উদ্ধার হওয়া গয়নাগাঁটি। নিজস্ব চিত্র
নবি মুম্বইয়ের বেলাপুরে একটি পুকুরের ধারে বসে বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরছিলেন এক ব্যক্তি। দূর থেকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাঁকে লক্ষ্য করছিলেন কয়েক জন যুবক। খানিক বাদে তাঁর পাশে এসে গল্প করতে শুরু করেন তাঁরা। কথার ফাঁকে ওই ব্যক্তির সম্পর্কে বিশদে জেনে নেন। এর পরে পুকুর থেকে ফিরে একটি গোপন জায়গায় লুকিয়ে পড়ে যুবকদের ওই দলটি। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ওই ব্যক্তি যখন মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন, তখন হঠাৎই তাঁকে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নেন ওই যুবকেরা। গাড়ি সোজা রওনা দেয় স্থানীয় থানার দিকে।
ওই ব্যক্তি তখনও কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। থানায় তাঁকে নিয়ে আসার পরে নিজেদের পরিচয় দেন ওই যুবকেরা। তখনই জানা যায়, আদতে ওঁরা লেক থানার পুলিশ। আর যে লোকটি পুকুরের পাশে বসে মাছ ধরছিল, সে গত জুলাই মাসে দক্ষিণ কলকাতার একটি বাড়িতে হিরে বসানো গয়না ও প্রাচীন হাতঘড়ি চুরির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। ধৃতের নাম ভগবত মুখিয়া। বাড়ি মধুবনী জেলার ভৈরবস্থানে। তাকে ধরতেই কলকাতা থেকে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৪ নভেম্বর ভগবতকে গ্রেফতার করা হয়। সন্দেহভাজন ভগবতের সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই প্রথমেই তাকে গ্রেফতার না করে তার সঙ্গে গল্প ফাঁদেন তদন্তকারীরা। পরে ধৃতকে ট্রানজিট রিমান্ডে বিহার নিয়ে এসে তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় তার দুই আত্মীয় বিনোদ মুখিয়া ও লালন মুখিয়াকে। ধরা হয় আর এক ব্যবসায়ী সত্যনারায়ণ মাহাতোকেও। সকলকে নিয়ে কলকাতায় আসেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে ওই চক্র। উদ্ধার হয়েছে চুরি যাওয়া অধিকাংশ জিনিস।
তদন্তকারীরা জানান, গত ২৯ জুলাই লেক থানার যতীন দাস রোডের বাসিন্দা অক্ষিত সিংহানিয়ার বাড়ি থেকে কয়েক লক্ষ টাকা, হিরে বসানো সোনার গয়না, প্রাচীন হাতঘড়ি চুরি যায়। দু’মাস যাবৎ ওই বাড়িতে পরিচারকের কাজ করত ভগবত। চুরির পর পরই সে-ও বেপাত্তা হয়ে যায়। তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পারে, ভগবতের বাড়ি বিহারের মধুবনীতে। বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে ঘুরে মূলত বাড়িতে চুরি করে তারা। সঙ্গে থাকে তার কয়েক জন আত্মীয়। তারাও মধুবনীর বাসিন্দা। এই খবর পাওয়ার পরেই লেক থানার ওসি প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্যের নির্দেশে তৈরি হয় বিশেষ দল। তাতে ছিলেন সাব-ইনস্পেক্টর অতনু মজুমদার, রাহুল অধিকারী, সুজিত ধর, হরিদাস রায় ও বিস্তিলাল সিংহ। ওই দলটি প্রথমে যায় বিহারে। সেখান থেকে পাওয়া মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তাঁরা মুম্বইয়ে ভগবতের খোঁজ পান।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, প্রথমে শহরের একটি বাড়িকে ‘টার্গেট’ করত ভগবত। সেখানে পরিচারক ও পাচকের কাজ শুরু করত। কথার ছলে বাড়ির মালিকের আস্থা অর্জন করায় সে ছিল রীতিমতো পটু। কোন দিন বাড়ি ফাঁকা থাকবে, তা আগেভাগেই জেনে সে খবর পাঠাত বিনোদ ও লালনকে। এর পরে সুযোগ বুঝে সকলকে বা়ড়িতে ঢুকিয়ে সে কাজ সারত। পুলিশ জানিয়েছে, মুম্বই, দিল্লি, চণ্ডীগড়-সহ একাধিক রাজ্যে এই চক্র ছড়িয়ে রয়েছে। চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও কয়েক জনের খোঁজ চলছে।