর্মা অবশ্য বধূর দাবি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘ওই মহিলা মিথ্যা কথা বলছেন। ঘটনাস্থল ও তার আশপাশের অন্তত আটটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা খতিয়ে দেখেছি। ওই মহিলা অ্যাম্বুল্যান্সের ধারেকাছেও ছিলেন না।’’ সেই সঙ্গে গোয়েন্দা প্রধানের দাবি, ‘‘ওই মহিলা যে অভিযোগপত্র থানায় জমা
দিয়েছেন, তা তিনি নিজে লেখেননি। হাতের লেখাটি অন্য কারও। তবে সই তাঁর নিজের।’’

পুলিশকর্তার এই যুক্তি শুনে অনেকেই বলছেন, যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম, তাঁদের হয়ে অনেকেই তো চিঠি বা অভিযোগপত্র লিখে দেন। তার মানে নিজে না লিখতে পারলে অভিযোগ জানানো যাবে না? বা সেই অভিযোগ মিথ্যা? প্রশ্ন উঠছে, তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়ে থাকলে ওই বধূর বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না? গোয়েন্দা প্রধান আরও জানিয়েছেন, প্রৌঢ়ের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি রয়েছে তাঁদের কাছে। তাতে তিনি তাঁর বধূকে অপহরণের চেষ্টার কথা জানাননি। এ কথা শুনে মৃতের ছেলে বলেন, ‘‘যে মানুষটাকে ও ভাবে পিষে দেওয়া হয়েছিল, যাঁর দেহের উপরের অংশে কোনও পোশাক অবশিষ্ট ছিল না, যাঁর বুকের পাঁজর এবং পায়ের হাড় ভেঙে ঝুলছিল, তাঁর পক্ষে মৃত্যুর আগে এত কথা বলা সম্ভব?’’

পুলিশকর্মীদেরই একাংশ মৃত্যুকালীন জবানবন্দির তত্ত্ব উড়িয়ে দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁরা তুলে আনছেন কয়েক মাস আগের মানিকতলা থানার একটি ঘটনাকে। যেখানে অগ্নিদগ্ধ শাশুড়ি মৃত্যুর আগে জানিয়ে গিয়েছিলেন, পুত্রবধূ তাঁর গায়ে আগুন দিয়েছেন। তদন্তে উঠে আসে, ওই শাশুড়ি নিজেই গায়ে আগুন দেন।

কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার তুষার তালুকদার বললেন, ‘‘মহিলা হঠাৎ অ্যাম্বুল্যান্স সম্পর্কে এমন অভিযোগ করতে যাবেনই বা কেন? আদতে এ যেন এক স্বর্গরাজ্য! এখানে কিছুই খারাপ হতে পারে না, এটাই দেখানোর চেষ্টা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন