অঘটন: পোশাক ছেড়ে এই খালেই নেমেছিল আরিয়ানেরা। রবিবার, ডুমুরজলায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
গত ন’মাস ধরে চলছে খাল সৌন্দর্যায়নের কাজ। অথচ, তার জন্য খালের চারপাশে বেড়া দেওয়া হয়নি। মোতায়েন করা হয়নি নিরাপত্তারক্ষীও। সেই খোঁড়া খালে ক্রিকেটের বল কুড়োতে নেমে জলে ডুবে মৃত্যু হল এক কিশোরের। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সকালে, হাওড়ার ডুমুরজলায়। মৃতের নাম আরিয়ান বর্মা। বাড়ি মধ্য হাওড়ার কুন্দলবাগানে। গত বছরের জুলাইয়ে ওই একই জায়গায় জলে ডুবে মারা গিয়েছিল এক কিশোর। সেই ঘটনার পরেও হাওড়া পুরসভা যে কোনও শিক্ষা নেয়নি, এ দিনের ঘটনাই তার প্রমাণ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি সপ্তাহান্তেই ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে
ক্রিকেট-ফুটবল খেলতে আসে ছেলেরা। এ দিনও গোটা স্টেডিয়াম চত্বর জুড়ে নানা ধরনের খেলা চলছিল। হেলিপ্যাডের পাশে একটি মাঠে ক্রিকেট খেলছিল সন্ধ্যাবাজার এলাকার কুন্দলবাগান ও মুখার্জিবাগান থেকে আসা ১০-১২ জন কিশোর। অধিকাংশই নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়া।
পুলিশ জানায়, খেলা চলাকালীন ক্রিকেট বলটি হেলিপ্যাডের সামনে নতুন করে কাটা খালে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সেটি তোলার জন্য খালের জলে নেমে পড়ে আরিয়ান-সহ পাঁচ জন। খালের গভীরতা বেশি না হলেও সাঁতার না জানায় সোনু আগরওয়াল নামে এক কিশোর আচমকা জলে খাবি খেতে থাকে। তাকে বাঁচাতে যায় আরিয়ান। কিন্তু নিজেই খালের কাদায় পা আটকে ক্রমশ তলিয়ে যায়।
প্রেমকুমার সাউ নামে এক কিশোর বলে, ‘‘কী ঘটতে চলেছে বুঝতে পেরে আমরা চিৎকার শুরু করি। তখন এক কাকু জলে ঝাঁপিয়ে সোনুকে তুলে আনেন। কিন্তু চোখের সামনে আরিয়ান তলিয়ে যায়।’’ পুলিশ জানায়, প্রায় ১০ মিনিট পরে স্থানীয় বাসিন্দারা আরিয়ানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে
মৃত ঘোষণা করেন।
এ দিকে, কুন্দলবাগানে ঘটনার খবর পৌঁছতেই ছুটে আসেন সেখানকার লোকজন। এলাকার এক বাসিন্দা পিন্টু মণ্ডল বলেন, ‘‘নতুন কাটা এই খাল আমাদের কাছে আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। ছোট ছেলেদের নামতে দেখলে আমরা বকুনি দিয়ে তাদের তুলে আনি। কিন্তু সব সময়ে তো তা করা সম্ভব নয়। অবিলম্বে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিক প্রশাসন।’’
খবর জানাজানি হতেই শোকের ছায়া নেমে আসে কুন্দলবাগান-মুখার্জিবাগান চত্বরে। নিম্নবিত্ত পরিবারে একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে কথা বলার অবস্থায় নেই আরিয়ানের মা-বাবা। কোনও রকমে আরিয়ানের বাবা রাজেশ বর্মা বলেন, ‘‘ছুটির দিন হলেই ও ডুমুরজলায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যেত। কিন্তু এমন হবে কখনও ভাবিনি।’’
হাওড়া পুরসভার কমিশনার তথা প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘খুবই র্মমান্তিক ঘটনা। ওই জায়গায় কী ভাবে খালে নামা বন্ধ করা যায় ভাবছি। খালের চারপাশে আপাতত বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
কিন্তু গত ন’মাসের মধ্যে এই পদক্ষেপ করা গেল না? পুর কমিশনার বলেন, ‘‘টানা কাজ চলায় বেড়া
দেওয়ার কথা বা রক্ষী মোতায়েন করার কথা ভাবা হয়নি।’’