রাগবিতে জীবনের দিশা, মাঠে দাপাচ্ছে মেয়েরা

জনা পঁয়ত্রিশের ওই দলটিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য শনিবার সেখানে হয়ে গেল একটি রাগবি ম্যাচ। এলাকার মেয়েদের সঙ্গে এ দিন খেলায় যোগ দেয় আয়ারল্যান্ড থেকে আসা পড়ুয়াদের একটি দলও।

Advertisement

সুনীতা কোলে

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৮
Share:

দৌড়: আয়ারল্যান্ড থেকে আসা পড়ুয়াদের সঙ্গে স্থানীয় কিশোরীদের রাগবি ম্যাচ। শনিবার, ধাপা এলাকার অনন্তবাদলে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বাসস্থানের চারপাশে আবর্জনা।

Advertisement

সকাল থেকে সেখানেই কাগজকুড়ানির কাজ করে দিনে কিছু টাকা আয়। অসচ্ছল পরিবারে ওই টাকাই অনেক। তার হাতছানিতেই ছোট ছোট মেয়েগুলো স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিত। তার পরে মাদকের নেশা, বাল্যবিবাহ বা পাচার-চক্রের খপ্পরে পড়ার মতো পরিচিত ঘটনার ছকে বয়ঃসন্ধিতেই ওদের যেন বয়স বেড়ে যেত অনেকখানি। সেই ছক ভাঙতেই ধাপা এলাকার অনন্তবাদলের ওই মেয়েদের নিয়ে রাগবির দল গড়া হয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে। সঙ্গে সাহায্য মিলেছিল আয়ারল্যান্ডের একটি সংস্থারও।

সেই প্রকল্প বর্তমানে চালু না থাকলেও রয়ে গিয়েছে রাগবির দলটি। জনা পঁয়ত্রিশের ওই দলটিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য শনিবার সেখানে হয়ে গেল একটি রাগবি ম্যাচ। এলাকার মেয়েদের সঙ্গে এ দিন খেলায় যোগ দেয় আয়ারল্যান্ড থেকে আসা পড়ুয়াদের একটি দলও। কলকাতার ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে শমিত বসুমল্লিক জানান, তাঁদের ‘শিখা’ প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছরই আয়ারল্যান্ড থেকে পড়াতে আসেন সদ্য স্নাতক হওয়া কিছু পড়ুয়া। এলাকার শিশুদের স্কুলমুখী করার জন্য প্রাথমিক পাঠ ও বিশেষ ‘রেমেডিয়াল’ ক্লাসে পড়ান তাঁরা।

Advertisement

এলাকার কিশোরীদের দিশা দেখানোর জন্যই ২০১২ সালে চালু হয়েছিল রাগবি খেলার প্রকল্পটি। প্রথাগত খেলাধুলোর বাইরে গিয়ে রাগবির মতো স্বল্প-পরিচিত খেলা বেছে নেওয়া হয় তাদের উৎসাহিত করার জন্য। রাগবির মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে ওই মেয়েরা। জীবনে আসে শৃঙ্খলা। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে জোগান দেওয়া হত পুষ্টিকর খাবার, খেলার পোশাক ও জুতো। তবে আয়ারল্যান্ডের সংস্থাটির সহায়তা না মেলায় ২০১৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পটি। এর পরে নিজেদের উদ্যোগেই দলটি বাঁচিয়ে রেখেছে এলাকার কিশোরীরা। প্রায় ৫০ জনের ওই দলে নিয়মিত খেলে জনা পঁয়ত্রিশ কিশোরী। দলে যোগ দিয়েছে অনেক নতুন সদস্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খেলতে যাওয়ার আমন্ত্রণ পায় তারা। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া স্কলারশিপ এবং কলকাতার সংস্থাটির সাহায্যে জোগাড় হয় খেলার খরচ।

ওই কিশোরীদের কোচ রবীন দাস জানান, এ দিনের ম্যাচটি মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। তাঁদের মেয়েরা কী ভাবে মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তা দেখে উৎসাহিত হবেন অভিভাবকেরাও। রবীন জানাচ্ছেন, রাগবি খেলা শুরু হওয়ার পর থেকে মানসিক ও শারীরিক জোর বেড়েছে এলাকার কিশোরীদের। কমেছে স্কুলছুট হওয়ার প্রবণতা। কেউ কোনও কারণে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করলে বা পরীক্ষায় খারাপ ফল করলে সাহস জোগায় অন্যেরা। নিজেদের মধ্যে একতা বাড়ার সুফল এ ভাবেই পাচ্ছে তারা। ওই কিশোরীদের কাছে রাগবি শুধুই একটি খেলা নয়, স্বপ্ন দেখার রাস্তাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন