Kolkata

TUMOR: তিন মাসের শিশুর দেহে দেড় কেজির টিউমার

ছোট্ট ছেলেটার পেটটা ক্রমশ ফুলে উঠছিল। কিছু খেলেই সে বমি করে ফেলত। জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে শেষে সন্তানকে নিয়ে শহরে চলে আসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি রাজু বাউড়ি।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২১ ০৭:০৪
Share:

সুস্থ: অস্ত্রোপচারের পরে মায়ের সঙ্গে শুভেন্দু। পিজিতে। নিজস্ব চিত্র।

বয়স মাত্র তিন মাস। ওজন চার কেজি। তার মধ্যে পেটের ভিতরের টিউমারের ওজনই এক কেজি আড়াইশো গ্রাম!

Advertisement

প্রথম সন্তানের এমন অবস্থা দেখে চিন্তায় দিন কাটছিল বাঁকুড়ার বাউড়ি দম্পতির। ছোট্ট ছেলেটার পেটটাও ক্রমশ ফুলে উঠছিল। কিছু খেলেই সে বমি করে ফেলত। জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে শেষে সন্তানকে নিয়ে শহরে চলে আসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি রাজু বাউড়ি ও তাঁর স্ত্রী প্রিয়া বাউড়ি। সম্প্রতি প্রায় চার ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পরে ওই টিউমার বার করে শিশুটিকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিল এসএসকেএম হাসপাতাল।

বাঁকুড়ার ওন্দা থানার ওলা গ্রামের বাসিন্দা ওই একরত্তির নাম শুভেন্দু। তার মা প্রিয়া জানাচ্ছেন, জন্মের পর থেকেই শুভেন্দুর পেট সামান্য ফোলা ছিল। ক্রমশ ফুলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পেট শক্ত হয়ে যাচ্ছিল। ছেলের বয়স যত বাড়ছিল, ততই আকার বাড়ছিল পেটের। কিন্তু প্রথম দু’মাস তেমন আমল দেননি বাড়ির লোকজন। তিন মাস বয়সে পেটের আকার বিশাল হতেই আর দেরি করেননি প্রিয়ারা। ছেলের পেটের ভিতরে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে অনুমান করেই তাঁরা চলে আসেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

Advertisement

সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা করে তিন মাসের শুভেন্দুকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। সেখানেই সিটি স্ক্যান করে প্রথম দেখা যায়, তার পেটে বড় আকারের টিউমার রয়েছে। প্রিয়া বলেন, ‘‘ওইটুকু ছেলের পেটের ভিতরে এত বড় টিউমার রয়েছে শুনে খুব ভয় হয়েছিল। চিকিৎসকেরাও জানিয়ে দেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অস্ত্রোপচার করতে হবে।’’ জুলাইয়ের শেষে বাঁকুড়া থেকে এসএসকেএমে আসেন তাঁরা। সিটি স্ক্যান রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকেরা শুভেন্দুকে ভর্তি করে নেন। এসএসকেএমের শিশু শল্য বিভাগের চিকিৎসক ঋষভদেব পাত্র, আলোককুমার সিনহাবাবু, অরিন্দম ঘোষ, দেবজ্যোতি শাসমল এবং অ্যানাস্থেটিস্ট চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য ও তাঁর দল মিলে অস্ত্রোপচারটি করেন।

আলোকবাবু জানান, লম্বায় প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার এবং চওড়ায় ১২ সেন্টিমিটার টিউমারটির নীচে চাপা পড়েছিল পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র-বৃহদন্ত্র, পিত্তনালি এবং গুরুত্বপূর্ণ শিরা-ধমনী। আর সেই কারণেই কিছু খাবার খেলে পেটে চাপ পড়ছিল শিশুটির। বমিও হচ্ছিল তার। তিনি বলেন, ‘‘এত ছোট শিশুর অস্ত্রোপচারে বেশ ঝুঁকি ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, সেপসিস হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সব থেকে বড় চিন্তা ছিল টিউমারটি কেটে বার করার সময়ে যাতে কোনও ভাবেই যকৃৎ-সহ অন্য কিছু ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’’ এই ঘটনাটি বিরল বলেই জানাচ্ছেন শিক্ষক-চিকিৎসক ঋষভদেববাবুও। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বে এখনও পর্যন্ত শিশুদের জায়ান্ট রেট্রো পেরিটোনিয়াল সিস্টিক টিউমার হওয়ার সংখ্যা ২০-২১টি। তবে সকলেরই গড় বয়স ৬ বছর। সেখানে তিন মাসের শিশুর এমন হওয়াটা খুবই বিরল।’’

ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের শিশু শল্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তপনজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এত কম বয়সে জায়ান্ট রেট্রো পেরিটোনিয়াল টিউমার হওয়াটা বিরল। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে। বাচ্চাদের খারাপ রেট্রো পেরিটোনিয়াল টিউমারও কিন্তু সংখ্যায় কম নয়।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এখন সুস্থ রয়েছে শুভেন্দু। তবে তার ওজন কমে হয়েছে দু’কেজি সাতশো গ্রামের মতো। চিকিৎসকেরাও জানিয়েছেন, খাওয়াদাওয়ায় তার কোনও সমস্যা হবে না। বিপদও কেটে গিয়েছে। তাই প্রিয়া বলছেন, ‘‘ছেলেটা কত কষ্ট পেয়েছে। এ বার বাড়ি গিয়ে ওর ওজনটা বাড়াতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন