Kolkata Traffic Police

ডাক্তার-পুলিশের মিলিত চেষ্টায় সুস্থ হল শিশু

হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে গিয়ে এ দিন দেখা যায়, বাচ্চাদের জন্য তৈরি খেলার জায়গায় ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত সৈয়ম।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০ ০১:২৯
Share:

আরোগ্য: বাইপাসের একটি হাসপাতালের খেলার ঘরে বাবা-মায়ের সঙ্গে সৈয়ম। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

তিন বছরের কোলের শিশুকে নিয়ে মা মমতা কুমার প্রতিদিন পরিচারিকার কাজে যান মৌলালির সিআইটি রোডের একটি বাড়িতে। ওই এলাকাতেই ভাড়ায় নেওয়া রিকশা চালান বাবা মুকেশ কুমার। প্রতিদিনের রিকশা-ভাড়া বাবদ মালিককে দিতে হয় ৭০ টাকা। বাকি যা আয় হয়, তা মুকেশের।

Advertisement

ইএম বাইপাস লাগোয়া উত্তর পঞ্চান্নগ্রামের এক বস্তিতে এ ভাবেই চলছিল চার জনের সংসার। তাতে হঠাৎই যেন বজ্রাঘাত হয় গত শনিবার। মুকেশের কাছে ফোন আসে, তাঁর বড় ছেলে, বছর সাতেকের সৈয়ম কুমারের ছবি হাতে পুলিশ এসেছিল। সে নাকি বাইপাসের উপরে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিল। মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এখনই যেতে হবে।

কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার পর থেকেই মুকেশদের প্রধান মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায় অর্থসঙ্কট। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ সামলে ছেলেকে বাঁচানো যাবে কি না, সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে যায় মা-বাবার। অবশেষে সকলের প্রচেষ্টায় সুস্থ হয়ে ওঠা সেই ছেলেকে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে কুমার দম্পতি বললেন, ‘‘প্রায়ই শুনি, রাস্তায় অসুস্থ লোককে পড়ে থাকতে দেখেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। কত লোক আবার টাকার অভাবে সুচিকিৎসা পান না। সেখানে প্রতিবেশী, পুলিশ আর ডাক্তারেরা যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে তুলেছেন, ভুলতে পারব না।’’

Advertisement

ঘটনাটি ঠিক কী?

পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ উত্তর পঞ্চান্নগ্রামের কাছে বাইপাসের সার্ভিস রোডে একটি শিশুকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিলজলা ট্র্যাফিক গার্ডের সিভিক ভলান্টিয়ার অধীর বিশ্বাস। তার কান থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। অধীরই খবর দেন ওই ট্র্যাফিক গার্ডের এক সার্জেন্ট প্রণব দেবনাথকে। তাঁরা দু’জনে বাচ্চাটিকে রুবি হাসপাতালে নিয়ে যান। অধীর বলেন, ‘‘তখনও বাচ্চাটির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। সম্ভবত কোনও চলন্ত লরির পিছনে আর একটি বাচ্চার সঙ্গে ঝুলছিল ও। হঠাৎ পড়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে আমি সেখানেই থেকে যাই। প্রণব স্যর বাচ্চাটির বাড়ির খোঁজে বেরোন।’’

রুবি হাসপাতালের চিফ জেনারেল ম্যানেজার শুভাশিস দত্ত জানান, জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ইন্দ্রনীল মিত্র শিশুটিকে দেখার পরে তাকে পরীক্ষা করেন পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু)-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অনির্বাণ বসু। দ্রুত শিশুটিকে পিকু-তে স্থানান্তরিত করা হয়। শুভাশিসবাবুর কথায়, ‘‘মাসখানেক আগেই আমাদের হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট চালু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেটা খুবই কাজে লেগেছে।’’ অনির্বাণবাবু বলেন, ‘‘ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি হওয়ায় বাচ্চাটি ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল। প্রথম কাজই ছিল আঘাত যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেই ব্যবস্থা করা। দ্রুত ওই শিশুকে পিকু-তে ভেন্টিলেট করে সেই চেষ্টাই করা হয়েছে।’’

ট্র্যাফিক সার্জেন্ট প্রণববাবু বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বাচ্চাটির ছবি নিয়ে ঘটনাস্থলের আশপাশে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছি আমরা। শেষে এক জন ওকে চিনতে পারেন। বাচ্চাটির বাড়ি গিয়ে জানতে পারি, ওর মা লোকের বাড়িতে কাজ করেন। বাবা রিকশা চালান। তাঁরা সে সময়ে কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আমার ফোন নম্বর ওই পাড়ায় দিয়ে এসেছিলাম। চিকিৎসকদের বলেছিলাম, সকলে সাহায্য করতে রাজি আছি। বাচ্চাটার ভাল ভাবে চিকিৎসা হোক। আমাদের প্রত্যেকেরই তো সন্তান আছে, চিকিৎসকেরাও তাই যথাসাধ্য করেছেন।’’

হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে গিয়ে এ দিন দেখা যায়, বাচ্চাদের জন্য তৈরি খেলার জায়গায় ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত সৈয়ম। তাতে কয়েক দফা লাথি মেরে সে বাবাকে বলল, ‘‘সাইকেলে বসছি, পিছন থেকে ঠেলো।’’

বাড়ি গিয়ে কী করবে? একগাল হেসে সৈয়ম বলে, ‘‘মাছ খাব। মাছ খেতে আমি খুব ভালবাসি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন