ফেরাল তিন হাসপাতাল, পায়ের ক্ষতে পচন প্রৌঢ়ের

দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা-পৃথীবা রোডের সুন্দেপুকুর এলাকায় বালি বোঝাই একটি ট্রাক পিছন থেকে তাঁর সাইকেলে ধাক্কা মারে।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৭
Share:

অসহায়: দেগঙ্গার বাড়িতে রফিকুল মণ্ডল। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

বালি বোঝাই ট্রাকের চাকায় পিষে গিয়েছিল এক ব্যক্তির পা। চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু অভিযোগ, এক রাতে কলকাতার তিনটি বড় হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা পাননি ওই প্রৌঢ়। এমনকি, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বরাদ্দের চেয়ে বেশি টাকা লাগবে বলে চিকিৎসার মাঝপথে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় স্থানীয় এক নার্সিংহোমও। অগত্যা গত ২২ দিন ধরে বাড়িতেই শয্যাশায়ী প্রৌঢ়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় পচন ধরেছে পায়ের ক্ষতে। অসহায় পরিবারের ক্ষোভ, কেন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা মিলবে না!

Advertisement

যদিও ঘটনাটি শুনে বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতাম না। ওই প্রৌঢ়ের পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তা না হলে আমরা নিজেরাই যোগাযোগ করে ওঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’’

পরিবার সূত্রের খবর, গত ১৫ই অগস্ট সন্ধ্যায় কাজ সেরে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন রফিকুল মণ্ডল। দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা-পৃথীবা রোডের সুন্দেপুকুর এলাকায় বালি বোঝাই একটি ট্রাক পিছন থেকে তাঁর সাইকেলে ধাক্কা মারে। পড়ে গিয়ে ট্রাকের পিছনের চাকায় ডান পা পিষে যায় রফিকুলের। দুর্ঘটনার পরে ট্রাকটি আটকে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ। পুলিশ এসে চালক-সহ গাড়িটি আটক করে। পরে দেখা যায়, রফিকুলের পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে। তাঁকে প্রথমে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান পরিজনেরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সেখান থেকে প্রৌঢ়কে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কর্তব্যরত ডাক্তার।

Advertisement

দুর্ভোগের শুরু তার পরেই। রফিকুলের মামা মোতালেব হোসেন বুধবার বলেন, ‘‘আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তারবাবুরা রোগীকে না দেখেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে গেলে আমাদের বলা হয়, এমন আঘাতের চিকিৎসা এখানে হয় না। রোগীকে এসএসকেএমে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পরে চিকিৎসক ও কর্মীরা দুর্ব্যবহার করে আমাদের কার্যত তাড়িয়ে দেন।’’

রফিকুলের ছেলে, পেশায় দিনমজুর সাইফুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘বাবা তখন পায়ের যন্ত্রণায় ছটফট করছে। সেই অবস্থায় এক রাতে তিন-তিনটি হাসপাতাল ঘুরলাম, সবাই ফিরিয়ে দিল। বাবা চিকিৎসাই পেল না।’’ বাধ্য হয়ে রফিকুলকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনে পরের দিন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে বারাসতের কদম্বগাছির একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যায় পরিবার। সাইফুদ্দিন বলেন, ‘‘ওই নার্সিংহোম ৬৭ হাজার টাকা বিল করেছিল। তার পরে বলে, আরও ২-৩ লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে। কারণ, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে এই পরিষেবা নেই। আমরা গরিব। অত টাকা কোথায় পাব? বাধ্য হয়ে বাবাকে বাড়ি নিয়ে আসি।’’

তার পরে কেটে গিয়েছে তিন সপ্তাহ। বুধবার রফিকুলের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, কখনও শুয়ে, কখনও কুঁজো হয়ে বসে ছটফট করছেন। ‘স্টিলের ক্লাম’ লাগানো পায়ে গজ-কাপড় জড়ানো। ভিতরের মাংসে পচন ধরে রস গড়াচ্ছে। দুর্গন্ধময় গোটা ঘর। পান বিক্রি করে সংসার চালাতেন রফিকুল। স্ত্রী মাসকুরা বিবি বলেন, ‘‘বহু দিন কাজে যেতে না পারায় উপার্জনও বন্ধ। অনেক ভরসা নিয়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ওরা দেখলই না। বিনা চিকিৎসায় মানুষটার পা নষ্ট হতে চলেছে, হয়ত বাঁচবেও না। কী করব, বুঝতেই পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন