ফাইল চিত্র।
শিয়ালদহ শাখায় ট্রেন চলাচল যে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে, তা মেনে নিলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার হরীন্দ্র রাও। তাঁর দাবি, শিয়ালদহে যাত্রীর চাপ যে ভাবে বাড়ছে, তা সামাল দিতে রেললাইনের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবেই অতিরিক্ত ট্রেন চালাতে হচ্ছে। তার জেরেই বাড়ছে ভোগান্তি।
বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে রেলের উন্নয়ন বিষয়ক একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে এসেছিলেন হরীন্দ্র। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘শিয়ালদহে ট্রেন নিয়ে অনেক অভিযোগ। কিন্তু এই সব ঘটনার পিছনে রয়েছে যাত্রীদের চাপ ও লাইনের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ট্রেন চালানো।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘শিয়ালদহে এখন রেললাইনের যা ক্ষমতা, তার ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত ট্রেন চালাতে হচ্ছে। আর সেই কারণে রক্ষণাবেক্ষণেরও সময় মিলছে না।’’
জিএম-এর দাবি, গত কয়েক বছরে শিয়ালদহ শাখায় পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে। এখন সেই কাজ শুরু হয়েছে। শীঘ্রই এর সুফল পাবেন যাত্রীরা। এখন রেললাইন সংস্কার থেকে বৈদ্যুতিকরণ— সব কাজই চলছে দ্রুত গতিতে। সিগন্যালিং, ইঞ্জিন এবং কামরার মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রেরও পরিবর্তন করা হচ্ছে। সময় লাগলেও এর সুফল মিলবে।
এ দিন জিএম যখন ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছিলেন, কার্যত সেই সময়েই শিয়ালদহের ডানকুনি শাখায় একটি মালগাড়ি লাইনচ্যুত হওয়ায় ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিয়ালদহ-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ আরও কয়েকটি ট্রেনকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় মেন লাইন দিয়ে। এমনিতেই মেন লাইনে বেশ কয়েক মাস ধরে গোলমাল লেগে রয়েছে। এই সপ্তাহে দু’দিন ট্রেনের গোলমালে যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বুধবার বিকেলেও দীর্ঘক্ষণ ট্রেন চলাচল অনিয়মিত ছিল। তার উপরে এ দিনও বিকেলে ডানকুনি লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেন লাইনের উপরেই ট্রেনের চাপ পড়েছে।
বুধবারের ঘটনায় তিতিবিরক্ত যাত্রীরা এবং রেলকর্তাদের একাংশ অভিযোগ করেছিলেন, শিয়ালদহে কর্মসংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কেউ কিছু না দেখায় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। আর তাতেই বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। এ দিন সরাসরি না বললেও ঘুরিয়ে এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন জিএম। তিনি বলেন, ‘‘কোনও ঘটনা ঘটলেই সবাই রেলের ত্রুটি দেখতে শুরু করেন। কিন্তু রেলকর্মীরা কাজ না করলে বাকি ট্রেনগুলি চলছে কী করে?’’
রেলকর্মীরা যে কাজ করেই চলেছেন, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে রেলের কর্তারা জানিয়েছেন, সারা দেশে ১০ হাজার ৪০০-রও বেশি ট্রেন সারা ক্ষণ (২৪ ঘণ্টা) এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে যাওয়া-আসা করছে। তাতে ২৪ ঘণ্টা যাত্রী থাকছেন প্রায় আড়াই কোটি। ফলে রেলকর্মীরা যে কাজ করছেন, এটাই তার প্রমাণ।