Swasthya Sathi Card

Swasthya Sathi Card: স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে বেসরকারি ক্ষেত্রে ভোগান্তির শেষ কবে?

মাস ছয়েক আগে কুলতলির ভুবনেশ্বরী বাজারের রাস্তায় পড়ে গিয়ে বাঁ হাত ভাঙে স্থানীয় অশোক হালদারের বছর এগারোর মেয়ের।

Advertisement

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২২ ০৬:৩৩
Share:

ফাইল চিত্র।

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে আসা রোগীকে কোনও বেসরকারি হাসপাতাল ফেরাতে পারবে না— এমন নির্দেশই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বাস্তবে সেই নির্দেশ অনবরত অমান্য হচ্ছে। যার মধ্যে হাতেগোনা কিছু অভিযোগই পৌঁছয় স্বাস্থ্য কমিশন পর্যন্ত। ভোগান্তির এই ছবিটা মানছেন চিকিৎসকেরাও। তাঁদের প্রশ্ন, সরকারি নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না, সেই নজরদারি কোথায়? ফলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা হেলায় উড়িয়ে দিচ্ছে ছোট-বড় বেসরকারি হাসপাতাল। স্বাস্থ্য কমিশনের বার্তাও না মেনে পার পেয়ে যাচ্ছে তাদের কেউ কেউ।

Advertisement

মাস ছয়েক আগে কুলতলির ভুবনেশ্বরী বাজারের রাস্তায় পড়ে গিয়ে বাঁ হাত ভাঙে স্থানীয় অশোক হালদারের বছর এগারোর মেয়ের। ৩০ কিলোমিটার দূরে জামতলায় একাধিক পরীক্ষা করানোর পরে দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে বলেন সেখানকার চিকিৎসক। খরচ ৫০ হাজার। দিনমজুর অশোকের দাবি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তাঁকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকায় অস্ত্রোপচার করানোর পরামর্শ দেন। সেই মতো জয়নগরের একটি নার্সিংহোমে মেয়েকে নিয়ে গেলেও অভিযোগ, ওটি থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থাতেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অশোকের অভিযোগ, ‘‘ওটি থেকে বার করেই চিকিৎসক বলেন, ওর অস্ত্রোপচারে একটা পার্টস লাগবে। সেটা আমাদের নেই, তাই অস্ত্রোপচার করিনি। এন আর এসে কথা বলে ব্যবস্থা করে রেখেছি। এখনই নিয়ে যান ভর্তি নিয়ে নেবে।’’

অশোক জানান, এর পরে ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ এন আর এসে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ব্যান্ডেজ খুলে দেখেন, রক্তে মাখামাখি রোগীর হাত। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে শিরা কেটে দিয়েছে। তখনও অচৈতন্য রোগীকে দ্রুত ভর্তি নিয়ে, এক সপ্তাহ পরে অস্ত্রোপচার করে এন আর এস। অশোকের অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে আগেই ৩৪,২০০ টাকা কেটে নিয়েছিল জয়নগরের নার্সিংহোমটি। অস্ত্রোপচার করেনি বলে তা ফেরত দিয়েছে বলেছিল। পরে দেখা যায়, টাকা ফেরত দেয়নি।’’ মেয়ে ঘরে ফিরলেও তার বাঁ হাত এখনও অকেজো। কোথায়, কী ভাবে অভিযোগ জানাতে হয়— সেটাও জানা নেই অশোকের। এ দিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ফোন কেটে দিয়েছেন ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালেও। সুন্দরবনের মৈপীঠ কোস্টালের বাসিন্দা, পেশায় জেলে শঙ্কর শী কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের কবলে পড়েন। বাঁ কাঁধের গুরুতর ক্ষতের ভাল চিকিৎসার আশায় বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে তাঁকে আনা হয়। শঙ্কর জানাচ্ছেন, কিছু পরীক্ষা এবং ইনজেকশন দিয়ে হাসপাতালটি রাত ১১টায় তাঁকে ছেড়ে দেয়। অভিযোগ, এত রাতে তিনি গ্রামে ফিরবেন কী ভাবে, সে কথায় কর্ণপাত করেনি হাসপাতাল। উল্টে পরদিন, রবিবার বাদ দিয়ে সোমবার আসতে বলা হয়। সঙ্গে আনতে বলা হয় তাঁর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডটি। শঙ্কর বলেন, ‘‘সোমবার কার্ড দেখেও জানানো হয় যে, নগদে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জমা করলে তবেই অস্ত্রোপচার হবে। পুরো খরচ কত হবে, তা চিকিৎসার পরে বলা যাবে।’’

পরিবার সূত্রের খবর, স্থানীয় এক চিকিৎসক এবং দক্ষিণ বারাসতের একটি নার্সিংহোমের চেষ্টায় পরের দেড় মাসে ধাতস্থ হন শঙ্কর। অভিযোগ নিয়ে স্বাস্থ্য কমিশনে গিয়েছিলেন তিনি। অনলাইন শুনানিতে অভিযুক্ত হাসপাতালকে এই ভুলের জন্য পরবর্তী চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে বলা হয় বলে জানাচ্ছেন শঙ্কর। কিন্তু অভিযোগ, ওই হাসপাতাল চিকিৎসা করা তো দূর, তাঁর খোঁজটুকুও নেয়নি। এ দিকে হাতের জন্য কাজেও ফেরা হয়নি শঙ্করের।

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে বেসরকারি এবং কর্পোরেট হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ মানছেন চিকিৎসকদের অনেকেই। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স, ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর সাধারণ সম্পাদক, শল্য চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সত্ত্বেও কিছু হাসপাতাল রোগী ফেরায়। জেলার কিছু নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে আরও মারাত্মক অভিযোগ। তারা চিকিৎসা না করেই স্বাস্থ্যসাথীর টাকা কেটে নেয়। সম্ভবত তেমনই দুর্নীতির শিকার অশোকবাবু। প্রশাসন কড়া নজরদারি না চালালে সমস্যা আরও বাড়বে।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালে পরিষেবার খামতি দেখার কাজ হেল্‌থ রেগুলেটরি কমিশনের। সেখানে অভিযোগ জমা পড়লে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে যে অনেক অভিযোগ আসছে, তা মেনে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “প্রকল্পকে আরও সফল ক‍রতে আচমকা পরিদর্শনের জন্য দল তৈরি হয়েছে। গত তিন-চার মাসে এই দলের পরিদর্শনে দেড় কোটি টাকার জরিমানা আদায় হয়েছে। কোথাও কোথাও এক মাস পরিষেবা বন্ধও করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সংশোধন করে নিলে ফের পরিষেবা শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য ভবন বা সংশ্লিষ্ট সিএমওএইচ কোনও গুরুতর অভিযোগ শুনলেই তৎপর হয়ে খোঁজ নেয়। এই প্রচেষ্টা চলবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন