Anandapur

অভিযুক্ত হবু স্বামী, তাই আগাগোড়া পুলিশকে মিথ্যা বলেন আনন্দপুরের নির্যাতিতা

পুলিশ জানতে পেরেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে অভিষেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ওই তরুণীর। বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। লকডাউনের জন্য বিয়ে পিছিয়ে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৩৬
Share:

আনন্দপুর কাণ্ডে নির্যাতিতা ও অভিযুক্ত। —নিজস্ব চিত্র

হবু স্বামী, তাই পুলিশের হাত থেকে তাঁকে বাঁচাতে মরিয়া তরুণী ফোনে পুলিশের গতিবিধি আগাগোড়া জানাচ্ছিলেন আনন্দপুর কাণ্ডের অভিযুক্ত অভিষেককুমার পান্ডেকে। আর ‘নির্যাতিতা’-র কাছ থেকে আগাম খবর পেয়েই পূর্ব যাদবপুরের গেস্ট হাউস থেকে সোমবার বিকেলে চম্পট দেন অভিষেক। ঘটনার দিন থেকে আগাগোড়া পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন ওই তরুণী।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে অভিষেক গ্রেফতার হওয়ার পর গোটা ঘটনা অনেকটাই স্পষ্ট পুলিশের কাছে। নয়াবাদের বাসিন্দা ‘নির্যাতিতা’ তরুণী, অভিষেক এবং তাঁর মা ও জামাইবাবুর বয়ান থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে অভিষেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ওই তরুণীর। তাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনের জন্য বিয়ে পিছিয়ে যায়।

শনিবার রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে অভিষেককে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, অন্য উইকএন্ডের মতো ওই রাতেও হবু স্ত্রী (নির্যাতিতা)-কে নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। বাড়ি ফেরার পথে কোনও বিষয় নিয়ে দু’জনের ঝগড়া শুরু হয়। তা নিয়ে গাড়ির মধ্যেই শুরু হয়ে যায় ধস্তাধস্তি, মারামারি। তরুণী অভিষেকের হাতে কামড় দেন, পাল্টা অভিষেকও হবু স্ত্রীয়ের মুখে ঘুসি মারেন। ওই অবস্থায় দু’জনের ঝগড়া এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে তরুণী গাড়ি থেকে নেমে যেতে চান। অভিষেক এবং তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, গাড়ির গতি খুব কম ছিল এবং গাড়িতে বসে চিৎকার করছিলেন তরুণী। সেই চিৎকার কানে যায় দীপ শতপথী এবং তাঁর স্ত্রীয়ের। ইতিমধ্যে অভিষেক গাড়ি থামিয়ে দিলে নামতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়ে যান তরুণী। আর পড়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে আটকে ছিড়ে যায় তাঁর পোষাকের একটি অংশ। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে চলে এসেছেন নীলাঞ্জনা। অন্যদকে তরুণী তখনও রাগের মাথায় অভিষেককে গালিগালাজ করছেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালানোর চেষ্টা করেন অভিষেক। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিষেক জেরায় জানিয়েছেন, পালাতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা লাগে নীলাঞ্জনার সঙ্গে।

Advertisement

আরও পড়ুন: তিন দিন পরে পুলিশের জালে আনন্দপুরের অভিযুক্ত

ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে সোজা নিজের বাড়ি যান অভিষেক। গাড়ি রেখে যান নির্যাতিতার বাড়ি। সেখানে তরুণীর ঘরের চাবি এবং মোবাইল ফোন দিয়ে আসেন। তারপর এক বন্ধুর বাড়ি চলে যান।

কেন মিথ্যা বললেন তরুণী?

পুলিশ ওই তরুণীকে জেরা করে জানতে পেরেছে, অভিষেক পালিয়ে যাওয়ার পর বিপদে পড়েন তরুণী। কারণ নীলাঞ্জনা গুরুতর জখম। তরুণী তাই সাহস করে বলতে পারেননি যে অভিষেক তাঁর পরিচিত। প্রথমে তিনি অভিযোগ দায়ের করতেও চাইছিলেন না। পরে পরিস্থিতি দেখে তিনি সত্য গোপন করে পুলিশকে জানান যে অভিযুক্তের নাম অমিতাভ বসু এবং তাঁর সঙ্গে মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁর আলাপ হয়েছে।

কী ভাবে জানা গেল আসল পরিচয়?

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, তরুণীর দেওয়া ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করেই প্রথমে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল থানা। পরে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা বিভাগ। ঘটনার প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর রবিবার বিকেলে তাঁরা তরুণীর কল রেকর্ডস ঘাঁটতে গিয়েই আবিস্কার করেন অভিযুক্তের সঙ্গে নির্যাতিতার দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। এমনকি, ঘটনার পরও তরুণী ফোন করেছিলেন অভিযুক্তকে। তখন জেরার মুখে তরুণী স্বীকার করেন যে, অভিযুক্ত তাঁর হবু স্বামী এবং তাঁর নাম অভিষেক কুমার পান্ডে।

অভিষেকের হদিশ কী ভাবে?

পুলিশের দাবি, রবিবার অভিষেকের বাড়ির ঠিকানা পেয়ে পুলিশ গাড়ির হদিশ পায়। কিন্তু ততক্ষণে তরুণীর কাছ থেকে পুলিশের গতিবিধির খবর পেয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। মোবাইল ফোনও বন্ধ। বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা পূর্ব যাদবপুরে একটি গেস্ট হাউসের হদিশ পান। কিন্তু সেখানে সোমবার বিকেলে লকডাউনের দিন পুলিশ পৌঁছে দেখে অভিযুক্ত পুলিশ পৌঁছনোর এক ঘণ্টা আগেই চম্পট দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই গেস্ট হাউসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে আাসা একটি ট্যাক্সি চেপে অভিষেক পালিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ‘রামমন্দির ভাঙতে এসেছে বাবর’, মুম্বই পুরসভার বিরুদ্ধে আদালতে কঙ্গনা

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ ওই ট্যাক্সি চালকের হদিশও পায়। তাঁকে জেরা করে মধ্য কলকাতায় এক আইনজীবীর হদিশ মেলে। তাঁর কাছে সোমবার সন্ধ্যায় গিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু ওই আইনজীবী অভিষেকের মামলা নিতে না চাওয়ায় সেখান থেকে ফের পালান অভিযুক্ত। এর পর মোবাইলের সূত্র ধরেই অভিষেকের হদিশ মেলে দমদম এলাকায়।

কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ এ দিন স্বীকার করেন, তদন্তে ঢিলেমির কথা। তাঁরা ইঙ্গিত দেন, থানা যদি শুরু থেকেই আরেকটু গুরুত্ব দিত তা হলে তরুণী যে মিথ্যা কথা বলছেন তা অনেক আগেই স্পষ্ট হত। আনন্দপুর থানার পুলিশ প্রথামাফিক যা যা তদন্ত করা দরকার তাও শুরু করেছে অনেক দেরিতে। এখন পুলিশ কর্তা উদাহরণ দিয়ে বলেন, গাড়ি চিহ্নিত করতে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে, মেয়েটির মোবাইল কল রেকর্ডস কোনওটাই শুরুতে খতিয়ে দেখেননি থানার আধিকারিকরা। ফলে গোটা বিষয়টা যখন স্পষ্ট হয়েছে ততক্ষণে গোটা তদন্ত ভুল পথে চলে গিয়েছে এবং অভিযুক্ত বেপাত্তা।

বুধবার অভিষেককে আলিপুর আদালতে পেশ করা হবে। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এটা সত্যি যে কোভিড পরিস্থিতিতে থানার লোকবল খুব কম। তাও পুলিশ যদি শুরুতেই রুটিন তদন্ত করত তা হলে এই মামলা এত দূর পর্যন্ত গড়াত না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন