Sri Lanka

Sri Lanka: ‘নেই-রাজ্যে’ নেতা কই, হতাশ শহরের শ্রীলঙ্কানরা

শ্রীলঙ্কার নাগরিক, তবু মনেপ্রাণে ভারতীয় ৭৬ বছরের বৌদ্ধ ভিক্ষুর জীবনটা একযোগে দু’দেশের নৌকায় পা রেখেই কাটছে।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২২ ০৫:৪৪
Share:

(বাঁ দিকে) মহাবোধি সোসাইটির মোহন্ত পি সিওয়ালি থেরো। কলকাতায়। (ডান দিকে) কলকাতার হোমিয়োপ্যাথির পড়ুয়াদের রাজাপক্ষে-বিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: নিজস্ব চিত্র, ফেসবুক।

দেশটা কী ছিল, আর কী হয়েছে! মহাবোধি সোসাইটির প্রাক্তন জেনারেল সেক্রেটারি তথা প্রধান সঙ্ঘনায়ক রেবত নায়ক থেরো ফোনে আফশোস করছিলেন। ‘‘সেই ১৯৭৫-এ প্রথম যখন কলকাতায় আসি, ভারতের এক টাকায় শ্রীলঙ্কার ৮০ পয়সা ছিল। এখন সেটা শ্রীলঙ্কার সাড়ে চার টাকার বেশি!’’

Advertisement

শ্রীলঙ্কার নাগরিক, তবু মনেপ্রাণে ভারতীয় ৭৬ বছরের বৌদ্ধ ভিক্ষুর জীবনটা একযোগে দু’দেশের নৌকায় পা রেখেই কাটছে। দ্বীপরাষ্ট্রে জনতার বিদ্রোহ, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পতনের পরে পার্লামেন্টে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্বে সঙ্ঘনায়কের মনে গভীর হতাশা গ্রাস করছে। তিনি বলছেন, “রাজনৈতিক মহলে গোতাবায়ার প্রভাব এখনও রয়েছে। সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাকিদেরও ভরসাযোগ্য লাগছে না।”

কলকাতায় ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার ছাত্রছাত্রীদের মনেও হতাশা। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিয়োপ্যাথি’র ইন্টার্ন তামিল শ্রীলঙ্কান নাটকুনারাজাহ পাউজিথান বা ফাইনাল ইয়ারের সিংহলি ছাত্র চামুরু কাঞ্চনারা হতাশ, এতগুলো বছর কলকাতায় আমানত রেখে কী পাব ভবিষ্যতে? চাকরি কি জুটবে নিজের দেশে! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য স্নাতক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্রী মিনুপমা কারিয়াওয়াসাম বা রবীন্দ্রভারতীর বি টি রোডক্যাম্পাসে ধ্রুপদী যন্ত্রসঙ্গীতে বিএ পড়ুয়া কে গীতমা হংসানিও আশঙ্কায় কাবু। মিনু ভাবছেন, পড়াশোনার পরের ধাপ কোথায় সারবেন! তাঁর কথায়, “দেশকে ভালবাসি, কিন্তু মা-বাবা বলছে, দেশে কি চাকরি পাবি!”

Advertisement

চড়া মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় শ্রীলঙ্কায় স্থানীয় মুদ্রায় গ্যাসের দাম হাজার পাঁচেক, পেট্রলের দাম ৪০০-৫০০ টাকা লিটার। অঙ্ক মেলালে ভারতের দামের সঙ্গে তেমন ফারাক নেই। কিন্তু তেল, জ্বালানির সংস্থানটাই ক্রমশ কঠিনতর হচ্ছে। কালোবাজারে গ্যাসের দাম ১০-১৫ হাজারও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কলম্বোয় বাড়িতে কয়লার উনুনে রান্নার গল্প শুনছেন মিনু। কলকাতায় মহাবোধি সোসাইটির মোহান্ত পি সিওয়ালি থেরো বলছেন, “হৃদয়হীন সব রাজনৈতিক নেতা! ছ’কিলোমিটার লম্বা কেরোসিনের লাইনে কতগুলো লোক মরে গেল কারও তাপ-উত্তাপ নেই।” রবীন্দ্রভারতীর গীতমাও বলে চলেছেন, “কোনও রাজনৈতিক পরিবারের বাইরের শিক্ষিত নেতা দরকার শ্রীলঙ্কায়। বাকিদের ভরসা নেই।” শ্রীলঙ্কা, ভারতের রাজনীতির ত্রিকালদর্শী ভিক্ষু রেবতের চোখে “হবু প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে, ডালাস আলাহাপেরুমা চলবে না। বামপন্থী অনুরা কুমারা দিসানায়াকে ভাষণ দারুণ দেন। তাতেই কি ভরসা হয়!’’

তবু ২১ বছরের গীতমার আফশোস, প্রেসিডেন্টকে সরানোর ঐতিহাসিক মুহূর্তে দেশে থাকলে দারুণ অনুভূতি হত। হোমিয়োপ্যাথির পড়ুয়াদের ফেসবুক পাতায় কয়েক মাস ধরেই #গোহোমগোতাবায়ো ডাক দিয়ে সদ্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। তবে বিকল্প নিয়ে ধন্দেও সবাই।

পর্যটন নির্ভর শ্রীলঙ্কা কোভিডের ঝাপটায় বিধ্বস্ত হয়েছে! কিন্তু ছাত্রছাত্রী থেকে প্রবীণ সন্ন্যাসী, সবার মুখেই এই দুরবস্থার পিছনে প্রেসিডেন্টের পরিবারতন্ত্র, দুর্নীতি কিংবা হঠকারিতা নিয়ে ক্ষোভ। রাতারাতি জৈব চাষ চালু করতে এক দিনের নোটিসে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষবাস বন্ধ করে দেন রাজাপক্ষে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা কেউ কেউ এর সঙ্গে ভারতে আচমকা ডাকা লকডাউন ও তার পরিণামের তুলনা করছেন। শ্রীলঙ্কার ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই দেশছাড়া প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতারির জন্য আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলের সক্রিয়তার দাবিতে সরব।

তবে ভারত শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়ে যে ভূমিকা নিয়েছে, তাতে খুশি এ দেশে বসবাসকারী শ্রীলঙ্কানরা। শুধু অনুদানে কি হাল ফিরবে? শ্রীলঙ্কার সমাজ-সাহিত্য নিয়ে বিশারদ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষিকা অনুপমা মহান তবু শ্রীলঙ্কাবাসীর গণজাগরণে আশার আলোও দেখছেন। তাঁর কথায়, “হিংসা, রক্তপাত ছাড়া স্থিতাবস্থা ফেরাতে শ্রীলঙ্কায় আন্তর্জাতিক সাহায্যও জরুরি। তবে সচেতন দ্বীপবাসীরা মনে হয় না সহজে কোনও রাজনৈতিক চাপের সামনে মাথা নোয়াবেন!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন