আদালতের নির্দেশ বলছে জমির মালিক তিনি। দলিল, পরচা, মিউটেশনের কাগজ, পুরসভার নথিতেও দু’কাঠা দু’ছটাক ২৮ বর্গফুট জমির মালিক হলেন বারাসতের বাণীকণ্ঠ নগরের ‘এ’ ব্লকের বাসিন্দা জয়দেব বিশ্বাস। তাঁর অভিযোগ, জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী পারমিতা সেন জমিটি দখলের জন্য পাঁচ বছর ধরে জয়দেবকে বাড়ি তৈরিতে বাধা দিচ্ছেন।
জয়দেব জানান, ২০১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ দত্তের কাছ থেকে প্রায় আট লক্ষ টাকার বিনিময়ে জমিটি কেনেন। কিন্তু পাঁচিল দিতে গেলে শাসক দলের ওই ছাত্রনেত্রী বাধা দেন। জয়দেবের কথায়, ‘‘জমি কেনার নথি না দেখে হুমকি দেন।’’ সুবিচার চেয়ে বারাসত আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। জয়দেবের আইনজীবী কাজল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১৬ সালে আদালতের রায়ে স্পষ্ট যে আমার মক্কেল জমির মালিক।’’ অভিযোগ, এর পরে দু’বছর কেটে গেলেও জমিতে ঢুকতে তিনি বাধা পাচ্ছেন। জয়দেবের দাবি, পদের প্রভাব খাটিয়ে এ কাজে মদত রয়েছে পারমিতার। জয়দেবের বক্তব্য, পাঁচ বছরে বারাসত থানায় একাধিক জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছে। এফআইআর-ও হয়েছে। বারাসত মহিলা থানায় পারমিতার বিরুদ্ধে মারধর, হুমকির অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী সীমা বিশ্বাস। সুবিচার না পেয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের দ্বারস্থ হন।
২০১৬ সালের অক্টোবরে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বারাসত থানাকে নির্দেশ দেয় মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। জয়দেবের দাবি, তখন জমি মাপজোক করে এক পুলিশকর্তা জানান, এর ফাইল নবান্নে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এর পরে কী হল, তা তাঁকে জানানো হয়নি। পরিস্থিতিরও বদল ঘটেনি।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পারমিতা ফোন ধরেননি। মেসেজেরও জবাব দেননি। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, ওই জমিতে ১৯৯২ সাল থেকে একটি পুজো হচ্ছে। এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ওই জমিতে পুজো ও মন্দির চেয়েছিলেন। তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন। বারবার কেন তাঁকে এই ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে তা তিনি জােনন না। আদালতের রায় প্রসঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা বলেন, ‘‘আদালতে কী হয়েছে জানা নেই। জোর করে কারও সম্পত্তি আটকে রাখার মানসিকতা নেই। আদালতের নির্দেশ শিরোধার্য।’’
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীকে ফের চিঠি দিয়ে জয়দেব লেখেন, ‘‘ধারদেনা করে জমি কেনার পরই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী পারমিতা সেন জমি দখল করার জন্য গুন্ডামস্তান নিয়ে আমাকে ভয় দেখাতে থাকে... আমি ও আমার পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছি’’।
এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে পারমিতার বক্তব্য, ‘‘যাঁরা অভিযোগ করছেন তাঁরাই জমি দখলের মানসিকতা নিয়ে চলেন। নবান্নের নির্দেশে পুলিশ অভিযোগ খতিয়ে দেখেছে। দলীয় স্তরেও তদন্ত হয়েছে। সবাই বুঝে গিয়েছে ব্যাপারটা কী!’’
বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে যা করণীয়, করা হয়েছে। জয়দেববাবু যাতে জমি পান, তা পুলিশ প্রশাসনের দেখা উচিত।’’ বারাসতের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এ নিয়ে থানার সঙ্গে কথা বলব।’’