aged people

আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত বৃদ্ধ দম্পতির পচাগলা দেহ উদ্ধার

তদন্তকারীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে রহস্যজনক কিছু পাওয়া যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০ ০১:৩৪
Share:

প্রতীকী চিত্র।

ঘরের ভিতর থেকে বৃদ্ধ দম্পতির পচন ধরা দেহ উদ্ধার হল। সোমবার রাতে উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্ক থানা এলাকার রামদুলাল সরকার স্ট্রিটের ঘটনা।

Advertisement

পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন বিশ্বজিৎ মিত্র (৭১) ও শিপ্রা মিত্র (৬৮)। তাঁরা নিঃসন্তান ছিলেন। সোমবার রাতে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে উদ্ধার হয় ওই দম্পতির দেহ। বৃদ্ধার দেহটি পড়েছিল বিছানায়। আর বৃদ্ধের দেহ পড়েছিল মেঝেয়। দেহে পচন ধরায় দু’জনেরই মুখ এতটা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে তাঁদের চেনা যাচ্ছিল না।

তদন্তকারীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে রহস্যজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তাঁরা দেখে নিতে চাইছেন ভিসেরা রিপোর্টও। দু’টি দেহের আশপাশ দেখে পুলিশের সন্দেহ, স্ত্রীকে জোর করে কিছু খাইয়েছিলেন বা খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। তার জেরেই শিপ্রাদেবীর মৃত্যু হয়েছে। পরে আত্মঘাতী হন বিশ্বজিৎবাবুও। দীর্ঘ আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে চলা দম্পতির অনাহারে মৃত্যু হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Advertisement

আরও পড়ুন: মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির নামে ‘প্রতারণা’, গ্রেফতার ১

স্থানীয়দের থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই দম্পতি কয়েক বছর ধরে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার জেরেই তাঁরা এই চরম পথ বেছে নেন। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, গিরিশ পার্কের ৪৯/২বি রামদুলাল সরকার স্ট্রিটের একটি বহুতলের তেতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন ওই দম্পতি। ৪৫ বছর ধরে তাঁরা ওই ফ্ল্যাটেরই বাসিন্দা ছিলেন। হাতিবাগানে ছাপাখানা ছিল বিশ্বজিৎবাবুর। ব্যবসা না চলায় ১০-১৫ বছর আগে তিনি সেটি বিক্রি করে দেন। পুলিশ জেনেছে, ব্যাঙ্কে জমানো টাকায় প্রথম কয়েক বছর চললেও শেষ আট-ন’বছর ওই দম্পতি চরম আর্থিক সঙ্কটে ছিলেন

মিত্র পরিবারের প্রতিবেশী, ওই বহুতলেরই বাসিন্দা নরেশ খাণ্ডেলওয়াল ও গৌতম শেঠিয়া জানান, বিশ্বজিৎবাবুর কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলেও শিপ্রাদেবী সুগার-সহ নানা অসুখের কারণে কার্যত শয্যাশায়ী ছিলেন। তবে বিশ্বজিৎবাবু মাঝেমধ্যে রাস্তায় বেরোতেন চা-সিগারেট কিনতে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের পরে তাঁকে দেখা যায়নি।

বহুতলের বাসিন্দারা পুলিশকে জানান, দুর্গন্ধ পেয়ে তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন ইঁদুর মরেছে। নরেশ জানান, প্রথমে কারও মাথাতেই আসেনি মিত্র পরিবারের কথা। শেষে রবিবার তাঁরা বুঝতে পারেন ওই ফ্ল্যাটের ভিতর থেকেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

শেষে বিশ্বজিৎবাবুর মোবাইলে ফোন করেন গৌতম। কিন্তু তিনি ফোন না ধরায় সবাই থানায় গিয়ে ঘটনাটি জানান। সোমবার রাত ১১টা নাগাদ গিরিশ পার্ক থানার পুলিশ সেখানে পৌঁছে দেহ দু’টি উদ্ধার করে।

আরও পড়ুন: দুর্ভোগ কমলেও জমা জল ফেলা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

প্রতিবেশীরা জানান, গত আট-ন’বছর ধরে ওই দম্পতির দু’বেলা ঠিক মতো খাওয়ার টাকাও ছিল না। পড়শিরা মাঝেমধ্যেই তাঁদের সাহায্য করতেন। এমনকি, লকডাউনের সময়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের তরফে যে সাহায্য মিলত, লুকিয়ে লাইন দিয়ে তা-ও নিয়ে আসতেন বিশ্বজিৎবাবু।। পড়শি গৌতম বলেন, ‘‘এক এক দিন একটা সিগারেট খেতে চাইতেন। কিন্তু অর্ধেকটা খেয়ে বাকিটা পরে খাবেন বলে রেখে দিতেন। কখনও তা দেখে একটার বদলে বেশ কয়েকটা বা একটা প্যাকেটও কিনে দিতাম।’’

এ দিকে, গৌতমকে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫৪ মিনিটে ফোন করেছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। কিন্তু সেই সময়ে ফোন ধরতে পারেননি গৌতম। পুলিশের ধারণা, তার পরেই ওই দম্পতির মৃত্যু হয়। তাঁদের কোনও আত্মীয় পুলিশের সঙ্গে এ পর্যন্ত যোগাযোগ করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন