বৃষ্টি আটকানো সম্ভব নয়। কিন্তু নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার করে রেললাইনে জল জমা ঠেকানো সম্ভব। আর লাইনে জল জমা আটকানো গেলেই ঠিক মতো কাজ করবে সিগন্যাল। সময় মতো চলবে ট্রেন। এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু নিকাশি ব্যবস্থার দিকে নজর না দেওয়ার ফল কী হতে পারে, সোমবার সন্ধ্যায় কয়েক লক্ষ নিত্যযাত্রীর দুর্ভোগ সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। বৃষ্টিতে জলে ডুবে অকেজো হয়ে গেল শিয়ালদহ মেন লাইনের সিগন্যাল ব্যবস্থা। দফারফা হয়ে গেল ট্রেন চলাচলের। যে দূরত্ব যেতে ২৫ মিনিট লাগার কথা, সেই পথ পেরোতে গড়ে সময় লেগেছে সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি। যাত্রীদের অভিযোগ, রেলের তরফে কোনও ঘোষণাও করা হয়নি।
শিয়ালদহ ডিভিশনে অনিয়মিত ভাবে ট্রেন চলাই এখন নিয়ম। কিন্তু সোমবার অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে কৃষ্ণনগর, রানাঘাট বা গেদে লোকালের যাত্রীরা গভীর রাতের আগে বাড়ি পৌঁছাতে পারেননি। তার পরে মঙ্গলবার আর অফিস-কাছারি বা স্কুল-কলেজে আসতে পারেননি তাঁরা। অহেতুক তাঁদের ছুটিও গিয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যার পরেই বৃষ্টি নামে কলকাতায়। ঘণ্টা দেড়েকের বৃষ্টিতে ডুবে যায় সিগন্যাল। রেল সূত্রের খবর, বেলঘরিয়া থেকে কাঁকিনাড়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সিগন্যাল এবং পয়েন্ট জলে ডুবে বিকল হয়ে ওই বিপত্তি হয়। তবে অন্যগুলি ঠিক করা গেলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁকিনাড়ার সিগন্যাল ঠিক করতে পারা যায়নি।
সাত-আট মাস আগেই বেলঘরিয়া থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত ‘নন ইন্টারলক’ সিগন্যাল বসানো হয়েছে। এই প্রযুক্তিতে পরপর অনেক বেশি ট্রেন চালানো সম্ভব। কিন্তু শিয়ালদহে ট্রেনের নিত্য দেরিতে প্রশ্ন উঠেছে নতুন ব্যবস্থায় কী লাভ হল? যাত্রীদের প্রশ্ন, প্রচুর টাকা খরচ করে সিগন্যাল বদলানোর পরে এক-দু’ঘণ্টার বৃষ্টিতেই তা অকেজো হবে কেন?
রেলের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, জল জমায় সিগন্যাল কাজ করেনি। কিন্তু নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করা হল না কেন? রেলের নিয়মে জল জমা ঠেকাতে ডিভিশনগুলিরই প্রাক্ বর্ষার মেরামতি করার কথা। তা কতটা হয়েছে, সোমবারের দুর্ভোগে মালুম পেয়েছেন যাত্রীরা। যদিও কাজের এই হাল কেন, তার সদুত্তর মেলেনি।
যাত্রীরা বলছেন, কতটা বৃষ্টি হয়েছে সেটাও নাকি বোঝা যায় দমদম স্টেশনে আন্ডারপাসের অবস্থা দেখে। সোমবার আন্ডারপাসে ততটা জল জমেনি। তার পরেও লাইনে কী ভাবে অত জল জমল, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না তাঁদের। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, ট্রেন ঠিক মতো চলছে না ঘোষণা করা হলেও অনেকে সড়কপথে বাড়ি পৌঁছনোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু শিয়ালদহের রেল কর্তারা সিগন্যাল খারাপের কথা জেনেও ট্রেনগুলিকে ছেড়েছেন। তার জেরে মাঝপথে চার-পাঁচ ঘণ্টা করে ট্রেনে আটকে অহেতুক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাঁদের।