Coronavirus

করোনা-ক্লান্তি নিয়ে রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রেই শারীরিক ক্লান্তি অনুভূত হয়। পাশাপাশি সারা শরীরে ব্যথা, জ্বরও থাকে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ০২:৫৬
Share:

নিঃশব্দে: করোনার উপসর্গ হিসেবে দেখা দিচ্ছে ক্লান্তির ভাব।

অন্য কোনও উপসর্গ নেই। শুধুমাত্র খুব ক্লান্তি। সেই ক্লান্তি যদি ধারাবাহিক ভাবে কিছু দিন থাকে, তা হলে সমস্যাটি একেবারেই হাল্কা ভাবে নেওয়া উচিত নয়, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শুধু ক্লান্তি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এমনকি করোনা আক্রান্তদের কেউ আবার বাড়িতে মাথা ঘুরে পড়েও গিয়েছেন।

Advertisement

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রেই শারীরিক ক্লান্তি অনুভূত হয়। পাশাপাশি সারা শরীরে ব্যথা, জ্বরও থাকে। সার্স-কোভ-২ আক্রান্ত অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ব্যথা বা জ্বর কিছুই থাকছে না। সেটাই বিপদের কারণ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তার কারণ, সচরাচর ক্লান্ত হওয়াকে কেউই খুব বেশি গুরুত্ব দেন না। এমনিতে বছরের এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় বৃষ্টিহীন দিনে অসম্ভব ঘাম হয়। এতেও শারীরিক ক্লান্তি আসে। সেই কারণে সাধারণ ক্লান্তির সঙ্গে কোভিড সংক্রমণজনিত ক্লান্তিকে বহু ক্ষেত্রে আলাদা করা যাচ্ছে না। তাতে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একটি অংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জ্বর, শুকনো কাশির পাশাপাশি শারীরিক ক্লান্তিকেও করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে উল্লেখ করেছে। যদিও ‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, কোভিড পজ়িটিভ নিয়ে এখনও পর্যন্ত যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের সিংহভাগেরই প্রাথমিক উপসর্গ হল জ্বর ও শুকনো কাশি। পরিসংখ্যান বলছে, ৯৮ শতাংশ আক্রান্তের প্রাথমিক উপসর্গ জ্বর। ৭৬-৮২ শতাংশের শুকনো কাশি। ১১-৪৪ শতাংশ আক্রান্তের উপসর্গ হল ক্লান্তি। তা ছাড়া অন্য উপসর্গও রয়েছে। বর্তমানে শুধুই সংক্রমণজনিত ক্লান্তি নিয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন গবেষক-চিকিৎসকদের একটি অংশ।

Advertisement

ক্লান্তির কারণ ব্যাখ্যা করে গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাধারণ অবস্থায় কোষের ভিতরে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের একটি ভারসাম্য থাকে। সার্স-কোভ-২ শরীরে ঢুকে বিঘ্নিত করে সেই ভারসাম্যকে। মাইক্রোবায়োলজিস্ট সুখেন্দু মণ্ডল বলছেন, ‘‘ভাইরাস আক্রান্তদের শরীরে অক্সিজেনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার জন্য কোষগুলো ঠিক ভাবে কাজ করতে পারছে না। কারণ, কোষের যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন, তা পৌঁছচ্ছে না। সেই কারণে শক্তির ঘাটতি হচ্ছে।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনবিজ্ঞান ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বদীপ দাস বলছেন, ‘‘সার্স-কোভ-২ শরীরে ঢুকলে ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ায় যে পরিমাণ অক্সিজেন কোষগুলিতে পৌঁছনোর কথা, তা পৌঁছয় না। ফলে কোনও পরিশ্রম না করেও আক্রান্তেরা ক্লান্ত হতে পারেন।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, বছরের এই সময়ে ঘাম হওয়ার কারণে সাধারণ ক্লান্তি ভাব থাকেই। কারণ, ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে যাঁরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁরাও এই সময়ে ক্লান্তিবোধ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ক্লান্তির মাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেলে বা সেটা ধারাবাহিক ভাবে বাড়তে থাকলে কিন্তু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। সাধারণ ক্লান্তি ধরে হাল্কা ভাবে নিলে হবে না।’’

ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, সার্স-কোভ-২ সংক্রমণে খুব বেশি ‘ডিহাইড্রেশন’ হয়। এমন রোগীও ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে যিনি শরীরে জলের অভাব হওয়ায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন। অনেকের জিভ শুকিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। অর্পণবাবুর কথায়, ‘‘করোনা রোগীদের চিকিৎসা করার সময়ে আমরা ধরেই নিই যে তাঁরা ডিহাইড্রেটেড। খুব বেশি ক্লান্ত হওয়ার সেটাও একটা কারণ। এই সময়ে ধারাবাহিক ক্লান্তিকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement