সোনারপুর

দরমার ঘরে কিশোরীর দেহ, ইঙ্গিত গণধর্ষণের

বাড়ির পাশের দরমা ঘেরা ঘরে মুখ থুবড়ে পড়েছিল কিশোরী। ডাকতে গিয়ে দিদিমা দেখেন, মাথা ভর্তি রক্ত। সোমবার সকালে দেহ উদ্ধারের পরে বিকেলে ময়না-তদন্তে ইঙ্গিত মিলল, নানা ভাবে যৌন হেনস্থা এবং গণধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে ষোলো বছরের মেয়েটিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৩
Share:

এখান দিয়েই ঘরে ঢোকে অভিযুক্তেরা, সন্দেহ তদন্তকারীদের। —ফাইল চিত্র।

বাড়ির পাশের দরমা ঘেরা ঘরে মুখ থুবড়ে পড়েছিল কিশোরী। ডাকতে গিয়ে দিদিমা দেখেন, মাথা ভর্তি রক্ত। সোমবার সকালে দেহ উদ্ধারের পরে বিকেলে ময়না-তদন্তে ইঙ্গিত মিলল, নানা ভাবে যৌন হেনস্থা এবং গণধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে ষোলো বছরের মেয়েটিকে। রবিবার গভীর রাতে সোনারপুর থানার কালীবাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে বলে জানায় পুলিশ। এই ঘটনায় ওই কিশোরীর এক বন্ধু-সহ মোট সাত জনকে আটক করা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল ওই কিশোরী। পুলিশ সূত্রে খবর, আপাতদৃষ্টিতে মৃতার গলায় কালসিটে দাগ এবং মাথায় ভারী বস্তুর আঘাত ছিল। মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা কিশোরীর পোশাকও কিছুটা অবিন্যস্ত ছিল। বিকেলে ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মেয়েটিকে একাধিক বার ধর্ষণ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়। ওই কিশোরীকে নানা ভাবে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে বলেও দাবি ময়না তদন্তকারীদের। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সব কিছুর পরে ওই কিশোরীকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভারী কোনও বস্তু দিয়ে তার মাথায় একাধিক বার আঘাতও করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরীর বাবার মিষ্টির দোকান রয়েছে সোনারপুর কালীবাজারে। ছোটবেলাতেই মা মারা যাওয়ায় তার পর থেকে দিদিমার কাছেই থাকত মেয়েটি। তার বাবা রাতে বাড়ির কাছে মিষ্টির দোকানেই থাকেন।

Advertisement

কী ঘটেছিল রবিবার রাতে? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, রাতে দিদিমার কাছেই থাকত ওই কিশোরী। পরীক্ষা সামনে, তাই ইদানীং গভীর রাত পর্যন্ত পড়শোনা শুরু করেছিল সে। ঘরে আলো জ্বললে দিদিমার ঘুমের অসুবিধা হবে। তাই দিন দুয়েক ধরে বাড়ি লাগোয়া দরমা ঘেরা ঘরেই পড়াশোনা করছিল সে। দিদিমা জানান, রবিবারও রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দরমার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখেছিলেন নাতনি পড়শোনা করছে। পরে নিজের ঘরের দরজা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘুম ভেঙে দেখেন, দরমার ঘরে তখনও আলো জ্বলছে। ভিতরে নাতনি উপুড় হয়ে শুয়ে। ওই বৃদ্ধা বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়েটা হয়তো পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছে। মাথাটা তুলতে গিয়ে দেখি রক্তমাখা।’’ তার পরেই তিনি খেয়াল করেন দরজার পাশে দরমার একটি অংশ ভাঙা। দিদিমা জানান, ওই ভাঙা অংশ দেখেই সন্দেহ হয় তাঁর। তড়িঘড়ি তিনি জামাইকে খবর দেন। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়।

পুলিশ জানায়, দরমার ঘরটির কাছে মদের বোতল এবং কিছু খাবারের টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। ঘরের পাশ থেকে মিলেছে একটি রক্তমাখা ইট। তদন্তকারীদের দাবি, রবিবার রাতে ওই কিশোরীর ঘর থেকে একটু দূরে মদের আসর বসেছিল। তাতে ছিলেন স্থানীয় কয়েক জন যুবক। ওই কিশোরীর বাবার দোকানের এক কর্মচারীও তাতে যোগ দিয়েছিলেন বলে জেনেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের কথায়, সন্দেহের বাইরে নয় মেয়েটির এক বন্ধুও।

এক তদন্তকারী জানান, ওই বন্ধুটি ছাড়াও বাবার মিষ্টির দোকানে মাঝে মাঝে উপস্থিত থাকার সূত্রে এক কর্মচারীর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল ওই কিশোরীর। সে ক্ষেত্রে ত্রিকোণ প্রেমের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিন সকালে সেই বন্ধু-সহ মদের আসরে উপস্থিত মোট সাত জনকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ওই আসরে থাকা যুবকেরাই এই ঘটনায় জড়িত। পুলিশের দাবি, ওই কিশোরী ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে রাখায় দরমার একটি অংশ ভেঙে ভিতরে ঢুকেছিল আততায়ীরা। তদন্তকারীরা জানান, ছোট ঘরটিতে চাদর পেতে বসে পড়াশোনা করছিল মেয়েটি। ওই চাদর পেঁচিয়েই তার শ্বাসরোধ করা হয় বলে তাঁদের দাবি।

প্রাথমিক ভাবে ময়না-তদন্তকারীদের অনুমান, রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যেই ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তার দিদিমা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মাছ-ভাত খেয়ে বই নিয়ে দরমার ঘরে চলে গিয়েছিল নাতনি। ময়না-তদন্তকারীদের ব্যাখা, ওই খাবার পুরোপুরি হজম হয়নি। পাকস্থলীতে ভাত ও মাছের উপস্থিতি মিলেছে। খাবার হজম হতে ন্যূনতম ২ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে খাওয়ার ঘন্টা খানেক পরেই মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।

পুলিশ জেনেছে, সম্প্রতি বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার কারণে দিদিমার সঙ্গেও মনোমালিন্য চলছিল ওই কিশোরীর। স্থানীয় বাসিন্দের একাংশের কথায়— রাতে নাতনির সঙ্গে তার বন্ধু দেখা করতে আসত বলে জানতে পেরেছিলেন দিদিমা। সেটাই মনোমালিন্যের কারণ।

তবে তদন্তকারীদের প্রশ্ন, রাতে ফুট চারেক দূরে দরমার ঘরে একাধিক ব্যক্তি এক জনের উপর চড়াও হওয়ার পরেও বৃদ্ধা কোনও শব্দ পেলেন না কেন? সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, পরিচিত কেউই প্রথমে ওই কিশোরীর ঘরে এসেছিল। সেই কারণেই মেয়েটি কোনও রকম চিৎকার-চেঁচামেচি করেনি। তার পরে বাকিরা একে একে ঘরে ঢুকে আসে।

পুলিশ জানায়, আটক হওয়া সাত জনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কয়েকটি সূত্রও পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন