আমার পাড়া

হারিয়ে গিয়েছে লাঠিখেলা

বিপ্লবী পুলিন দাস স্ট্রিটসে সব গল্পের নেপথ্যে জড়িয়ে আছে এ পাড়া, এ অঞ্চলটা। তখন বাড়ির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। সন্ধ্যা হলেই সার্কুলার রোডের ও ধারে জলা জায়গায় বাঁশ বন থেকে শোনা যেত শিয়ালের ডাক। এ সব শুনতে শুনতে ডুব দিতাম কল্পনার বিচিত্র জগতে। সেই পাড়া, সেই অঞ্চলটা থাকলেও বদলেছে তার চরিত্র।

Advertisement

দিলীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ১২:০০
Share:

গল্প শোনার নেশা আমার চিরদিনের। আজ পাড়ার কথা লিখতে বসে কত গল্প, ঘটনা আর স্মৃতি আচ্ছন্ন করে তুলছে! সে সব গল্পের নেপথ্যে জড়িয়ে আছে এ পাড়া, এ অঞ্চলটা। তখন বাড়ির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। সন্ধ্যা হলেই সার্কুলার রোডের ও ধারে জলা জায়গায় বাঁশ বন থেকে শোনা যেত শিয়ালের ডাক। এ সব শুনতে শুনতে ডুব দিতাম কল্পনার বিচিত্র জগতে। সেই পাড়া, সেই অঞ্চলটা থাকলেও বদলেছে তার চরিত্র।

Advertisement

পাড়ার পরিধি কমতে কমতে একটা রাস্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছে। অতীতের বাদুড়বাগান অঞ্চল আজকের বিপ্লবী পুলিন দাস স্ট্রিট। এক কালের বর্ধিষ্ণু বাঙালিপাড়ায় ক্রমেই বেড়ে চলেছে অবাঙালিদের সংখ্যা। তৈরি হয়েছে এক মিশ্র সংস্কৃতি। পুরনো প্রতিবেশী অনেকেই এ পাড়ার পাঠ গুটিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। এক একে পুরনো বাড়ি ভেঙে তৈরি হচ্ছে বহুতল। কমেছে পাড়া-পড়শিদের মধ্যে যোগাযোগ। হঠাৎ কোনও বাড়ির ছাদে সাদা প্যান্ডেল দেখে বুঝতে হয় পরিচিত কেউ প্রয়াত হয়েছেন।

কাছেই এক দিকে কলেজ স্ট্রিট, অন্য দিকে রাজাবাজার। কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের প্রভাব পাড়াতেও পড়েছে। আশপাশে তৈরি হয় চামড়ার চটি, জুতো। এতে কিছু মানুষের অন্নসংস্থান হলেও, পাড়ার একাংশের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন হয়ে উঠছে। রোজ নিয়ম করে পাড়াটা পরিষ্কার হয় ঠিকই, তবে কিছু মানুষের অসচেতনতার জন্য যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে আবর্জনা।

Advertisement

মনে পড়ছে ছেলেবেলায় খেলার কথা। কাছেই সার্কুলার রোডে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ি। সেখানে‌ই এখন বসু বিজ্ঞান মন্দির। তখন লেডিস পার্কে বল খেলতে গিয়ে তাঁর বাড়িতে বল পড়লে বকা খেতে হতো জগদীশচন্দ্রের স্ত্রী লেডি অবলা বসুর কাছে। আগে পাড়ার রাস্তায় ছোটরা খেলাধুলো করলেও এখন যান চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় কমেছে সেটা। মাঝেমধ্যেই যে তীব্র গতিতে চলে আসে বেপরোয়া বাইক।

যাঁর নামে পাড়ার এই রাস্তা, সেই পুলিনবিহারী দাস থাকতেন এখানেই। ছিল তাঁর আখড়া যেখানে লাঠি খেলা, ছোরা খেলা শেখানো হতো। মনে পড়ছে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের কথাও। এক দিন বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে টেনিস খেলছি। হঠাৎ পুলিনবাবু এগিয়ে বকা দিয়ে বললেন, ‘‘এটা খেলার জায়গা নয়। তবে আসতে পারো যদি লাঠি খেলা আর শারীরচর্চা করতে চাও।’’

কাছেই পঞ্চানন ঘোষ লেনে বালিকা ব্যায়াম সমিতি গড়ে তুলেছিলেন পাড়ার রোহিণী রায়। সে যুগে এটা দৃষ্টান্তমূলক। সেখানে মেয়েদের ব্যায়াম, ধ্রুপদীসঙ্গীত, নাটক শেখানো হতো।

লেখক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন