COVID-19

‘সুপার স্প্রেডার’ মণ্ডপগুলির সামনে গোটা শহর অসহায়

টানা সাত মাসের যুদ্ধে আমাদের চিকিৎসক-নার্সেরা আজ পরিশ্রান্ত। এঁদের অনেকেই অসুস্থ, স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেককে আমরা ইতিমধ্যেই হারিয়েছি।

Advertisement

কুণাল সরকার, কার্ডিয়োথোরাসিক শল্য চিকিৎসক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০২:২৫
Share:

প্রতীকী চিত্র।

এ বছরও এমন ভিড় হলেই বাড়বে উদ্বেগ। চিকিৎসকদের কাছে ২০২০-র পুজো যত না আনন্দের তার চেয়ে অনেক বেশি আতঙ্কের। মহা-পুজো আজ মহা-আশঙ্কায় পরিণত। মহা-আশঙ্কা কেন? কারণ আজ কোনও হাসপাতালেই তিলধারণের জায়গাটুকুও নেই। এ দিক-ও দিক থেকে কিছু শয্যা বাড়ানোর জন্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু শয্যা বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান আমরা করে উঠতে পারব না।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে ৩০০০টির মতো ক্রিটিক্যাল কেয়ার শয্যা রয়েছে। এখন যদি ৫০০ থেকে ৬০০টি শয্যা বাড়ানো সম্ভবও হয় আর এর পাশাপাশি অসুস্থ মানুষের সংখ্যা তার পাঁচ গুণ দাঁড়ায়, তা হলে এই শয্যাগুলি ভর্তি হতে এক ঘণ্টা সময়ও লাগবে না। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়ানোর একমাত্র উপায় হল নিজেদের সংযত করা।

একটি পুজো মণ্ডপের মধ্যে অনেক মানুষের ভিড়, হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা ভাল নয়, আবার অনেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলছেন— এই পরিবেশই হল করোনাভাইরাসের নন্দনকানন। বদ্ধ, ছোট জায়গায় আমাদের সকলের মুখ থেকে যে লালারস বা এরোসল বেরোবে, তা আটকানোর জন্য মাস্কও যথেষ্ট নয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: অষ্টমীর অঞ্জলির সময়ে মণ্ডপে সর্বাধিক ক’জন, ভাবছে পুলিশ

আরও পড়ুন: পুজো-জনতার ‘আচরণ’ই ঠিক করবে সংক্রমণের হার

এই পরিবেশ হল একটি ‘সুপার স্প্রেডার’ পরিস্থিতি। হাজার হাজার মণ্ডপের মধ্যে ‘সুপার স্প্রেডার’ মণ্ডপগুলির সামনে গোটা শহর অসহায় হয়ে উঠবে। ২০১৯-এর ডিসেম্বরে চিনের উহান শহরও সংক্রমণের ব্যাপারটা চাপা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। কারণ, তাদের নববর্ষের উৎসবের পরেই ২ কোটি মানুষের শহরে দ্রুত করোনা ছড়িয়ে পড়ল।

আরও পড়ুন: রাজ্যের নিষেধাজ্ঞায় পুজোর মুখে বিমানযাত্রায় বাড়ছে হয়রানি

এ থেকে বাঁচার উপায় একটাই। ভিড় করা যাবে না। মণ্ডপের ভিতরে হোক অথবা বাইরে, যদি কোথাও দেখেন যে আট-দশ জনের বেশি লোক ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের সতর্ক করুন। শুধু পুলিশের উপরে নির্ভর করবেন না, আমাদের জীবনের মূল্য কিন্তু নিজেদের হাতে। কারও যদি নিজেকে বিন্দুমাত্র অসুস্থ বলে মনে হয়, তা হলে বাড়ি থেকে বেরোবেন না। প্রবীণেরা এই বছরের পুজোটা বাড়িতে থেকেই উপভোগ করুন। পুজোর কর্মকর্তা, পুরোহিত ও তাঁদের সহকারীদের কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া আবশ্যক। কারণ, তাঁরা চার দিন মণ্ডপে থেকে বহু মানুষের সংস্পর্শে আসবেন।

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্তও পরিস্থিতি এতটা জটিল ছিল না। কিন্তু তার পর থেকে কোথাও যেন আমাদের ছন্দপতন হল। এই ছন্দপতনের মধ্যে আমরা আবার ঠিক মতো পরীক্ষাও করে উঠতে পারছি না। যত সংখ্যক পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে পজ়িটিভ আসার হার বাড়তে বাড়তে ৯ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। সারা ভারতে যখন সংক্রমণের আঁচ অনেকটা কমেছে, তখন পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল— এই দু’টি রাজ্যে সেই আঁচ বেশ জোরালো।

টানা সাত মাসের যুদ্ধে আমাদের চিকিৎসক-নার্সেরা আজ পরিশ্রান্ত। এঁদের অনেকেই অসুস্থ, স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেককে আমরা ইতিমধ্যেই হারিয়েছি। আরও কত জন স্বাস্থ্যকর্মীকে আমাদের অসচেতনতার মাসুল দিতে হবে? সাবধানতার সঙ্গে ভালয়-ভালয় যদি এই বছরের পুজোটা কাটিয়ে দিতে পারি, করোনার সঙ্গে যুদ্ধে আমরা যদি কিছুটা সফল হই এবং কিছু দিনের মধ্যে যদি ভ্যাকসিন আমাদের হাতে আসে তা হলে হয়তো ২০২১-এর পুজোটা খানিকটা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বারের পুজোর তিন মহামন্ত্র হল বুদ্ধি, সাবধানতা ও সংযম। শ্রীরামকৃষ্ণ একটি গল্প বলতেন। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে এক ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘হাতিও তো ভগবান’। শ্রীরামকৃষ্ণ উত্তরে বলেছিলেন, ‘‘হাতির পিঠে বসা মাহুতও তো ভগবান। যে মাহুত বার বার সতর্ক করে বলছিলেন যে হাতির সামনে থেকে সরে যাও।’’ তাই এ বছর আমাদের মনে রাখতে হবে পুজোয় কিছুটা আনন্দের সঙ্গে চাই অনেকটা সংযম। আমরা আনন্দপ্রিয় হতে পারি, কিন্তু তা বলে অবিবেচক কেন হব?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন