তল্লাশি: সেই পার্টিতে আবগারি অফিসারেরা। শনিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র
‘লোকাল’-এ আসতে চান? তা হলে গুনে দিতে হবে ৮০০ টাকা। ফেসবুকে আলাদা গ্রুপ তৈরি এমন ভাবেই সারা রাতের পার্টির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এখানে লোকাল হল পার্টির জায়গার নাম। পার্টির ক্যাচলাইন ছিল ‘বিওয়াইওবি’ বা ‘ব্রিং ইয়োর ওন বুজ়’। রেজিস্ট্রেশন ফর্ম ভরার সময়ে নাম-ঠিকানা ছাড়াও আগ্রহীদের জানাতে হয়েছিল তাঁরা কী ধরনের গান শুনতে ভালবাসেন, কোন গাড়িতে করে পার্টিতে যাবেন এমন নানা প্রশ্নের উত্তর। এই সব প্রশ্নের মাধ্যমে আমন্ত্রিতদের সামাজিক অবস্থান জেনে নিয়েছিলেন পার্টির আয়োজকেরা। যাঁরা পার্টিতে আসতে চাইছেন, তাঁদের সঙ্গে পুলিশ বা সরকারি অফিসারদের কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না, তাও জেনে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, শেষমেশ গোপন থাকেনি সে খবর।
শনিবার রাত বারোটা নাগাদ সেই পার্টিতে বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ এবং রাজ্য আবগারি দফতরের কলকাতা দক্ষিণ শাখার অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে হানা দেন আবগারি দফতরের যুগ্ম কমিশনার নীলাঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা যায়, পার্ক সার্কাসের যে বাড়িতে পার্টি চলছে সেখানে রয়েছে একটি পরিচিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাড়িটির ছাদের এক দিক ঘিরে বানানো হয়েছে ঝাঁ-চকচকে লাউঞ্জ। দেশি-বিদেশি দামি স্কচ, ভদকার ছড়াছড়ি। সবে শুরু হয়েছে গান। উচ্চবিত্ত যুবক-যুবতীদের ভিড় সেখানে।
শনিবার পার্টি থেকে দুই যুবককে গ্রেফতারও করে আবগারি দফতর। ধৃতদের নাম বরুণ দেশাই এবং বিনয় দাসওয়ানি। বিনয় পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং বিনয় সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। রবিবার তাঁদের আদালতে তোলা হলে দু’জনেই জামিন পেয়ে যান। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রধানত দু’টি অভিযোগে মামলা রুজু করেছে আবগারি দফতর।
এক, আবগারি দফতরের অনুমতি না নিয়েই এমন এক পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে মদ সরবরাহ করা হয়েছে। দুই, বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি শপ থেকে কেনা মদ, যা বাইরে বিক্রি করার কথা নয়, তা সেখানে বিক্রি করা হয়েছে। যাঁরা ওই পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই নিজেরা মদ নিয়ে আসার কথা অস্বীকার করে আবগারি অফিসারদের জানিয়েছেন, পার্টিতে মদ কিনেই খেতে হচ্ছিল। সেই কারণেই রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে ৮০০ টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
আবগারি দফতর সূত্রে খবর, শনিবার রাতে পার্ক সার্কাসে আয়োজিত ওই পার্টিতে কোনও মাদক পাওয়া যায়নি। যদিও অফিসারদের সন্দেহ, এটি ছিল ‘রেভ’ পার্টি অর্থাৎ যেখানে মাদক সেবন করা হয়। আবগারি অফিসারদের দাবি, পার্টির শুরুতেই রাত বারোটা নাগাদ তাঁরা হানা দেন। পার্টি চলার কথা ছিল ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। অভিযানের খবর পেয়ে অনেকেই আর পার্টিতে আসেননি। রাত বাড়লে তাঁদের মধ্যে কারও মাদক নিয়ে আসার কথা ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে অফিসারদের সন্দেহ।
যে বাড়ির ছাদে ওই পার্টি চলছিল, তার মালিককে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে আবগারি দফতর সূত্রে খবর।