বছর পার, ক্ষতিপূরণের এক টাকাও পায়নি নির্যাতিতা শিশু

হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, মামলা চলার সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে নির্যাতিতাকে। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও মানিকতলায় যৌন নিগ্রহের শিকার বছর চারেকের শিশু বা তার পরিবার ওই বাবদ একটি টাকাও পায়নি।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪৮
Share:

মানিকতলার খালপাড়ের এই ঝুপড়ি থেকেই শিশুটিকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল অভিযুক্ত। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, মামলা চলার সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে নির্যাতিতাকে। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও মানিকতলায় যৌন নিগ্রহের শিকার বছর চারেকের শিশু বা তার পরিবার ওই বাবদ একটি টাকাও পায়নি। এমনকি, রাজ্য সরকারের চালু হওয়া নতুন ‘স্পনসরশিপ প্রোগাম’-এর মাসিক অনুদানও মেলেনি। ফলে খালপাড়ের নোংরা পরিবেশে খোলা ঝুপড়িতেই দিন কাটছে ওই শিশুটির। ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে তার মায়ের বক্তব্য, ‘‘আমাকে বলা হয়েছিল, টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু কিছুই তো মেলেনি। জানি না, কবে পাব।’’

Advertisement

গত বছরের মার্চের এক দিন মানিকতলা এলাকার খালপাড়ে একা খেলছিল ওই শিশুটি। অভিযোগ, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে শিশুটিকে ডেকে নিয়ে যায় এক যুবক। তার পরে একটি বাসের ভিতরে নিয়ে তার উপরে যৌন নিগ্রহ চালায়। শিশুটির বছর সাতেকের দাদা দূর থেকে অচেনা লোকের সঙ্গে বোনকে যেতে দেখে মা ও পড়শিদের খবর দিয়েছিল। তাঁরা যখন মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে বাসের কাছে পৌঁছন, তত ক্ষণে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বাসের মধ্যেই পড়ে ছিল শিশুটি। মা ও পড়শিরা গিয়ে তাকে বাস থেকে উদ্ধার করেন। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় শিশুটিকে।

পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটির গোপনাঙ্গে সেলাই করতে হয়েছিল চিকিৎসককে। তিন দিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তাকে তৎকালীন কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতির দায়িত্বে থাকা মুর্শিদাবাদ শিশু কল্যাণ সমিতির সামনে হাজির করে পুলিশ। কিন্তু সমিতি শিশুটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আর তার পর থেকে খোলা আকাশের নীচে খালপাড়ের ঝুপড়িতেই মা, দাদা, দিদি আর দিদিমার সঙ্গে নিরাপত্তাহীন অবস্থাতেই থাকছে ওই শিশুটি। পুলিশ সূত্রের খবর, শিশুটির বাবা নেই। কয়েক বছর আগে তিনি খুন হয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে যৌন নিগ্রহের শিকার ওই শিশুটিকে খালপাড়ের ঝুপড়িতে রাখা কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

কলকাতা জেলা শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র জানিয়েছে, ওই শিশুটির মা কিছুতেই মেয়েকে হোমে পাঠাতে রাজি হননি। তাই তাকে মায়ের হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে। শিশুটির মাসি জানিয়েছেন, তিনিও চেয়েছিলেন, নির্যাতিতা শিশু ও তার বছর পাঁচেকের দিদি হোমে থাকুক। তা হলে অন্তত নিরাপদে থাকবে। কিন্তু তাদের মা রাজি হননি। ক্ষতিপূরণের টাকাটা পেলে ওই শিশুর পরিবার নিরাপদ কোনও জায়গায় গিয়ে থাকতে পারত।

এ বিষয়ে কলকাতা জেলা শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র সূত্রের খবর, নির্যাতিতা শিশুটি স্পনসরশিপ প্রোগাম বাবদ খুব শীঘ্রই মাসে দু’হাজার টাকা করে পাবে। তবে কেন শিশুটির পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি, তা শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র জানে না। পুরোটাই পুলিশ জানে। পুলিশের দাবি, শিশুটির মা কিংবা দিদিমা কারোরই ঘটনার সময়ে ভোটার কার্ড বা আধার কার্ডের মতো কোনও পরিচয়পত্র ছিল না। ছিল না কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও। ফলে সে সব তৈরি করতে হয়েছে নতুন করে। আর তাতেই দেরি হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের স্পনসরশিপ প্রোগামের টাকাও তো দেওয়া যেত? এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পের টাকা পেতে গেলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দরকার। সরাসরি অ্যাকাউন্টে মাসে দু’হাজার করে টাকা তিন বছর ধরে ঢুকবে। ওই শিশুর মায়ের কোনও কিছুই ছিল না বলে দেরি হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন