জোগানে জোয়ার, শহর মত্ত ইলিশে

দেখা হলে সবার মুখে এখন একটাই কথা, বাজারে ইলিশ এসেছে। অনেকেই প্রথমে অবাক হচ্ছেন শুনে। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখছেন, খবর মিথ্যা নয়। দেদার ইলিশ দেখে ক্রেতাদের চক্ষু চড়কগাছ।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৬:১৮
Share:

বাজারে ইলিশ। — নিজস্ব চিত্র

দেখা হলে সবার মুখে এখন একটাই কথা, বাজারে ইলিশ এসেছে। অনেকেই প্রথমে অবাক হচ্ছেন শুনে। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখছেন, খবর মিথ্যা নয়। দেদার ইলিশ দেখে ক্রেতাদের চক্ষু চড়কগাছ। শনিবার থেকেই কলকাতার বাজার ছেয়ে গিয়েছে ইলিশে। টালা থেকে টালিগঞ্জ— সর্বত্র। গত তিন-চার বছর ধরে কার্যত যার দেখাই মেলেনি, সেই ইলিশই একেবারে হাতের নাগালে। ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ এ দিন দেদার বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজির মধ্যে। টাটকা, কাঁচা এবং শরীর-স্বাস্থ্যেও ভাল, এমন ইলিশের দাম অবশ্য ৭০০-৮০০ টাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে। তবে জোগানে কোনও ঘাটতি ছিল না। ক্রেতারা বাজার ঘুরে পছন্দসই ইলিশ কিনে হাসি মুখে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। আজ, রবিবার কলকাতার বাজারগুলিতে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে বলে মাছ বিক্রেতারা আশ্বস্ত করেছেন।

Advertisement

মানিকতলা বাজারের সম্পাদক প্রভাত দাস জানিয়েছেন, বড় মাছের দাম একটু চড়া হলেও শনিবার থেকে মানিকতলা বাজারে প্রচুর মাছ এসেছে। ফলে ক্রেতারা পছন্দ করে কিনতে পারছেন। তিনি জানান, গত কয়েক বছর বর্ষায় ইলিশ কেনা তো দূর অস্ত্, বাজারে তার দেখাই পাওয়া যাচ্ছিল না। এ বছর উল্টো চিত্র। মাছের জোগান এখন থেকেই বাড়ছে।

নাগেরবাজার, সল্টলেক এবং মানিকতলা— এই তিন বাজারেই এ দিন ছিল ইলিশের ছড়াছড়ি। লেকমার্কেট বা গড়িয়াহাটের খবরও তা-ই। দমদমের বাসিন্দা বিজন বিশ্বাস নাগেরবাজার থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে ৩৫০ গ্রাম ওজনের দু’টো ইলিশ কিনে হাসতে হাসতে জানালেন, দামের জন্য গত বছর ইলিশ খেতে পারেননি। এ বছর প্রথম ইলিশ কিনলেন। তাঁর দাবি, ওজনে ছোট হলেও এই ইলিশের স্বাদ বেশ ভাল। অনেক সময়ে বড় ইলিশকেও হার মানায়।

Advertisement

গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি বন্ধ। রাজ্যের বাজারগুলিতে সারা বছর যেটুকু ইলিশ পাওয়া যায়, তার কিছুটা চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে আসে। বাকি সব ভিন্ রাজ্যের বা মায়ানমারের। তার দামও আকাশছোঁয়া। ৬০০ থেকে ১২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে সারা বছর বিক্রি হয়। অধিকাংশ ক্রেতাই সেই মাছে হাত দিতে পারেন না। ফলে বাঙালির পাতে ইলিশের গন্ধ অনেক দিন আগেই উবে গিয়েছে। যে সব উৎসব-পার্বণে ইলিশ বাঙালির হেঁশেলে অবধারিত ভাবে শোভা পেত, এখন সেখানে খয়রা ইলিশ কিনেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়। এ বছর বর্ষার মুখেই দিঘা, ডায়মন্ড হারবার থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার খবর আসছিল। ক্রেতারাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন। দমদম, নাগেরবাজার, গোরাবাজার, মানিকতলা, সল্টলেক, লেকমার্কেট, গড়িয়াহাট-সহ কলকাতার ছোট-বড় প্রায় প্রতিটি বাজারেই এ দিন অধিকাংশ মাছ বিক্রেতার ঝুড়িতে সবুজ কলাপাতার উপরে শোভা পেয়েছে নদীর রুপোলি শস্য। অনেক দিন বাদে হাতের কাছে টাটকা ইলিশ পেয়ে অনেকেই আর অন্য মাছ কেনার কথা বিশেষ ভাবেননি। যে যাঁর সাধ্য মতো ইলিশ কিনেছেন।

সল্টলেকের এফ ডি ব্লকের মাছ ব্যবসায়ী কৃষ্ণ মাজি বলেন, ‘‘আমাদের বাজারে শনিবার ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। অন্য সময়ে এই ওজনের মাছই কমপক্ষে ৭০০-৮০০ টকা কেজিতে বিক্রি হয়।’’ তিনি জানান, আজ, রবিবার আরও ইলিশ উঠবে বাজারে।

হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ জানাচ্ছেন, সেখানে ২০ টনের মতো ইলিশ রয়েছে। সবই দিঘা, রায়দিঘি, ডায়মন্ড হারবার, নামখানার মাছ বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার আমাদের হাওড়া পাইকারি বাজারে ৩০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২২০ থেকে ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশের দাম ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে।’’ অন্য সময়ে এই ওজনের মাছের দাম কমপক্ষে কেজি পিছু ১০০-১৫০ টাকা বেশি হয় বলে সৈয়দ আনোয়ার মকসুদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন