অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস
চুরি করে যাতে ধরা না পড়ে, সে জন্য চুরির পরেই তারকেশ্বর পাড়ি দিয়েছিল তিন জন। সেখানে বেশ খরচ-খরচা করে পুজোও দেয় তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ওই তিন জন ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি, পুলিশ ওত পেতে বসে রয়েছে। বাড়ি ফিরতেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে তিন জন।
সার্ভে পার্ক থানা এলাকার সন্তোষপুর বটতলা এলাকায় সোনার গয়নার দোকান শিল্পশ্রী। ৩১ জুলাই রাত সওয়া দশটা নাগাদ দোকানের মালিক রাজেশ পাল দোকানের শাটার নামিয়ে দোকান বন্ধ করছিলেন। তাঁর পাশেই ছিল একটা বিগশপার ব্যাগ। সেই ব্যাগেই ছিল প্রায় ১৩৫ গ্রাম সোনা এবং নগদ প্রায় ১ লাখ টাকা। রাজেশবাবু পুলিশকে জানিয়েছিলেন, দোকান বন্ধ করার সময় হঠাৎ এক যুবক তাঁর পাশ থেকে ব্যাগটি তুলে নিয়ে দৌড় মারে। পেছন থেকে আসছিল একটি বাইক। যুবকটি তখন সেই বাইকে চড়ে অজয়নগরের দিকে চম্পট দেয়।
অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে সার্ভে পার্ক থানার পুলিশ। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “প্রথমেই আমরা প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি।” সেখানে দেখা যায়, প্রথমে দু’জন যুবক সেই দোকানের উল্টো দিকের ফুটপাথে এসে দাঁড়ায়। তার পর রাজেশবাবু, দোকানের শাটার নামাতেই এক যুবক রাস্তা পেরিয়ে তাঁর কাছে চলে আসে। তত ক্ষণে সুকান্ত সেতুর দিক থেকে এসে দাঁড়ায় একটি বাইক। ব্যাগ নিয়ে যুবকটি সেই বাইকে উঠে পড়ে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, যে বাইকে ওরা পালায়, তারর সামনের একটা অংশ ভাঙা।
আরও পড়ুন: অটোর ‘জুলুম’ নিয়ে বিক্ষোভ উল্টোডাঙায়
কী ভাবে আগুন লাগল প্রিয়াতে, জানা যাবে পরীক্ষার পরে
পুলিশের জালে ধৃত তিন চোর। —নিজস্ব চিত্র।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘তার পরেই আমরা জানতে পারি, রাজেশের মোবাইল ওই ব্যাগে ছিল। সেই মোবাইলের শেষ টাওয়ার লোকেশন সার্ভে পার্ক থানা এলাকার নিতাইনগরে। সেই সূত্র ধরে খোঁজ চালাতে গিয়ে প্রথম বাইকের মালিকের হদিশ পাওয়া যায়। কিন্তু সে সেই সময়ে বাড়ি ছিল না। জানা যায়, সে তারকেশ্বরে গিয়েছে পুজো দিতে।’’
সেখান থেকেই তার ওপর নজরদারি শুরু হয়। সোমবার রাতে ট্রেনে হাওড়া নেমে বাড়ি ফিরতেই পুলিশ তাকে পাকড়াও করে। তার সঙ্গেই ছিল বাকি দু’জন। তিন জনকে পাকড়াও করে জানা যায়, নগদ টাকা দিয়ে প্রথমেই তারা দুটো মোটরবাইক কেনে। তার পর তারা তারকেশ্বরে পাড়ি দেয়। রীতিমতো মানত করে আসে, যদি তারা ধরা না পড়ে তা হলে ফের পুজো দিতে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভগবান তাদের কথা রাখেননি। ধৃত বিষ্ণু সর্দার, সুমন দে এবং রঞ্জন দাস সার্ভে পার্ক এলাকারই বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে চোরাই সোনার পুরেটাই উদ্ধার হয়েছে। ওই এলাকাতে গত ন’মাসে একই রকম চুরির আরও তিনটি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ধারণা এই গ্যাংই সব ক’টি ঘটনার পেছনে রয়েছে।